Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

রাতের শহরে বাইক সেই বেলাগাম

দুর্ঘটনাগ্রস্ত মোটরবাইকটি দেখে আঁতকে উঠেছেন দুঁদে পুলিশকর্মীরাও। ইঞ্জিন দু’টুকরো হয়ে গিয়েছে। উড়ে গিয়েছে সিটের অর্ধেক অংশ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০২:৩৩
Share: Save:

মোটরবাইকের দৌরাত্ম্য ঠেকাতে নরমে-গরমে বোঝাচ্ছে লালবাজার। রাতে উড়ালপুলে বাইক নিষিদ্ধ করার দাওয়াই দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তার পরেও অনেকেই যে এই পুলিশি বাণীতে কান দিচ্ছেন না, তার প্রমাণ দিল বৃহস্পতিবারের রাত। পুলিশ জানায়, ওই রাতে ১১টা নাগাদ হেস্টিংস থানা এলাকার প্রিন্সেপ ঘাটের কাছে রাস্তার ধারে স্তম্ভে ধাক্কা মারে একটি মোটরবাইক। মৃত্যু হয় চালক এবং আরোহীর। মৃত মহম্মদ শাহবাজ (২৪) এবং রহমত আলি (২৫), দুই যুবকেরই বাড়ি ওয়াটগঞ্জের জামালপা়ড়ায়। কারও মাথাতেই হেলমেট ছিল না বলে পুলিশের দাবি।

দুর্ঘটনাগ্রস্ত মোটরবাইকটি দেখে আঁতকে উঠেছেন দুঁদে পুলিশকর্মীরাও। ইঞ্জিন দু’টুকরো হয়ে গিয়েছে। উড়ে গিয়েছে সিটের অর্ধেক অংশ। সামনের চাকা দলা পাকিয়ে গিয়েছে। এ সব দেখে পুলিশের অনুমান, দুর্ঘটনার সময়ে বাইকের গতি ছিল ঘণ্টায় ১১০ কিলোমিটারেরও বেশি। এই গতির প্রসঙ্গেই উঠে এসেছে রাতের শহরে মোটরবাইক রেসের কথা। পুলিশ সূত্রের খবর, দুর্ঘটনাগ্রস্ত মোটরবাইকটি যে আর একটি বাইকের সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছিল, তা ধরা প়়ড়েছে সিসিটিভি ক্যামেরাতেও।

অতীতে রাতের শহরে একের পর এক দুর্ঘটনার সময়ে যুবকদের মধ্যে মোটরবাইক রেসের কথা জানা গিয়েছিল। সেই দৌরাত্ম্যে রাশ টানতে সম্প্রতি রাতের উড়ালপুলে বাইক চলাচল নিষিদ্ধ করা-সহ বেশ কিছু দাওয়াই দিয়েছে লালবাজার। কিন্তু পুলিশের নজর এড়িয়ে এখনও যে মোটরবাইক রেস চলে, কার্যত তারই প্রমাণ মিলছে এই ঘটনায়।

প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জেনেছে, বৃহস্পতিবার রাতে শাহবাজ এবং রহমত আরও দুই বন্ধুর সঙ্গে ধর্মতলার একটি ধাবায় খেতে গিয়েছিলেন। বন্ধুরা ছিলেন আর একটি মোটরবাইকে। ফেরার সময়েও চার জন একসঙ্গে আসছিলেন। তদন্তকারীদের অনুমান, ফাঁকা রাস্তায় দু’টি মোটরবাইকের রেস চলছিল। সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়েছে, অন্য মোটরবাইকটি দ্রুত গতিতে বেরিয়ে যাওয়ার পরেই দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনাস্থলটি বেশ আঁকাবাঁকা। বেপরোয়া গতিতে বাইক চালানোর সময়ে নিয়ন্ত্রণ রাখতে না পেরেই ঘটে বিপত্তি।

পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনাস্থলেই মারা যান শাহবাজ। গুরুতর জখম অবস্থায় রহমতকে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিছু ক্ষণের মধ্যেই মৃত্যু হয় তাঁর। পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, প্রথমে একটি স্তম্ভে ধাক্কা মারে শাহবাজের মোটরবাইক। তার পরে আরও একটি স্তম্ভে ধাক্কা খায়।

এই ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে রাতের শহরে নজরদারি নিয়েও। কী ভাবে হেলমেটহীন মোটরবাইক আরোহীরা এমন তীব্র গতিতে ধর্মতলা থেকে প্রিন্সেপ ঘাট পর্যন্ত পৌঁছে গেলেন, কেনই বা তাঁদের কেউ আটকাল না, সে প্রশ্ন উঠেছে। রাতে শহরে বহু জায়গাতেই গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণের জন্য গার্ডরেল বসানো আছে। তা রয়েছে প্রিন্সেপ ঘাটের সামনেও। তার পরেও কী ভাবে এই ঘটনা ঘটল, প্রশ্ন রয়েছে সে নিয়েও।

লালবাজারের এক ট্র্যাফিক-কর্তা বলেন, ‘‘ওই এলাকার সব সিসিটিভি ফুটেজ দেখা হচ্ছে। রাতের শহরে বেপরোয়া মোটরবাইক পাকড়াও করতে অভিযান আরও জোরদার করা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Reckless bikes Accidents Polices
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE