প্রতীকী ছবি।
বসতি এলাকার বিভিন্ন বহুতল এবং মাসাজ পার্লার হয়ে উঠছে অপ্রাপ্তবয়স্কদের দিয়ে যৌন ব্যবসা চালানোর আখড়া। বৃহস্পতিবার পশ্চিমবঙ্গ শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনের প্রকাশিত একটি রিপোর্টে এ কথাই জানানো হয়েছে। একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গে যৌথ ভাবে ওই সমীক্ষা চালিয়েছে শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশন।
ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, দক্ষিণ কলকাতায় এই ধরনের যৌন চক্রের সংখ্যা সব চেয়ে বেশি। পার্লার কিংবা ফ্ল্যাটের ভিতরেই চলে যৌন ব্যবসা। পছন্দের তালিকার প্রথমে থাকে নাবালিকারা। বিভিন্ন জায়গা থেকে উদ্ধার হওয়া এমন মেয়েদের একাংশ জানিয়েছে, প্রতিদিন সাত থেকে আঠেরো জন ‘খদ্দের’ সামলাতে হয়। আট বছর বয়স থেকে তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজ শুরু হয়। সেই প্রশিক্ষণে রাজি না হলে চলে মারধর, হুমকি এবং নানা ধরনের অত্যাচার।
এই ব্যবসার দালালেরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত ভাবে পরিচিতদের খদ্দের হিসেবে নিয়ে যায়। আবার কোনও কোনও ক্ষেত্রে বিভিন্ন রাস্তায় পার্লারের বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। সঙ্গে লেখা থাকে ফোন নম্বর। আগ্রহীরা সেখানে যোগাযোগ করলে দালালেরা তাদের নির্দিষ্ট জায়গায় নিয়ে যায়।
ওই রিপোর্ট থেকে জানা গিয়েছে, এই ধরনের যৌন ব্যবসায় পনেরো থেকে সতেরো বছর বয়সীদের সংখ্যা সব চেয়ে বেশি। যাদের মধ্যে ৭০ শতাংশকেই ভাল কাজ দেওয়ার টোপ দেখিয়ে এই কাজে নিযুক্ত করা হয়। শিশু পাচারের এই কাজে যুক্তদের ৮০ শতাংশই মহিলা। শিশুদের এই ব্যবসায় মাথাপিছু তিন থেকে সাড়ে চার লক্ষ টাকা উপার্জন হয়।
সম্প্রতি কলকাতার একটি হোটেল থেকে ২৬ জন তরুণী এবং আটটি শিশুকে উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতার করা হয় ৩০ জন পাচারকারীকে। যৌনচক্র থেকে উদ্ধার হওয়া শিশুদের ৫৫ শতাংশ জানিয়েছে, যৌন নিগ্রহের পাশাপাশি তাদের মারধরও করা হত। এমনকী, যৌনকর্মে রাজি না হলে খুনের হুমকিও দেওয়া হত। শুধু তা-ই নয়, খুনের ভিডিও দেখিয়েও ভয় দেখানো হত তাদের।
ওই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের রিজিওনাল ডিরেক্টর সঞ্জয় ম্যাকওয়ানের কথায়, ‘‘এই সমীক্ষা শহরে অপ্রাপ্তবয়স্কদের যৌন নির্যাতনের সমস্যার দিকটি পরিষ্কার ভাবে তুলে ধরল। যা সরকারের কাজে আরও সাহায্য করবে। কেন্দ্র-রাজ্য যৌথ ভাবে এগিয়ে এলে তবেই এই পরিস্থিতির বদল সম্ভব।’’
যৌনপল্লি এ শহরে নতুন কিছু নয়। অপ্রাপ্তবয়স্কদের যৌন ব্যবসায় ব্যবহার করা হচ্ছে কি না, তা জানতে শহরের পুরনো যৌনপল্লিগুলিতে নজর রাখে প্রশাসন। কিন্তু সেই নজরদারি যে পর্যাপ্ত নয়, এ দিনের রিপোর্ট সেটাই তুলে ধরল। রাজ্য শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন অনন্যা চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘পরিস্থিতি পাল্টাতে নাগরিক সমাজের এগিয়ে আসাটা খুব জরুরি। পাশের ফ্ল্যাটে কিংবা পাড়ার পার্লারে কী হচ্ছে, সে ব্যাপারে ওয়াকিবহাল
না হলে এই পরিস্থিতি বদলানো কঠিন। এ নিয়ে কমিশন লাগাতার প্রচার চালাবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy