প্রতীকী ছবি।
এ বছর দুর্গাপুজোর উদ্বোধন হয়েছিল ২৬ সেপ্টেম্বর, ষষ্ঠীর দিন। অথচ হুকিংয়ের অভিযোগকে সামনে এনে প্রায় দেড় মাস পরে, ৬ নভেম্বর একটি পুজো কমিটির এক কর্তাকে গ্রেফতার করল দক্ষিণ বন্দর থানার পুলিশ! গোটা এলাকা পুলিশের এই ‘অতি সক্রিয়তা’য় হতভম্ব ও ক্ষুব্ধ। এর পিছনে শাসক দলের এক মন্ত্রীর হাত রয়েছে বলে তাঁদের অভিযোগ।
গত ২৬ সেপ্টেম্বর বিকেলে ডক ওয়েস্ট রোডে তিন দশকের পুরনো ‘হাইড রোড টিনাবাজার ডিএলএস সর্বজনীন দুর্গোৎসব’-এর উদ্বোধন করার কথা ছিল বন্দর এলাকার তৃণমূল নেতা তথা রাজ্যের এক মন্ত্রীর। কিন্তু পুজোর উদ্বোধন করেন বিজেপির এক রাজ্য নেতা। এই নিয়ে পরে কোনও উচ্চবাচ্য না হলেও ৬ নভেম্বর পুজো কমিটির সভাপতি রমাকান্ত যাদবকে আচমকা গ্রেফতার করে পুলিশ। কমিটির সম্পাদকের নামেও মামলা রুজু করা হয়। পাশাপাশি ওই পুজোয় যে সংস্থা বিদ্যুৎ সরবরাহ করে, তাদেরও নোটিস ধরায় পুলিশ।
পুলিশ জানায়, ওই পুজো কমিটি হুকিং করে বিদ্যুৎ নিয়েছে। তা নিয়ে সিইএসসি থানায় অভিযোগ করায় রমাকান্তবাবুকে গ্রেফতার করা হয়েছে। দক্ষিণ বন্দর থানার ওসি গোপাল দেবনাথের কথায়, ‘‘সিইএসসি-র অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেফতার হয়েছে। এর বেশি কিছু বলতে পারব না।’’ কিন্তু হুকিংয়ের অভিযোগ হলে তো সিইএসসি এবং পুলিশের দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ছিল? এই প্রশ্নের জবাব দেননি ওসি। আর সিইএসসি-র বক্তব্য, ওই পুজোয় বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য তাদের কাছে আগাম কোনও আবেদন আসেনি। এ ক্ষেত্রে তাই বিদ্যুৎ আইন অনুযায়ী স্থানীয় থানায় অভিযোগ জানানো হয়েছে। তবে পরে পুজো কমিটি ক্ষতিপূরণ দিয়ে বিষয়টি মিটিয়ে নিয়েছে। তা হলে হুকিংয়ের অভিযোগ আসল কী করে? কোনও পক্ষই স্পষ্ট উত্তর দেননি।
যদিও পুজো কমিটি যে তথ্য পেশ করেছে তাতে পরিষ্কার, নিয়ম মেনে তারা পুলিশ, দমকল এবং সিইএসসি থেকে যাবতীয় অনুমতি নিয়েছে। কমিটির এক কর্তা বলেন, ‘‘সিইএসসি থেকে অস্থায়ী অনুমতি নিয়েই স্থানীয় এক বেসরকারি সংস্থা পুজোয় বিদ্যুৎ সরবরাহ করেছে। ৩০ বছর ধরে এই ব্যবস্থাই চলে আসছে। এ বারও তাই হয়েছে।’’ ওই সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর শৈবাল চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এই সর্বজনীন পুজোয় প্রতি বছর আমরা বিদ্যুৎ সরবরাহ করে থাকি। পুজো কমিটিও নিয়ম মেনে আমাদের থেকে বিদ্যুৎ নেয়। এ জন্য সিইএসসি মোটা টাকা পায়। অথচ আমাদের নোটিস ধরিয়েছে পুলিশ!’’ শৈবালবাবুর দাবি, ‘‘এত বছর ধরে কিছু হল না, অথচ এ বার এমন কী ‘কাণ্ড’ ঘটল কিছুতেই বুঝতে পারছি না।’’
এই ঘটনার পিছনে আসলে রাজনীতি জড়িয়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। কী রকম? এলাকার খবর, ওই দিন পুজো উদ্বোধন করার কথা ছিল মন্ত্রী সাহেবের। তিনিই ছিলেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আসার জন্য রওনাও দেন। কিন্তু মাঝপথে তিনি শোনেন, বিজেপির ওই নেতা পুজোর উদ্বোধন করে চলে গিয়েছেন! ক্ষুব্ধ মন্ত্রী তখনই গাড়ি ঘুরিয়ে ফিরে যান।
পুজোকর্তাকে গ্রেফতারের পিছনে ওই মন্ত্রীর ‘হাত’ রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় মানুষদের একটি বড় অংশ। এই নিয়ে দক্ষিণ বন্দর থানার পুলিশকেও চরম ভর্ৎসনা করেন তৃণমূলের ওই নেতা। অভিযোগ, মন্ত্রীর নির্দেশেই কমিটির কর্তাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। কী কারণ দেখিয়ে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে, তা ঠিক করতে সময় লাগে। তাই মাঝখানে দেড় মাস পেরিয়ে গিয়েছে।
ধৃত রমাকান্তর ভাই ব্রিজেশ যাদবেরও অভিযোগ, ‘‘শাসক দলের নেতা শুধু রাজনীতিটাই বুঝলেন। আমার দাদা রাজনীতির শিকার হল। দাদাকে ফাঁসানো হয়েছে।’’ তাঁর বক্তব্য, ‘‘বিরোধী নেতা পুজোয় এলে আমরা কি তাঁকে তাড়িয়ে
দেব? আমরা সবাইকে সম্মান করতে চাই।’’ তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা যাবতীয় অভিযোগ অবশ্য উড়িয়ে দিয়েছেন ওই মন্ত্রী। তাঁর দাবি, ‘‘ওই পুজো উদ্বোধন করার কথা ছিল ঠিকই। কিন্তু পুজো কমিটির কর্তাকে গ্রেফতারের পিছনে আমার বিন্দুমাত্র ভূমিকা নেই। সিইএসসি-র অভিযোগেই পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করেছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy