নাম জানাজানি হলে মার্ডার হয়ে যাব...।
কফিশপে বসে ফ্যাকাসে মুখে ফিসফিসে গলায় কথাটা যিনি বললেন, তিনি পেশায় হোটেল ব্যবসায়ী। পাশের টেবিলের লোকেদের দিকে সন্দিগ্ধ চোখে বারবার তাকিয়ে কোনওমতে বললেন, ‘‘স্যার, ত্রাস করে রেখে দিয়েছে! বেশি ট্যাঁ-ফুঁ করলে গলা নামিয়ে দেবে।’’
কার ত্রাস? ব্যবসায়ীর দাবি অনুযায়ী, তিনি এক দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেত্রী। কথায় কথায় ‘অমুক দিনের মধ্যে এত লক্ষ টাকা পৌঁছে দেবে’ গোছের নির্দেশ জারি করে থাকেন। রক্তদান থেকে অনুগতদের ‘মোচ্ছব’, পুজোপার্বণ থেকে সমাজসেবা— উপলক্ষের অভাব নেই।
শুধু ওই হোটেল ব্যবসায়ী নন, এলাকার অন্য ব্যবসায়ীদের বড় অংশেরই বক্তব্য, হোটেল-পানশালা থেকে রোলের দোকান— নেত্রীর থাবা থেকে বাদ পড়ে না কিছুই। দাবি মেটানো না হলে? প্রথমে এক প্রস্ত হুমকি। গ্রেফতার করিয়ে দেওয়ার শাসানি। পরে ছোটখাটো ‘তৈরি’ করা দুর্ঘটনা। তাতেও কাজ না হলে অন্তিম পরিণতি ভাল নয়।
ছোটবড় ব্যবসায়ী-প্রোমোটার শুধু নয়, অটো-রিক্সা ইত্যাদিও নাকি নেত্রীর নজর থেকে বাদ যায় না। পানশালায় সিক্ত স্বল্পবসনাদের নাচের জন্য মোটা টাকার আমদানিরও অভিযোগ রয়েছে।
মুম্বইয়ের অন্ধকার জগত নয়। কলকাতার উপান্তে রাজারহাট-গোপালপুর এলাকায় এমন ত্রাসের রাজত্ব চালানোর অভিযোগ শাসক দলের এক নেত্রীকে ঘিরে। বছর দেড়েক আগে ওই এলাকায় সঞ্জয় রায় ওরফে বুড়ো নামে এক যুবক খুন হন। পরে বাবাই বিশ্বাস নামে এক যুবককে গ্রেফতার করে পুলিশ। তখনও অভিযোগ উঠেছিল, প্রোমোটারি ব্যবসার বখরা নিয়ে রাজনৈতিক টানাপড়েনেই প্রাণ হারাতে হয় সঞ্জয়কে। সেই কথা উল্লেখ করে শঙ্কিত ব্যবসায়ীদের বক্তব্য, ‘‘আমরা তো চুনোপুঁটি। কথা না শুনলে, খুন করে ফেলে দেবে।’’ ত্রাসের জেরে কিছু ব্যবসায়ী, প্রোমোটার ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কেউ কেউ অন্যত্র চলে যেতেও চাইছেন।
আরও পড়ুন:জানুয়ারিতে ১৫% ডিএ, ’১৯-এ পুরো
নেত্রীর বিরুদ্ধে এই সব অভিযোগ দলেও একেবারে অজানা নয়। রাজ্য মন্ত্রিসভার সাম্প্রতিক রদবদলের পিছনে এই ধরনের অভিযোগের একটা ভূমিকা রয়েছে বলেও প্রশাসন সূত্রের খবর। তৃণমূলের স্থানীয় এক নেতার কথায়, ‘‘ওই নেত্রীর বিরুদ্ধে আগলহীন ঔদ্ধত্যের অভিযোগ রয়েছে। দু’হাতে টাকাও তুলছেন।’’ এতটাই যে, এলাকাবাসীরা আড়ালে তাঁকে ‘তোলাদেবী’ বলে ডাকতে শুরু করেছেন। দমদমের তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় স্বীকার করলেন, ‘‘কিছু ভাসা ভাসা অভিযোগ আমার কানেও এসেছে। নির্দিষ্ট অভিযোগ এলে প্রশাসনকে জানাব।’’
দমদমের বিধায়ক তথা মন্ত্রী ব্রাত্য বসু অবশ্য দাবি করলেন, ‘‘আমাদের দলে এই ধরনের কাজকর্ম বরদাস্ত করা হয় না। আমার বিধানসভা এলাকায় এ ধরনের অভিযোগ নেই।’’ রাজারহাট-গোপালপুরের বিধায়ক তথা মন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করতে না চাইলেও এলাকার বাসিন্দা, সাংসদ দোলা সেনের বক্তব্য, ‘‘দলের কারও বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ থাকলে তা পুলিশকে জানানো দরকার। পুলিশ অবশ্যই ব্যবস্থা নেবে।’’
সিপিএম নেতা নেপালদেব ভট্টাচার্যের মন্তব্য, ‘‘এ রকম অভিযোগ শুনেছি। তবে ওই নেত্রী একা তো নন, গোটা দলটাই তোলাবাজির উপরে চলছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy