রাজীব কুমার
দিল্লির প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার, সিবিআইয়ের প্রাক্তন কর্তার লেখা সদ্যপ্রকাশিত বইয়ে পশ্চিমবঙ্গের এক আইপিএস অফিসারের প্রশংসা!
মাস কয়েক আগে প্রকাশিত, ‘ডায়াল ডি ফর ডন— ইনসাইড স্টোরিজ অব সিবিআই মিশনস’-এ নীরজ কুমার লিখেছেন, ‘খাদিমকর্তার মুক্তিপণের টাকার অংশ যে ৯/১১-র হামলাকারীদের হাতে পৌঁছেছিল, তা উন্মোচনে পশ্চিমবঙ্গে সিআইডি-র তদানীন্তন স্পেশ্যাল সুপারিনটেন্ডেন্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন’।
সাল ২০০১। সিআইডি-র ওই এসএস-এর নাম রাজীব কুমার। পনেরো বছর পর তিনিই হতে চলেছেন কলকাতার নতুন পুলিশ কমিশনার।
শুক্রবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘রাজীব কুমার কলকাতার নতুন পুলিশ কমিশনার হচ্ছেন। ৩ ফেব্রুয়ারি দায়িত্ব নেবেন।’’
রাজীব গত বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে সিআইডি-র এডিজি পদে। এ দিন রাজীব ও বিনীত গোয়েল নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে যান। এত দিন সিআইডি-র আইজি (২) থাকা বিনীত কলকাতা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (১) হচ্ছেন।
লালবাজারে রাজীব যাঁর স্থলাভিষিক্ত হলেন, সেই সুরজিৎ করপুরকায়স্থ ২০১৩-র ফেব্রুয়ারি থেকে সিপি। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি তাঁর তিন বছর পূর্ণ হচ্ছে। সামনেই বিধানসভা ভোট। তাই সুরজিৎবাবুর বদলি অনিবার্যই ছিল।
নবান্ন সূত্রের খবর, সুরজিৎবাবু সিআইডি-র ডিজি বা ডিজি (অপরাধ দমন) হচ্ছেন। তবে প্রশাসনিক সদর দফতরেও তাঁকে বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তাই তাঁকে স্বরাষ্ট্র দফতরের অফিসার অন স্পেশ্যাল ডিউটি (ওএসডি)-ও করা হয়েছে।
সুরজিৎবাবুর উত্তরসূরি কে, তা নিয়ে জল্পনার মধ্যেই দিন চারেক আগে নবান্নের এক কর্তা বলেন, ‘‘আমরা যে অফিসারের নাম গোড়া থেকে শুনে আসছিলাম, তিনিই কলকাতার নতুন সিপি হতে চলেছেন।’’
সুরজিৎবাবুর উত্তরসূরি হিসেবে ১৯৮৯ ব্যাচের রাজীব কুমারের নাম এক বছরেরও বেশি আগে থেকে নবান্ন ও লালবাজারের অলিন্দে ঘোরাফেরা করছিল। তার কারণ, প্রথমে মুখ্যমন্ত্রীর আস্থা অর্জন করে ২০১২-র জানুয়ারিতে রাজীব বিধাননগর পুলিশের কমিশনার হন। পরে ক্রমশ মমতার ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন।।
বিরোধীদের পাশাপাশি পুলিশেরও একাংশের অভিযোগ, সারদা কেলেঙ্কারির তদন্তে স্পেশ্যাল ইনভেস্টিগেশন টিম (সিট)-এর গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে রাজীব ও তাঁর বিধাননগর পুলিশ শাসক তৃণমূল তথা সরকারের শীর্ষ মহলের অঙ্গুলি হেলনে চলেছেন। সে কারণেই রাজীব মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন।
এই অংশের অভিযোগ, শাসকের প্রভাবেই সারদা-কাণ্ডে কুণাল ঘোষ ছাড়া তৃণমূলের অন্য কাউকে গ্রেফতার করেনি সিট। এমনকী জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়নি অনেককে। তাঁদের অভিযোগ, সারদা-তদন্তে তৃণমূলের কোনও কোনও নেতা-নেত্রীর বিরুদ্ধে যেতে পারে, এমন বহু তথ্যপ্রমাণ রাজীব কমিশনার থাকাকালীন বিধাননগর পুলিশ নষ্ট করে ফেলেছে। সেই জন্য রাজীবকে সিবিআই জেরা করুক, এ দাবিও উঠেছে। রাজীব ও বিধাননগরের পুলিশ কর্তারা অবশ্য সব অভিযোগই উড়িয়ে দিয়েছেন।।
আবার বাম আমলে তৃণমূলের অভিযোগ ছিল, রাজীব কুমার তাদের নেত্রীর ফোনে আড়ি পাতেন! রাজীব তখন কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ)-এর প্রধান। পালাবদলের পর রাজীব ডিভিসি বা কোনও কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থায় চলে যাবেন বলেও শোনা গিয়েছিল। পরে রাজ্য পুলিশের এক শীর্ষকর্তার হস্তক্ষেপে দু’পক্ষের বিরোধ মিটে যায়।
রাজীবের সমালোচকেরাও মানেন, তিনি দক্ষ, বিশেষত জঙ্গি ও অপরাধ দমনের ক্ষেত্রে। খাদিমকর্তা থেকে রোমা ঝাওয়ার অপহরণ, জেহাদি জঙ্গি থেকে মাওবাদী গ্রেফতার—কী সিআইডি কী কলকাতা পুলিশ— সর্বত্রই রাজীব সফল। লালবাজার সূত্রের খবর, তাঁর আমলেই এসটিএফ এক পড়শি দেশ থেকে এক জঙ্গিকে ইঞ্জেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে নিয়ে চলে এসেছিল। পরে ওই ঘটনার ছায়া দেখা গিয়েছিল অক্ষয় কুমারের ‘বেবি’ ছবিতে। রাজীবের পরিকল্পনাতেই জঙ্গলমহল থেকে ধরে আনা হয়েছিল ছত্রধর মাহাতোকে। নবান্ন সূত্রের খবর, ওসামা বিন লাদেনকে খতম করার অভিযান ‘অপারেশন নেপচুন স্পিয়ার’-এও রাজীবের অবদান রয়েছে বৈদ্যুতিন নজরদারি ও তথ্য সরবরাহ করার ক্ষেত্রে। যে কারণে আইবি, ‘র’-এর মতো কেন্দ্রীয় সংস্থার কাছেও রাজীবের দক্ষতা ও নৈপুণ্য স্বীকৃত। আবার বহু ক্ষেত্রে সিস্টেমকে পাত্তা না দেওয়ায় কর্তাদের সঙ্গে রাজীবের সংঘাতও বেধেছে।
আর এই সিস্টেম মানায় পুলিশের একাংশ এগিয়ে রাখেন রাজীবের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী সৌমেন মিত্রকে। নবান্নের আমলাদেরও একটা বড় অংশ রাজীবের এক ব্যাচ সিনিয়র সৌমেনের হয়ে সওয়াল করেছিলেন। তাঁদের বক্তব্য ছিল, সৌমেন যথেষ্ট দক্ষ, বাহিনীর সব স্তরে জনপ্রিয় এবং সিস্টেম মেনেই কাজ করেন।
তবে এ সব সওয়ালে কাজ হল না। কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল কমিশনার (১)-এর পদ থেকে সৌমেন মিত্র চলে যাচ্ছেন সিআইডি-র অতিরিক্ত ডিজি পদে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy