Advertisement
১১ মে ২০২৪

লক-আপ খোলা পেয়ে পালাল বন্দি

থানার লক-আপে তালা দেওয়া ছিল না। সেই সুযোগটাই কাজে লাগিয়ে থানা থেকে পালিয়ে গেল ডাকাতির ঘটনায় অভিযুক্ত এক আসািম।

রহিম আলি

রহিম আলি

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০১৬ ০১:৪১
Share: Save:

থানার লক-আপে তালা দেওয়া ছিল না। সেই সুযোগটাই কাজে লাগিয়ে থানা থেকে পালিয়ে গেল ডাকাতির ঘটনায় অভিযুক্ত এক আসািম।

শুক্রবার দুপুরে ঘটনাটি ঘটেছে হাওড়ার চ্যাটার্জিহাট থানায়। তার পরেও রাত পর্যন্ত ওই থানার সংশ্লিষ্ট কারও বিরুদ্ধে ন্যূনতম কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। হাওড়ার পুলিশ কমিশনার দেবেন্দ্রপ্রকাশ সিংহের বক্তব্য, বিষয়টি নিয়ে তদন্ত হবে। রিপোর্ট পেলে তবে নেওয়া হবে ব্যবস্থা। প্রশ্ন উঠেছে, থানার লক-আপ খোলা পেয়ে যদি আসামি খোশমেজাজে বেরিয়ে যেতে পারে, তা হলে তদন্তের অপেক্ষা কীসের জন্য। লক-আপের দায়িত্বে যিনি বা যাঁরা, তাঁদের অবিলম্বে সেই দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে না কেন? বিভিন্ন পদাধিকারে যাঁরা লক-আপের দায়িত্বে রয়েছেন, তাঁদের নিজ নিজ পদে বহাল রেখে কি তদন্ত আদৌ সম্ভব? সেই প্রশ্নও উঠেছে।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৫ সালের অগস্ট মাসে চ্যাটার্জিহাট থানা এলাকার কোনা এক্সপ্রেসওয়ে লাগোয়া জানাগেটের সামনে একটি বাড়িতে দুঃসাহসিক ডাকাতির ঘটনা ঘটে। পাঁচ-ছ’জনের ডাকাত দল রাতে জানলা ভেঙে বাড়িতে ঢুকে পরিবারের সকলকে আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে লক্ষাধিক টাকার সোনার গয়না ও নগদ টাকা লুঠ করে পালায়। ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ সম্প্রতি রহিম আলি ও মহম্মদ জাফর নামে দুই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে। আদালতের নির্দেশে দুই আসামির পুলিশ হেফাজত হয়।

পুলিশ সূত্রে খবর, গত দু’দিন ধরে ওই দুই আসামি ছাড়া থানার লক-আপে আর কোনও কেউ ছিল না। নিয়মমতো থানার লক-আপ পাহারায় ছিলেন এক জন সান্ত্রি। ছিলেন ডিউটি অফিসার ও দু’জন কনস্টেবল পদমর্যাদার পুলিশকর্মী। পুলিশের একটি সূত্রের খবর, দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ এ দিন কর্তব্যরত পুলিশ অফিসার ও কর্মীরা দেখেন, দুই আসামি থানা থেকে বেরিয়ে পালাচ্ছে। আর লক-আপের দরজা হাট করে খোলা। তাতে তালাও নেই। এই দৃশ্য দেখে থানার কর্তব্যরত পুলিশকর্মীরা তাড়া করে মহম্মদ জাফরকে ধরে ফেলেন। কিন্তু পালিয়ে যায় রহিম আলি।

থানার লক-আপ থেকে এ ভাবে আসামী পালানোর ঘটনায় পুলিশ মহলে আলোড়ন পড়ে যায়। অনেকে প্রশ্ন তোলেন, থানার লকআপের দায়িত্ব থাকে এক জন সান্ত্রির। তিনিই তালা খোলেন। চাবি তাঁর কাছে থাকে। তা হলে কী করে তালা খোলা ছিল ওই লকআপের? আসামী পালানোর পিছনে কোনও নির্দিষ্ট ছক ছিল কি? পুলিশের একাংশের প্রশ্ন, যদি তা-ই হয় তা হলে আজই সঙ্গে সঙ্গে ওই সান্ত্রিকে ‘ক্লোজ’ করা হল না কেন, প্রশ্ন উঠছে তা নিয়েও। পুলিশের একাংশের দাবি, এ দিন দুপুরে ওই ঘটনার সময়ে থানায় পুলিশের সংখ্যা কম ছিল। সেখানকার অধিকাংশ পুলিশকর্মীই ব্যস্ত ছিলেন কোনা এক্সপ্রেসওয়েতে। কারণ এ দিন কলকাতার মেয়ো রোডে ছিল তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্টা দিবসের অনুষ্ঠান। সে উপলক্ষে রাস্তায় হওয়া যানজট ও আইনশৃঙ্খলা সামলাতে এ দিন থানার অধিকাংশ কর্মীর ডিউটি ছিল কোনা এক্সপ্রেসেই ডিউটিতে।

মুখ্যমন্ত্রীর সভার হলেই কি তবে থানাকে সম্পূর্ণ অরক্ষিত করে দিয়ে পথের শৃঙ্খলা সামলাতে যাবেন পুলিশকর্মীরা? তবে তো এ রকমই কোনও এক সভার দিনে থানায় থাকা অস্ত্রের আলমারি, মালখানায় থাকা বাজেয়াপ্ত হওয়ায় সোনাগয়না বা মূল্যবান সামগ্রীও লুঠ হয়ে যেতে পারে ফাঁকা থানা থেকে। এই ঘটনার পরে এমনই নানা আশঙ্কা প্রকাশিত হচ্ছে বিভিন্ন মহল থেকে।

হাওড়ার পুলিশ কমিশনার জানান, কী ভাবে ঘটনাটি ঘটেছে, তা এখনও পরিষ্কার নয়। পলাতক আসামির খোঁজ শুরু হয়েছে। হাওড়া ও কলকাতার সব থানা-সহ আশপাশের জেলার পুলিশকেও সর্তক করে দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনা নিয়ে বিভাগীয় তদন্তও চলছে। পুলিশ কমিশনার বলেন, ‘‘তদন্তের রিপোর্ট পেলেই ওই সময়ে দায়িত্বে থাকা অফিসার-কর্মীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE