Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
বরাহনগরে ডাকাতি

ধৃত গৃহকর্তার শ্যালক

বরাহনগরের অভিজাত আবাসনের একটি ফ্ল্যাটে ডাকাতির কিনারা করল পুলিশ। ঘটনায় জড়িত থাকার জন্য বুধবার রাতে দু’জন গ্রেফতার হয়েছে। ধৃতদের নাম কার্তিক চট্টোপাধ্যায় ও মহম্মদ জাভেদ। পুলিশ জানিয়েছে, গৃহকর্তা রবি গঙ্গোপাধ্যায়ের শ্যালক কার্তিক। পুলিশের দাবি, জেরায় কার্তিক জানায়, তার কয়েক লক্ষ টাকা দেনা হয়েছিল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০০:৪২
Share: Save:

বরাহনগরের অভিজাত আবাসনের একটি ফ্ল্যাটে ডাকাতির কিনারা করল পুলিশ। ঘটনায় জড়িত থাকার জন্য বুধবার রাতে দু’জন গ্রেফতার হয়েছে। ধৃতদের নাম কার্তিক চট্টোপাধ্যায় ও মহম্মদ জাভেদ। পুলিশ জানিয়েছে, গৃহকর্তা রবি গঙ্গোপাধ্যায়ের শ্যালক কার্তিক। পুলিশের দাবি, জেরায় কার্তিক জানায়, তার কয়েক লক্ষ টাকা দেনা হয়েছিল। দেনা থেকে বাঁচতে সে জাভেদকে নিয়ে নিজের বোনের বাড়িতেই ডাকাতির পরিকল্পনা করে ৩১ অগস্ট বরাহনগরের ‘মালঞ্চ’ আবাসনের বাসিন্দা রবিবাবুর ফ্ল্যাটে ডাকাতি হয়। পুলিশ জানায়, ডাকাতির ধরন দেখে প্রথম থেকেই তাঁদের মনে হয়েছিল, খুব পরিচিত কেউই জড়িত। ডাকাতির সময়ে দুষ্কৃতীরা রবিবাবুর স্ত্রী রুমাদেবীকে হুমকি দেয়, আলমারির চাবি না দিলে রবিবাবুকে ডানলপে বেঁধে রাখা হবে। এতেই প্রথম খটকা লাগে গোয়েন্দাদের। রবিবাবু স্ত্রী রুমা ও মেয়ে পূজাকে নিয়ে ডানলপে গিয়েছিলেন, তা কী করে জানল দুষ্কৃতীরা? ডাকাতি করতে এসে দুষ্কৃতীরা সাধারণত মারধর করে। কিন্তু রুমাদেবীদের সঙ্গে তা করা হয়নি। এতেও পুলিশের সন্দেহ হয় যে পরিকল্পনাকারী পরিবারের ঘনিষ্ঠ। তাই লুঠ করলেও কারও ক্ষতি করতে চায়নি।

পুলিশ জেনেছে, রুমাদেবী, তাঁদের ছেলের গৃহশিক্ষিকা লীনাদেবী এবং পরিচারিকা লতিকার মোবাইল দুষ্কৃতীরা নিয়ে গেলেও পূজার মোবাইল নেয়নি। সকলের গয়না লুঠ করলেও পূজার কানের দুল রেখে যায় তারা। এ সব থেকে পুলিশ নিশ্চিত হয়, পরিবারের অতি ঘনিষ্ঠ কেউ এই কাণ্ড ঘটিয়েছে।

পুলিশ জানায়, ঘটনার দু’দিন আগে, ২৯ অগস্ট রুমাদেবীরা যখন বাড়ি ছিলেন না তখন তাদের ফ্ল্যাটে ঢোকে কার্তিক। সে সময় একাই ছিলেন লতিকা। সে দিনই রেইকি করে যায় কার্তিক। পুলিশ জানায়, ৩১ তারিখ রুমাদেবীরা যে ডানলপে যাবেন, তা জানত কার্তিক। তাই তিন বার সে রুমাদেবীকে ফোন করে জানতে চায়, তাঁরা ফিরেছেন কি না। সেই মতো ভাড়া করা ছয় দুষ্কৃতীকে নিয়ে হাজির হয় সে।

পুলিশ জেনেছে, ঘটনার দিন পূজা ডানলপ থেকে ফিরে ফের বেরিয়েছিল। তখন কার্তিক তার শাগরেদদের পূজাকে চিনিয়ে দেয়। পূজা বেরোতেই দুই দুষ্কৃতী ফ্ল্যাটে ঢোকে। তারও আগে আরও দু’জন এসি সারানোর নামে এসে আবাসনের রক্ষীকে যে ‘ভুয়ো’ রবিবাবুর সঙ্গে কথা বলিয়ে দিয়েছিল, সে ছিল কার্তিকই।

তদন্তকারীরা জানান, পূজার প্রতি ডাকাতদের ভালবাসায় সন্দেহ হয় তাঁদের। তাই রবিবাবুর পরিচিতদের পাশাপাশি কার্তিককেও জেরা করা হয়। তখন সে শিয়ালদহে থাকার কথা বললেও তার মোবাইল টাওয়ারের লোকেশন ছিল আবাসনের কাছাকাছি। রুমাদেবীর মোবাইলের আইএমইআই নম্বর খতিয়ে দেখে তার লোকেশনও মেলে কার্তিকের কাছে। ওই মোবাইলটি উদ্ধার হয়েছে। এই তথ্য পেয়ে পুলিশ নিশ্চিত হয়, কার্তিকই ঘটনার পাণ্ডা।

ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার নীরজ সিংহ বৃহস্পতিবার বলেন, ‘‘কার্তিক দোষ স্বীকার করেছে। তার থেকে জেনে আরও এক জনকে ধরা হয়েছে।’’ গোয়েন্দাপ্রধান অজয় ঠাকুর বলেন, ‘‘প্রথম থেকেই সন্দেহ ছিল, পরিচিত কেউ জড়িত। কিছু প্রমাণ হাতে আসার পরেই আমরা নিশ্চিত হই।’’

এ দিন আদালতে কার্তিকের সাত দিন পুলিশি হেফাজত হয়। রবিবাবু জানান, কার্তিকের জন্য তাঁর শ্বশুরবাড়ির আর্থিক অবস্থা খুব খারাপ হয়েেছিল। তিনিও কার্তিকের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতেন না। রুমাদেবী বলেন, ‘‘দাদা এ কাজ করবে, ভাবতে পারছি না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Robbery Barahanagar police flat
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE