Advertisement
০৯ মে ২০২৪
বাগুইআটি হত্যাকাণ্ড

অভিযুক্ত দলীয় নেতার পাশেই সৌগত

বাগুইহাটির জগৎপুরে তৃণমূল কর্মী সঞ্জয় রায়ের খুনের ঘটনায় গ্রেফতার হয়েছে এক তৃণমূল কর্মী, অভিযুক্তের তালিকায় রয়েছে প্রাক্তন এক তৃণমূল কাউন্সিলরের নাম। শুক্রবার কার্যত সেই নেতার পাশে দাঁড়ালেন সাংসদ সৌগত রায়। তাতে খুনের নেপথ্যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের যুক্তি যেমন জোর পেল, তেমনই বাড়ল বিতর্কও।

তছনছ ঘর। খুনের ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া তৃণমূল কর্মী দীপঙ্কর সরকারের বাড়ি। শৌভিক দে-র তোলা ছবি।

তছনছ ঘর। খুনের ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া তৃণমূল কর্মী দীপঙ্কর সরকারের বাড়ি। শৌভিক দে-র তোলা ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৩:০৫
Share: Save:

বাগুইহাটির জগৎপুরে তৃণমূল কর্মী সঞ্জয় রায়ের খুনের ঘটনায় গ্রেফতার হয়েছে এক তৃণমূল কর্মী, অভিযুক্তের তালিকায় রয়েছে প্রাক্তন এক তৃণমূল কাউন্সিলরের নাম। শুক্রবার কার্যত সেই নেতার পাশে দাঁড়ালেন সাংসদ সৌগত রায়। তাতে খুনের নেপথ্যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের যুক্তি যেমন জোর পেল, তেমনই বাড়ল বিতর্কও।

খুনের ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতে তৃণমূল কর্মী দীপঙ্কর সরকারকে গ্রেফতার করে পুলিশ। অভিযুক্ত হিসেবে এফআইআরে নাম রয়েছে প্রাক্তন কাউন্সিলর শ্যামল চক্রবর্তীর। এ দিন সৌগতবাবু বলেন, ‘‘শ্যামল কোনও দিন গুণ্ডামি, মারপিট করেছে বলে আমার জানা নেই। শ্যামল আমাদের বহু পুরনো কর্মী। ওঁর সম্পর্কে কোনও খারাপ রিপোর্ট নেই।’’

এর আগেও বিভিন্ন বিষয়ে সৌগতবাবুর মন্তব্যকে ঘিরে বিতর্ক দেখা দিয়েছে। তার প্রেক্ষিতে সম্প্রতি তাঁকে দলের তরফে সতর্কও করা হয়। তবে এ দিন সাংসদের প্রতিক্রিয়া নিয়ে সরাসরি জবাব না দিলেও কার্যত তাঁর বক্তব্য খারিজ করেছেন তৃণমূলের একাংশের নেতারা।

কৃষিমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু-সাংসদ দোলা সেন ঘনিষ্ঠ নিহত সঞ্জয়ের তরফে পুলিশে যে অভিযোগ করা হয়েছে, তাতে যাঁদের নাম দেওয়া হয়েছে, ঘটনাচক্রে তাঁদের একাংশ তৃণমূলেরই নেতা, কর্মী। এবং তাঁরা পূর্ণেন্দু-দোলার বিরুদ্ধ শিবিরের লোক বলেই তৃণমূল সূত্রের দাবি।

পুরনো রাজারহাট-গোপালপুর পুরসভার ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শ্যামলবাবু সৌগত রায়-কাকলি ঘোষ দস্তিদার-জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের অনুগামী বলে পরিচিত। শ্যামলবাবুর দাবি, সদ্য তৃণমূলে যোগ দেওয়া তাপস চট্টোপাধ্যায়েরও সঙ্গেও তাঁর সম্পর্ক ভাল।

বিধাননগর পুরনিগম তৈরির সময়ে ওই ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের সীমানা পুনর্বিন্যাস করা হয়েছিল। পুরনিগমের নির্বাচনের সময়ে শাসক দলের প্রার্থী হিসেবে দাবিদার ছিলেন শ্যামল। কিন্তু তিনি টিকিট পাননি। বদলে ওই এলাকায় পূর্ণেন্দু ঘনিষ্ঠ বীরেন বিশ্বাস নির্বাচিত হন। যাঁর ছেলে বিশ্বজিৎ(বাবাই) বিশ্বাস। যার সূত্র ধরেই নিহত সঞ্জয়ের বাড়বাড়ন্ত বলে অভিযোগ। এই বাবাই বিশ্বাসদের সঙ্গে জমি বিবাদকে কেন্দ্র করে শ্যামলবাবুর দূরত্ব বহু পুরনো। পুরনিগমের নির্বাচনে টিকিট না পাওয়ায় সেই দূরত্ব আরও বেড়ে যায় বলেই দাবি দলীয় কর্মীদের একাংশের।

কৃষিমন্ত্রীর যদিও দাবি, শ্যামল কংগ্রেসের লোক। সোমেন মিত্রের সঙ্গেই তিনি কংগ্রেসে ফিরে গিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘ওই কারণে বিধাননগর পুরনিগমের নির্বাচনে শ্যামলকে টিকিট দেওয়া হয়নি। এখন পিঠ বাঁচানোর জন্য তৃণমূল সাজার চেষ্টা করছে।’’

পাল্টা শ্যামলবাবুর অভিযোগ, ‘‘আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা চলছে। পূর্ণেন্দুবাবু কিংবা বীরেনবাবুদের সঙ্গে আমার বনিবনা নেই। আমি কোনও দিনই সিন্ডিকেট কিংবা দুষ্কৃতীদের মাথায় তোলার রাজনীতিতে নেই।’’

তবে খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের দাবি ‘‘এটা গভীর ষড়যন্ত্র। সিপিএম-কংগ্রেস, বিজেপির যোগসূত্র রয়েছে। এ ক্ষেত্রে কোনও দলীয় কোন্দলের ঘটনা ঘটেনি।’’ পাল্টা জবাবে প্রদেশ কংগ্রসের রাজ্য সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেন, ‘‘তৃণমূলের মদতেই সিণ্ডিকেট রাজ চালু হয়েছে। এটা তারই ফলাফল।’’ প্রায় একই সুরে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, ‘‘এ রাজ্যে এখন কেউ সুরক্ষিত নন।’’

এ দিন বিধানসভায় বাগুইআটির ঘটনার প্রসঙ্গ তোলেন কংগ্রেসের মহম্মদ সোহরাব, অপূর্ব সরকার, ফব-র আলি ইমরান রাম্জ, এসইউসি-র তরুণ নস্কর প্রমুখ। বৃহস্পতিবার বিধানসভার বক্তৃতায় রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির প্রশংসা করেছিলেন রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী। সেই দিনেই যে বাগুইআটিতে এমন প্রকাশ্যে খুনের ঘটনা ঘটেছে, রাজ্যপালের বক্তৃতার উপরে বিতর্কে সেই বিষয়টির উল্লেখ করেন তাঁরা।

বাগুইআটির ঘটনা নিয়ে বিধানসভায় মুখ খোলেননি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে রাজ্যে যে শান্তির পরিবেশ বজায় রয়েছে, তা বোঝাতে টেনেছেন পাহাড়-জঙ্গলমহলের কথা। পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য বাগুইআটির জগৎপুরের নাম করেই বলেন, ‘‘এখন এক জন অন্য এক জনকে মারলেই এত হইচই হচ্ছে। আগে তো ১২-১৩ জনকে একসঙ্গে খুন করা হতো। এ রকম অনেক নজির আছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE