Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

মাথায় গেঁথেছিল রড, অস্ত্রোপচারে বাঁচল বালিকা

রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল ১১ বছরের বালিকা। আচমকা একটি নির্মীয়মাণ বাড়ির তিনতলা থেকে রাজমিস্ত্রির হাত ফস্কে লোহার রড এসে পড়ে তার মাথায়। গেঁথে যায় মাথার মাঝখানে।

তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০১৬ ০০:৫৭
Share: Save:

রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল ১১ বছরের বালিকা। আচমকা একটি নির্মীয়মাণ বাড়ির তিনতলা থেকে রাজমিস্ত্রির হাত ফস্কে লোহার রড এসে পড়ে তার মাথায়। গেঁথে যায় মাথার মাঝখানে। ওই দুর্ঘটনায় সাময়িক ভাবে থমকে যেতে বসেছিল লিজা বিশ্বাস নামে ওই মেয়েটির জীবন। টানা তিন মাস চিকিৎসায় তাকে কার্যত নবজন্ম দিলেন কলকাতার চিকিৎসকেরা।

গত এপ্রিলে চৈত্র সংক্রান্তির দুপুর। নেতাজিনগরের বাসিন্দা লুইস এবং মল্লিকা বিশ্বাসের মেয়ে, ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী লিজার স্কুল ছুটি ছিল। বাবা-মা বাড়ি ছিলেন না। এক প্রতিবেশীর বাড়ি যেতে বেরিয়েছিল লিজা। কয়েক পা যেতে না যেতেই সব যেন অন্ধকার!

কী হয়েছিল? লুইস বলেন, ‘‘পাড়ায় একটি বহুতল তৈরি হচ্ছিল। রড, সিমেন্ট, বালি নিয়ে কাজ করছিলেন মিস্ত্রিরা। হঠাৎই বাড়ির তিনতলা থেকে লোহার রড এক মিস্ত্রির হাত ফস্কে পড়ে। তখন সেখান দিয়েই যাচ্ছিল লিজা। রড ওর মাথায় গেঁথে যায়। এমন দৃশ্য দেখে তিনতলা থেকে ছুটে আসেন মিস্ত্রিরা। কী করবেন বুঝে উঠতে না পেরে রডটা টেনে বার করে আনেন তাঁদেরই এক জন।’’

যে বাড়িতে লুইসরা ভাড়া থাকেন, তার বাড়িওয়ালা দিলীপ দাসই রক্তাক্ত, অচেতন লিজাকে বাইপাসের একটি হাসপাতালে নিয়ে যান। চিকিৎসকেরা জানান, লিজা কোমায় আচ্ছন্ন। তাকে ভেন্টিলেশনে রাখা জরুরি হয়ে পড়ে। ওই হাসপাতালে প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো না থাকায় মেয়েটিকে স্থানান্তরিত করা হয় বাইপাসেরই আর এক হাসপাতালে। সেখানে ভেন্টিলেশনে ৭২ ঘণ্টা থাকার পরে তার জ্ঞান ফেরে। কিন্তু অসাড় হয়ে যায় দেহের বাঁ পাশ।

চিকিৎসকেরা জানান, রডটি টেনে বার করার সময়ে মাথার খুলির একটি অংশ ভেঙে মস্তিষ্কে গেঁথে গিয়েছিল। সেই সঙ্গে চুল ও চামড়ার একটি অংশও মস্তিষ্কে চলে যায়। যার জেরে দেহের একটি অংশ অসাড় হওয়ার সঙ্গে সংক্রমণও ছড়াতে থাকে। দ্রুত অস্ত্রোপচার জরুরি হয়ে পড়ে। কিন্তু হঠাৎ শরীরের তাপমাত্রা বাড়তে থাকে লিজার। ফলে অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হয়। ওষুধের সাহায্যে দিন কয়েক পরে জ্বর কমিয়ে গত ২ মে বাইপাসের ওই বেসরকারি হাসপাতালে লিজার অস্ত্রোপচার করেন স্নায়ু-শল্যচিকিৎসক অমিতাভ চন্দ।

যে পদ্ধতিতে লিজার অস্ত্রোপচার হয়, চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় তাকে ‘কম্পিউটার অ্যাসিস্টেড সার্জারি’ বলা হয়। অমিতাভবাবু বলেন, ‘‘যে ভাবে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে, সেটাও অভিনব। অস্ত্রোপচারেও অনেক ঝুঁকি ছিল। সফল না হলে একটা বাচ্চা মেয়ে সারা জীবন পঙ্গু হয়ে যেত। অস্ত্রোপচারের পরেও স্বস্তি পাইনি। যে দিন দেখলাম ও হাত-পা নাড়াতে পারছে, সে দিন নিশ্চিন্ত হলাম। অস্ত্রোপচারের পরেও কিছু ঝুঁকি থাকে। সেই পর্বও এখন পেরিয়ে গিয়েছে। এখন আমরা মেয়েটিকে বিপন্মুক্ত বলতে পারি।’’

এই সাফল্য কলকাতার চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা ফেরাবে বলে মনে করছে চিকিৎসক মহল। স্নায়ু-শল্যচিকিৎসক অনির্বাণদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কলকাতায় অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে একটি বাচ্চা মেয়ে নতুন জীবন ফিরে পেল, এক জন চিকিৎসক হিসেবে এটা ভেবেই ভাল লাগছে।’’

স্নায়ু-শল্যচিকিৎসক পরিমল ত্রিপাঠীও বলেন, ‘‘এমন অস্ত্রোপচারে খুবই ঝুঁকি থাকে। চিকিৎসকেরা সব রকম প্রতিকূলতা সত্ত্বেও যত দ্রুত পেরেছেন, অস্ত্রোপচারটি করেছেন। আরও দেরি হলে মেয়েটিকে হয়তো স্বাভাবিক জীবনে ফেরানো যেত না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

operation Rod
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE