প্রায় সাড়ে চার দশক এই ক্যান্টিনে। এ বার কি হঠাৎ শেষ হয়ে যাবে সেই সম্পর্ক। মন খারাপ প্রেসিডেন্সির প্রিয় প্রমোদদা’র। মন খারাপ পড়ুয়াদেরও। —ফাইল চিত্র।
তাঁকে ফিটন গাড়িতে চাপিয়ে ঘোরানো হয়েছিল জানুয়ারি মাসে। আর জুলাইতে তাঁকে উচ্ছেদ করে দেওয়ার তোড়জোড় শুরু হয়ে গেল। প্রতিবাদে সরব প্রায় গোটা প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়। প্রেসিডেন্সি আর প্রমোদদা’র ক্যান্টিন— একটাকে ছাড়া আর একটাকে ভাবতেই পারেন না পড়ুয়ারা। সেই প্রমোদদা’র ক্যান্টিন তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। টেন্ডার নোটিস পড়ে গিয়েছে। বহু দশকের পুরনো ক্যান্টিনটা তুলে দিয়ে ঝাঁ-চকচকে ফুড কোর্ট তৈরির জন্য দরপত্র চাওয়া হয়েছে। দরপত্র জমা দিয়ে বরাত আদায় করে নেওয়ার লড়াইয়ে কিছুতেই পেরে উঠবেন না প্রেসিডেন্সির প্রিয় প্রমোদদা। তাই পড়ুয়ারাই মাঠে নামলেন ক্যান্টিন রক্ষার লড়াইয়ে।
১৩ বছর বয়স থেকে প্রেসিডেন্সি চত্বরে আনাগোনা প্রমোদের। বয়স যখন ১৮, তখন ক্যান্টিনের মালিক হন। আজ বয়স ৬০। নয় নয় করে ৪২টা বছর কাটিয়ে দিয়েছেন প্রেসিডেন্সির পড়ুয়াদের টেবিলে পরোটা-নুডলস-কফি-ফিশ ফ্রাই এগিয়ে দিতে দিতে। স্বীকৃতিও পেয়েছিলেন। জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্সির দ্বিশতবার্ষিকী উদযাপন হল। স্বামী বিবেকানন্দের ভিটে থেকে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত পদযাত্রায় অংশ নিলেন বর্তমান ও প্রাক্তন পড়ুয়ারা। নানা ক্ষেত্রের রথী-মহারথীদের সেই ভিড়ে প্রমোদও ছিলেন। তবে বাকিরা হেঁটে, প্রমোদ ফিটনে। প্রেসিডেন্সি বলেছিল, প্রমোদ জীবন্ত ইতিহাস, তাই এ ভাবে সম্মান জানানো হচ্ছে।
কী বলছে প্রেসিডেন্সি? কী বলছেন প্রমোদদা? দেখে নিন:
ছ’মাসের মধ্যে ছবিটা বদলে গিয়েছে আমূল। কয়েক দিনের জন্য নিজের পৈতৃক ভিটে ওড়িশায় ফিরেছিলেন প্রমোদ বাবু। ফিরে এসে প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনে ঢুকতে বাধা পেয়েছেন। তার পর জানতে পেরেছেন, প্রেসিডেন্সির সঙ্গে তাঁর সাড়ে চার দশকের সম্পর্ক শেষ হতে চলেছে। পড়ুায়াদের ক্ষোভ-বিক্ষোভের মুখে পড়ে ফের প্রমোদকে ক্যান্টিন চালানোর অনুমতি দিয়েছে প্রেসিডেন্সি। কিন্তু এ ভাবে আর বেশি দিন চলবে না। কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তই যদি বহাল থাকে, তা হলে আর মাত্র কয়েকটা দিন পরেই ক্যান্টিন ভেঙে ফুড কোর্ট গড়ার বরাত দিয়ে দেওয়া হবে কোনও একটি সংস্থাকে।
আরও পড়ুন: মন ছুঁয়ে গিয়েছে মোদীর শেষ চিঠি, ১০ দিন পেরিয়ে আপ্লুত টুইট প্রণবের
এই ক্যান্টিন ভেঙে কি এ বার ফুড কোর্ট? পড়ুয়ারা চান না। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তেমনই চায়। —ফাইল চিত্র।
আজ, শুক্রবার থেকে শুরু হয়ে গেল বিক্ষোভ কর্মসূচি। বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের পোর্টিকোয় এ দিন বিকেলে পড়ুয়ারা জড়ো হয়েছিলেন। এসেছিলেন বহু প্রাক্তনীও। ১৯৮৭ ব্যাচের অমিত চৌধুরী বললেন, ‘‘প্রমোদদার ক্যান্টিন ছাড়া এই প্রতিষ্ঠানকে ভাবাই যায় না। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই প্রতিষ্ঠানের ইতিহাস, ঐতিহ্য সম্পর্কে এত অসংবেদনশীল কী ভাবে হতে পারে, আমরা বুঝতে পারছি না! তাই প্রাক্তনীরাও বিপুল সংখ্যায় এই প্রতিবাদে সামিল হয়েছেন।’’ শুধু কলকাতা থেকে নন, দিল্লি থেকে, মুম্বই থেকে, এমনকী বিদেশ থেকেও জড়ো হয়েছেন বহু প্রাক্তনী।
আরও পড়ুন: স্মারক বিক্রি করে বাঁচতে চান নইমুদ্দিন
প্রেসিডেন্সির প্রবচন বলে, চারটে ‘প’ নিয়ে এই প্রতিষ্ঠান— পড়াশোনা, পলিটিক্স, প্রেম আর প্রমোদ। সাড়ে চার দশকের ইতিহাস মুছে একটা ‘প’ ঝেড়ে ফেলতে চাইছে প্রেসিডেন্সি কর্তৃপক্ষ। পড়ুয়ারা যে ভাবে মাঠে নেমেছেন, প্রাক্তনীরা যে ভাবে এগিয়ে এসেছেন, তাতে আশা জাগছে ঠিকই। তবে অনিশ্চয়তা এখন তার চেয়েও ঢের বেশি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy