Advertisement
১১ মে ২০২৪
বিপাকে স্বাস্থ্য দফতর

হেল্থ সার্ভিসে বিশেষজ্ঞদের আকাল চলছেই

চিকিৎসক, বিশেষ করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের খোঁজে দিশাহারা অবস্থা স্বাস্থ্য দফতরের। যত জন দরকার, তার অর্ধেকও পাওয়া যাচ্ছে না হেল্থ সার্ভিস শাখায়।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০১৬ ০১:৫৮
Share: Save:

চিকিৎসক, বিশেষ করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের খোঁজে দিশাহারা অবস্থা স্বাস্থ্য দফতরের। যত জন দরকার, তার অর্ধেকও পাওয়া যাচ্ছে না হেল্থ সার্ভিস শাখায়। এই শাখা থেকেই মেডিক্যাল কলেজ বাদে বাকি সরকারি হাসপাতালে নিয়োগ করা হয়। কিন্তু বেতন ও তিন বছর বাধ্যতামূলক জেলায় পরিষেবা দেওয়া-সহ কিছু শর্ত অপছন্দ হওয়ায় চিকিৎসকেরা হেল্থ সার্ভিসে আসতে আগ্রহ হারাচ্ছেন বলে অভিযোগ। গত দু’বছরে দু’বার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেওয়ার বিজ্ঞাপন দিয়ে মাথা চাপড়ানোর দশা স্বাস্থ্যকর্তাদের। কেউ যোগ দিচ্ছেন না। সব চেয়ে আকাল সার্জন আর অ্যানাস্থেটিস্ট-এর। এর জেরে কলকাতার আশপাশের স্টেট জেনারেল হাসপাতালগুলির কোথাও আপৎকালীন অস্ত্রোপচার হচ্ছে না। গুরুতর অসুস্থ রোগীকেও রেফার করতে হচ্ছে।

২০১৪ সালে হেল্থ সার্ভিস শাখায় ১৬৬২ জন স্পেশ্যালিস্ট বা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের খালি পদে নিয়োগের দায়িত্ব দেওয়া হয় হেল্থ রিক্রুটমেন্ট বোর্ডকে। যোগ দেন ৮২ জন। ক’মাস পরে সেই সংখ্যা আরও প্রায় ৩০ জন কমে গিয়েছিল। এ বছর ২ মার্চ ফের বিজ্ঞাপন দেওয়া হলে আবেদন করেন ৫০৫ জন! স্বাস্থ্যকর্তারাই জানাচ্ছেন, ইন্টারভিউ হলে ৩০০ জনের মতো বাছাই হবেন, এবং তাঁরা নিশ্চিত যদি ২৫০ জনও চূড়ান্ত বাছাই হন, শেষে ১০০ জনের বেশি কাজে যোগ দেবেন না।

হেল্থ সার্ভিসের এক চিকিৎসক কর্তার কথায়, ‘‘জেনারেল ডিউটি মেডিক্যাল অফিসার নিয়োগ করে যে ইমার্জেন্সি চালানোর চেষ্টা করব, তা-ও হওয়ার নয়, কারণ তাঁরাও হেল্থ সার্ভিসে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। এর মধ্যে আবার সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল চালু করার দায় ঘাড়ে চেপে সমস্যা বেড়ে গিয়েছে।’’ স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, মাসখানেক আগে হেল্থ সার্ভিস থেকে শুধু সুপার স্পেশ্যালিটিগুলির জন্য ২০০ জন আংশিক সময়ের বিশেষজ্ঞ চেয়ে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছিল। আবেদন করেন ২৬ জন। কিন্তু ইন্টারভিউয়ের দিন এক জনও আসেননি। ফলে এ বার যে বিশেষজ্ঞদের পাওয়া যাবে, তাঁদের প্রথমেই সুপার স্পেশ্যালিটিগুলিতে পাঠানো হবে। স্টেট জেনারেলগুলিতে অবশ্য আকাল থেকেই যাবে।

কলকাতার আশপাশের স্টেট জেনারেল হাসপাতালগুলির চিত্রটা কেমন? বিজয়গড় স্টেট জেনারেলে কোনও সার্জন না থাকায় অস্ত্রোপচার হয় না। কর্তৃপক্ষ দু’টো গাড়ির ব্যবস্থা করেছেন। ইমার্জেন্সি কেস এলে সেই গাড়িতে বাঙুরে রেফার করা হয়। এক জন অ্যানাস্থেটিস্ট সপ্তাহে তিন দিন আসেন। ফলে সিজার কেসও মাত্র ওই তিন দিনই হয়।

বিদ্যাসাগর স্টেট জেনারেল কর্তৃপক্ষ জানালেন, এক জনই সার্জন। তিনি আবার চোখে ভাল দেখেন না! তাই সপ্তাহে এক দিন ছোটখাটো অস্ত্রোপচার ছাড়া হয় না। বাঘা যতীন স্টেট জেনারেলে এক জন সার্জন, দুই অ্যানাস্থেটিস্ট-এর এক জন অসুস্থ। সপ্তাহে দু’দিন শুধু পরিকল্পিত অস্ত্রোপচার হয়। ইমার্জেন্সি বন্ধ। গার্ডেনরিচ স্টেট জেনারেলে সার্জনই নেই। সপ্তাহে দু’দিন পিজি থেকে দু’জন সার্জন গিয়ে শুধু আউটডোর করে আসেন। উত্তর শহরতলিতে বরাহনগর, পানিহাটি, নর্থ সাবার্বান-এর মতো কোনও স্টেট জেনারেলেই এক জনের বেশি সার্জন নেই। কোথাওই ইমার্জেন্সি অস্ত্রোপচার হয় না।

প্রশ্ন হল, কেন হেল্থ সার্ভিস শাখায় (জেলা হাসপাতাল, স্টেট জেনারেল হাসপাতাল, মহকুমা হাসপাতাল, ব্লক হাসপাতাল) স্পেশ্যালিস্টরা যোগ দিতে চাইছেন না? কেন মেডিক্যাল এডুকেশন সার্ভিসে (মেডিক্যাল কলেজগুলির জন্য) বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছেন?

একাধিক স্বাস্থ্যকর্তা এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের ব্যাখ্যা, বিশেষজ্ঞেরা জেলা হাসপাতালে কাজ করার থেকে মেডিক্যাল কলেজে পড়ানো সম্মানের মনে করেন। তা ছাড়া, হেল্থ সার্ভিসে এক জন স্পেশ্যালিস্ট ৪৫-৪৮ হাজার টাকায় যোগ দেন। সেখানে শহরের বেসরকারি হাসপাতালে সপ্তাহে চার দিন রোগী দেখা বা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে এর দ্বিগুণ রোজগার সম্ভব। হেল্থ সার্ভিস থেকে বহু স্পেশ্যালিস্ট মেডিক্যাল এডুকেশনে চলে যাচ্ছিলেন বলে সেটা বন্ধ করে দিয়েছিল স্বাস্থ্য দফতর। তাতেও হেল্থ সার্ভিসে যোগ দেওয়ার আগ্রহ কমেছে। এমডি-এমএস পাশ করে বিশেষজ্ঞদের তিন বছর জেলায় পরিষেবা দেওয়া বাধ্যতামূলক করেছে সরকার। এতেও অনেকে হেলথ সার্ভিসে আসতে চাইছেন না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

expert doctor
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE