শোকার্ত: ইশরাতের দিদি (বাঁ দিকে) ও পরিজনেরা। মঙ্গলবার, রাজাবাগােন। নিজস্ব চিত্র
গলার নলি এবং ডান হাতের শিরা কাটা। ঘরের দরজা বাইরে থেকে তালা বন্ধ। রক্তাক্ত অবস্থায় তরুণীর দেহ পড়ে রয়েছে বিছানার উপরে। মঙ্গলবার বিকেলে রাজাবাগানের এ কে রোডের ভাড়াবাড়িতে মেয়ে ইশরাত জাহানকে (৩৬) এমন অবস্থায় দেখলেন মা নুসরত বেগম।
ঘটনার পর থেকে অবশ্য ইশরাতের সঙ্গী মহম্মদ নাসিরুদ্দিন (৪৬) ওরফে নসরু পলাতক। পুলিশ জানিয়েছে, পেশায় অটোচালক নাসিরুদ্দিন তিন মাস আগে ইশরাতকে বিয়ে করেছিলেন বলে মৃতার পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে। তবে ইশরাত এবং নাসিরুদ্দিন দু’জনেরই এটি দ্বিতীয় বিয়ে বলে মৃতার মা নুসরত বেগম পুলিশকে জানিয়েছেন।
পুলিশ সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, নাসিরুদ্দিনের বাড়ি নাদিয়াল থানা এলাকায়। সেখানে তাঁর প্রথম পক্ষের স্ত্রী ও ছেলে-মেয়ে রয়েছে। কিন্তু তিন মাস আগে তিনি ইশরাতকে দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী পরিচয় দিয়ে রাজাবাগানের এই দোতলা বাড়ির একটি ঘরে এনে তোলেন। তবে পড়শিদের দাবি, তাঁরা দু’জনেই ওই বাড়ির অন্য কোনও বাসিন্দার সঙ্গে খুব একটা কথা বলতেন না। দু’জনেই সকালে বেরিয়ে গিয়ে রাতে ফিরতেন।
ইশরাতের মা মঙ্গলবার রাতে মেয়ের দেহ নিয়ে যাওয়ার পরে জানান, ইশরাতের প্রথম পক্ষের স্বামী মারা গিয়েছেন। তাই তিনি দ্বিতীয় বার বিয়ে করতে চাওয়ায় মা বাধা দেননি। তবে ইশরাতের প্রথম পক্ষের
ছেলে-মেয়েকে তিনি নিজের কাছেই রেখে দিয়েছিলেন। ইশরাত রাজাবাগানের ভাড়াবাড়িতে থাকলেও প্রতি দিন সকালে মায়ের কাছে চলে যেতেন। রাতে ফের নাসিরুদ্দিন তাঁকে নিয়ে আসতেন।
কিন্তু মঙ্গলবার সকাল পেরিয়ে দুপুর হয়ে গেলেও মেয়ে না আসায় নুসরত বেগমের সন্দেহ হয়। তিনি সোজা চলে আসেন মেয়ের বাড়ি। এসে দেখেন দরজায় বাইরে থেকে তালা দেওয়া। তিনি নেমে এসে একতলার কাঠের আসবাবাপত্র তৈরির দোকানে থাকা সৈয়দ হুসেন নামে এক ব্যক্তিকে ডেকে নিয়ে যান তালা ভাঙার জন্য। দরজার তালা ভাঙার পরেই ঘরে ঢুকে মেয়ের নলি ও হাতের শিরা কাটা দেহটি দেখেন মা। খবর দেওয়া হয় থানায়। ঘটনাস্থলে পৌঁছন ডিসি বন্দর সৈয়দ ওয়াকার রাজা-সহ লালবাজারের হোমিসাইড শাখার গোয়েন্দারা।
নুসরত বেগমের কথায়, ‘‘বিয়ে করলেও নাসিরুদ্দিন কোনও টাকা পয়সা দিত না। ইশরাত নার্সের কাজ জানত। কাজ করতেও চাইত। কিন্তু নাসিরুদ্দিন ওকে বাধা দিত, এ নিয়ে প্রায়শ ঝামেলাও করত। ইশরাতকে মোবাইল পর্যন্ত ব্যবহার করতে দিত না।’’ মৃতার মায়ের দাবি, ‘‘নাসিরুদ্দিন প্রতিদিনই ইশরাতকে মারধর করত। কিন্তু মেয়ে তবুও স্বামীকে বাঁচানোর চেষ্টা করত।’’
নাসিরুদ্দিন যে ইশরাতকে মারধর করতেন সে কথা স্বীকার করে নিয়েছেন তাঁদের প্রতিবেশীরাও। তাঁদের দাবি, প্রায়ই ঘর থেকে ইশরাতের চিৎকার আর কান্নার আওয়াজ শোনা যেত। বোঝা যেত তাঁকে মারধর করা হচ্ছে। কিন্তু নাসিরুদ্দিনকে এ নিয়ে কিছু জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলতেন ‘‘মিঞা-বিবির মামলা। তোমরা নাক গলাবে না!’’
মঙ্গলবার অবশ্য নাসিরুদ্দিন কখন রাজাবাগানের ভাড়াবাড়ি থেকে বেরিয়ে যান তা কেউ-ই বলতে পারেননি। ডিসি বন্দর সৈয়দ ওয়াকার রাজা বলেন, ‘‘প্রাথমিক ভাবে গলার নলি ও হাতের শিরা কাটাতেই
ইশরাত জাহানের মৃত্যু হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। তবে মৃতদেহের ময়না-তদন্তের রিপোর্ট এলে বলা যাবে কী ভাবে খুন করা হয়েছে। নাসিরুদ্দিনের খোঁজ চলছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy