তানজিম আহমেদ খান
বন্যার জলের মতো ছবি-সহ মেসেজ ঢুকছে মোবাইলে, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। ‘ভাইয়া ইয়ে ভি করদো। জলদি হ্যায়।’ কাতর অনুরোধে সঙ্গে রয়েছে বেশ কিছু লোকের পাসপোর্টের ছবি। উদ্দেশ্য ভুয়ো ভিসা তৈরি।
বিদেশে চাকরি প্রতারণার শিকড় খুঁজতে মুম্বই গিয়ে ভুয়ো ভিসা তৈরিতে অভিযুক্ত একজনকে গ্রেফতারের পরে তার মোবাইল দেখে এমনটাই অভিজ্ঞতা হয়েছে ওয়াটগঞ্জ থানার বিশেষ তদন্তকারী দলের সদস্যদের। পুলিশ জানায়, ধৃতের নাম তানজিম আহমেদ খান। বাড়ি মুম্বইয়ের ভিন্ডি বাজার এলাকায়। মঙ্গলবার ওই এলাকার পাঠনওয়াড়ির বাড়ি থেকে ধরা হয় তাকে। বাজেয়াপ্ত করা হয় তার ফোন ও ল্যাপটপ। বুধবার ট্রানজিট রিম্যান্ডে তাকে কলকাতায় আনা হয়। বৃহস্পতিবার ব্যাঙ্কশাল আদালতে তাকে সাত তারিখ পর্যন্ত পুলিশি হেফাজত দেন বিচারক।
পুলিশের দাবি, ভুয়ো ভিসা তৈরিতে ওস্তাদ তানজিম। তার কাছে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের প্রায় হাজার খানেক ভুয়ো ভিসা মিলেছে। যার মধ্যে এ রাজ্য ছাড়াও কেরল, উত্তর প্রদেশের মতো রাজ্যের বাসিন্দাদের ভুয়ো ভিসাও রয়েছে। এমনকী চাহিদা এতটাই যে গ্রেফতার হওয়ার পরেও বিভিন্ন রাজ্যের এজেন্টরা তানজিমের মোবাইলে পাসপোর্টের ছবি পাঠিয়ে ভুয়ো ভিসা তৈরির জন্য তাগাদা দিচ্ছিল বলে পুলিশ সূত্রে খবর।
লালবাজারের খবর, ঘটনার সূত্রপাত গত অগষ্টে। আরবে চাকরি দেওয়ার নামে লক্ষ লক্ষ টাকা প্রতারণা ও ভিসা জালিয়াতির অভিযোগে গত ৩১ অগষ্ট খিদিরপুর থেকে মহম্মদ ইমরান নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়। তার কাছ থেকে ৫০০টির বেশি পাসপোর্ট ও ১০ লক্ষ টাকা মেলে। সেই তদন্তের জন্য নজিরবিহীন ভাবে ডেপুটি কমিশনার (বন্দর) সুদীপ সরকারের নির্দেশে থানার অফিসারদের নিয়ে গঠন করা হয় বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট)। পুলিশ সূত্রে খবর, তদন্তে নেমে তাঁরা জানতে পারেন, ইমরান ছাড়াও ওই প্রতারণা চক্রে আরও অনেক রাঘব বোয়াল রয়েছে। জানা যায়, এ রাজ্যের আনাচে-কানাচে তো বটেই, এই প্রতারণাচক্রের জাল ছড়িয়েছে ঝাড়খণ্ড, বিহার বা উত্তর-পূর্বে এবং মুম্বইয়েও। সেই সূত্রেই, থানার ওসি পুলক দত্তের নির্দেশে গত কয়েকদিন ধরেই সাব ইনস্পেক্টর পাঞ্চজন্য সরকার ও বিমল বিশ্বাস তদন্তের স্বার্থে মুম্বই যান।
পুলিশ জানায়, বেকার যুবকেরা প্রথমে চাকরির আবেদনের সময়ে ৫০০ টাকা দিত ইমরানকে। এর পরে আরবের বিভিন্ন সংস্থার নামে ওই যুবকদের ভুয়ো ইন্টারভিউ নিত সে। পরবর্তী পর্যায়ে চাকরি হয়ে গেছে এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভিসা তৈরি ও বিমানের টিকিটের ভাড়ার জন্য ওই যুবকদের কাছে থেকে ৩০ হাজার করে টাকা নেওয়া হত। এর পরেই ওই যুবকদের পাসপোর্ট স্ক্যান করে ইমরান তা পাঠিয়ে দিত মুম্বইয়ে তানজিমের কাছে। তদন্তকারী দলের এক সদস্যের কথায়, ‘‘পাসপোর্ট মেলার পরে তা থেকে ছবি ও নামের তালিকা তৈরি করত তানজিম। নিজের ল্যাপটপের ফোটোশপে আগে থেকেই বিভিন্ন দেশের ভিসা ফর্ম্যাট ডাউনলোড করা থাকত। তা দিয়েই কলকাতা থেকে পাঠানো নাম ও ছবি বসিয়ে ভুয়ো ভিসা তৈরি করত তানজিম। পরে তা ই-মেলের মাধ্যমে পাঠিয়ে দিত কলকাতায় ইমরানের কাছে।’’
গোয়েন্দারা জানান, জেরায় তানজিম জানিয়েছে, শুধু কলকাতা নয়, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকেই এজেন্টরা তার কাছে ভুয়ো ভিসা বানাতে দিত। পাঁচ হাজার টাকার বিনিময়ে সে প্রতিটি ভিসা তৈরি করত বলে জানিয়েছে পুলিশ। কলকাতা পুলিশের এক কর্তা জানান, ‘‘জাল ভিসা চক্রটি সম্পর্কে বিশদ জানতে উত্তর প্রদেশ, কেরল-সহ বেশ কয়েকটি রাজ্যের পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy