Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

পথে শাসকের বিক্ষোভ, যানজটে নাকাল শহর

চিটফান্ড-কাণ্ডে তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের গ্রেফতার হওয়ার বিরুদ্ধে প্রতিবাদে বুধবার শহর জুড়ে বিক্ষোভ-মিছিলের একাধিক কর্মসূচি নিয়েছিল শাসক দল। ফলে যানজটে দিনভর ভুগল আমজনতা। বিক্ষোভের আঁচ এড়াতে পারল না রেলও। আর গোটা বিষয়টি নিয়ে আগে থেকে স্পষ্ট পরিকল্পনা না থাকায় সামাল দিতে পারল না পুলিশ প্রশাসনও।

তৃণমূলের মিছিলে অবরুদ্ধ পথ। বুধবার, রবীন্দ্র সরণিতে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।

তৃণমূলের মিছিলে অবরুদ্ধ পথ। বুধবার, রবীন্দ্র সরণিতে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০১৭ ০০:৪৯
Share: Save:

চিটফান্ড-কাণ্ডে তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের গ্রেফতার হওয়ার বিরুদ্ধে প্রতিবাদে বুধবার শহর জুড়ে বিক্ষোভ-মিছিলের একাধিক কর্মসূচি নিয়েছিল শাসক দল। ফলে যানজটে দিনভর ভুগল আমজনতা। বিক্ষোভের আঁচ এড়াতে পারল না রেলও। আর গোটা বিষয়টি নিয়ে আগে থেকে স্পষ্ট পরিকল্পনা না থাকায় সামাল দিতে পারল না পুলিশ প্রশাসনও।

এ দিন সকাল থেকেই সদলবল মিছিল বার করেন শহরের বিভিন্ন প্রান্তের তৃণমূল নেতা, বিধায়ক, সাংসদেরা। মিছিল শেষে দফায় দফায় জমায়েত হয় শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে। মধ্য ও উত্তর কলকাতার তৃণমূল নেতা-কর্মীদেরই বেশি সক্রিয় হতে দেখা যায় এ দিন। তাই যান-দুর্ভোগও শহরের ওই দিকেই বেশি ঘটে। প্রসঙ্গত, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ও উত্তর কলকাতারই সাংসদ।

এ দিন শহর জোড়া প্রতিবাদের মূল কথা ছিল একটাই। নোট-কাণ্ডের প্রতিবাদে তৃণমূল যে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছে, তারই প্রতিহিংসায় তৃণমূল নেতাদের গ্রেফতার করছে কেন্দ্র। যার সাম্প্রতিকতম শিকার সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়।

এ দিন সকাল থেকেই দলে দলে তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকেরা মিছিল করে বিচ্ছিন্ন ভাবে জমায়েত হতে থাকেন মহম্মদ আলি পার্ক, মহাত্মা গাঁধী রোডের মোড়, হাতিবাগান, কাঁকুড়গাছি, মেডিক্যাল কলেজের সামনে। তারস্বরে স্লোগান দিতে দিতে মোদীর কুশপুতুল দাহ করেন তাঁরা। বেশ কিছু ক্ষণ করে থেমে থাকে সংলগ্ন রাস্তাগুলির যানবাহন। আর এই গোটা এলাকার চাপ এসে পড়ে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়েও। দুপুর বারোটায় কাঁকুড়গাছি মোড়ে জমায়েত হয় ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শান্তিরঞ্জন কুণ্ডুর নেতৃত্বে আসা তিনটি মিছিল। উল্টোডাঙা, মানিকতলা ও ফুলবাগান থেকে কাঁকুড়গাছিগামী সব রাস্তায় বাড়তে থাকে যানজট। এমনকী, মানিকতলা ইএসআই হাসপাতাল থেকে বেরোনো অ্যাম্বুল্যান্সগুলিও আটকে পড়ে তাতে। পুলিশ ঘটনাস্থলে থাকলেও গাড়িগুলি ঘোরানোর ব্যবস্থা করতে পারেনি। দুপুর দেড়টা-দু’টো থেকে ছুটি হতে শুরু করে বহু স্কুল। তখন দুর্ভোগে পড়ে ওই এলাকার স্কুলপড়ুয়ারাও। ততক্ষণে যানজট অবশ্য আরও দূরে গড়িয়েছে। বহু স্কুলবাস আটকে পড়ে যশোর রোড ও ভিআইপি রোডেও। দমদমে ব্রাত্য বসুর মিছিল বেরোনোয় আটকে ছিল এই রাস্তাগুলিও।

আরও একটি মিছিল বেরোয় বেলেঘাটার বিধায়ক পরেশ পালের নেতৃত্বে। বারোটা পঁয়ত্রিশ নাগাদ মিছিলটি কাঁকুড়গাছি রেলব্রিজের উপরে ওঠে পতাকা নিয়ে। পরে লাইনেও নামে মিছিল। আটকে যায় শিয়ালদহ থেকে ছাড়া বনগাঁ লোকাল। তৃণমূলের সমর্থেকেরা আচমকা কাঁকুড়গাছি কেবিনের কর্মীদের কেবিন ছেড়ে যেতে বাধ্য করেন। ফলে লাইনের পয়েন্ট ও সিগন্যালে বিপত্তি ঘটে। একাধিক লাইনে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। প্রতিবাদ করতে গিয়ে সাধারণ মানুষকে এতটা হয়রানির মুখে ফেলা নিয়ে প্রশ্ন করলে পরেশ পাল বলেন, ‘‘মানুষ এত দিন ধরে ব্যাঙ্কের লাইনে অনেক দুর্ভোগ সয়েছে। আজ এটুকুও পারবে।’’ তবে তিনি এ-ও বলেন, ‘‘আমি রাজ্যের হয়রানি চাই না। কেন্দ্রের প্রতিহিংসার প্রতিবাদেই রেল অবরোধ করেছি।’’ রেল সূত্রের খবর, এ দিন শিয়ালদহ দক্ষিণ, মেন লাইন এবং চক্ররেলে বেশ কিছু ক্ষণ পরিষেবা ব্যহত হয়। বেলা ১০টা থেকে প্রায় ৪৫ মিনিট প্রথম অবরোধ হয় চক্ররেলের বাগবাজার স্টেশনে। পরে অবরোধ হয় গড়িয়া স্টেশনেও। দুপুরে শিয়ালদহ মেন শাখার লোকাল ট্রেনগুলিও অনেকটা দেরিতে চলাচল করেছে।

রাজবল্লভপাড়া মোড় এবং রাজাবাজার মোড়ে সকালের দিকে অবরোধ করেন তৃণমূল সমর্থকেরা। নাকাল হতে হয় বহু অফিসযাত্রীকে। আবার দুপুর একটা নাগাদ আমহার্স্ট স্ট্রিট থানার অন্তর্গত কৈলাস বোস স্ট্রিটে বিজেপি সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়র বাড়িতে মিছিল করে বিক্ষোভ দেখান তৃণমূল সমর্থকেরা। পুলিশ জানিয়েছে, প্রায় পনেরো-কুড়ি মিনিট তৃণমূল সমর্থকেরা বাবুল সুপ্রিয়র বাড়ির সামনে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন।

অবরুদ্ধ হয় পাতিপুকুর এবং শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড়ও। আবার দুপুর দু’টো নাগাদ কলেজ স্ট্রিট থেকে বিজেপি-র একটি মিছিল বেরিয়ে ধর্মতলায় পৌঁছয় বিকেল তিনটে নাগাদ। বিজেপি-র এই মিছিলের জেরে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ, এজেসি বসু রোড, এপিসি রোড, কলেজ স্ট্রিট, ধর্মতলা, লেনিন সরণি, এস এন ব্যানার্জি রোডে যানজট হয়। শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে আইএনটিটিইউসি-র একটি মিছিলও ধর্মতলায় এসে জড়ো হয়। বিকেল পাঁচটায় পথে নামে সিপিএম-ও। ফলে ধর্মতলা চত্বর যানজটে নাজেহাল হয়।

ভোগান্তিতে পিছিয়ে ছিল না দক্ষিণ কলকাতাও। গোলপার্ক থেকে তৃণমূলকর্মীদের একটি মিছিল বেরোনোয় অবরুদ্ধ হয়ে যায় গোটা ঢাকুরিয়া ব্রিজ। মিছিলটি যখন গড়িয়াহাটে পৌঁছয়, তখন সেখানে আগে থেকেই আরও একটি জমায়েত ছিল তৃণমূলেরই। ফলে গোটা রাসবিহারী অ্যাভিনিউয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায় দুপুরে। বাহাত্তর নম্বর ওয়ার্ড তৃণমূল কংগ্রেস কমিটির পক্ষ থেকে ভবানীপুরের প্রিয়নাথ মল্লিক রোডের দলীয় কার্যালয় থেকে মিছিল বেরিয়ে হাজরা রোড, ল্যান্সডাউন, পদ্মপুকুর, চক্রবেড়িয়া রোড (সাউথ) হয়ে ঘণ্টা খানেক ধরে ভবানীপুরের বিভিন্ন অলিগলি ঘুরে প্রিয়নাথ মল্লিক রোডে শেষ হয়।

বিকেল সওয়া পাঁচটা নাগাদ বৌবাজার থেকে মিছিল করে এসে সুবোধ মল্লিক স্কোয়ারে জড়ো হন দু’-তিন হাজার তৃণমূল সমর্থক। এই মিছিলে পা মেলান সাংসদ সুদীপবাবুর স্ত্রী, বিধায়ক নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়ও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TMC Agitation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE