Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

বিপজ্জনক বাড়ি ভেঙে দিতে শো‌-কজের চিঠি

গত সেপ্টেম্বরে উত্তর কলকাতার পাথুরিয়াঘাটা স্ট্রিটে একটি বিপজ্জনক বাড়ি ভেঙে দু’জনের মৃত্যু হয়। তার পরেই শহরের বুকে মাথা তুলে থাকা বিপজ্জনক বাড়ি নিয়ে পদক্ষেপ করতে নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। ওই ঘটনার আগেও কলকাতায় বহু বিপজ্জনক বাড়ি ভেঙেছে। কিন্তু পুর প্রশাসন সে ভাবে আমল দেয়নি।

ঝুরঝুরে: বাড়িটির ভেঙে পড়া অংশ। —নিজস্ব চিত্র।

ঝুরঝুরে: বাড়িটির ভেঙে পড়া অংশ। —নিজস্ব চিত্র।

অনুপ চট্টোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০১৭ ০১:৪১
Share: Save:

বিপজ্জনক বাড়ি ভাঙতে আইন হয়েছে আগেই। এ বার বিপজ্জনক বাড়ির মালিকদের কারণ দর্শানোর নোটিস পাঠাতে শুরু করল কলকাতা পুরসভা। তাতে বলা হচ্ছে, ‘আপনার বাড়িকে কেন কনডেম্ড (বসবাসের অযোগ্য) হিসেবে ঘোষণা করা হবে না, তার কারণ দেখান।’

শুধু বাড়ির মালিক নন, ওই বাড়ির অন্য বাসিন্দাদের কাছেও সেই নোটিসের প্রতিলিপি পাঠানো হচ্ছে। ১৫ দিনের মধ্যে ওই শো-কজের জবাব দিতে বলা হচ্ছে। শুক্রবার পুরসভার এক পদস্থ অফিসার এই খবর দিয়ে জানান, ১৫ দিনের মধ্যে পুরসভায় জবাব না পৌঁছলে ওই বাড়িকে ‘কনডেম্ড’ বলে ঘোষণা করে দেওয়া হবে। আপাতত উত্তর কলকাতার গোটা দশেক বাড়িতে ওই ধরনের নোটিস পাঠানো হয়েছে।

গত সেপ্টেম্বরে উত্তর কলকাতার পাথুরিয়াঘাটা স্ট্রিটে একটি বিপজ্জনক বাড়ি ভেঙে দু’জনের মৃত্যু হয়। তার পরেই শহরের বুকে মাথা তুলে থাকা বিপজ্জনক বাড়ি নিয়ে পদক্ষেপ করতে নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। ওই ঘটনার আগেও কলকাতায় বহু বিপজ্জনক বাড়ি ভেঙেছে। কিন্তু পুর প্রশাসন সে ভাবে আমল দেয়নি। বরং তাদের একটাই বুলি ছিল, বাড়িতে অনেকে বাস করেন। মানবিক কারণে তাঁদের সরিয়ে বাড়ি ভাঙা সম্ভব নয়। তাই বাড়ির হাল জেনেও কিছু করা যায়নি।

কিন্তু মানুষের জীবন বাঁচানোটা যে মানবিক কারণের চেয়েও বেশি জরুরি, পুর বোর্ডের কর্তাদের তা বোধগম্য হয় মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ পাওয়ার পরে। কী ভাবে সেই নির্দেশ কার্যকর করা যায়, তা নিয়ে হাইকোর্টের এক প্রাক্তন বিচারপতির নেতৃত্বে কমিটি তৈরি করা হয়। কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, বিপজ্জনক বাড়ি ভাঙতে নতুন আইন করতে হবে। সেই মতো একটি খসড়া বিল তৈরি হয়। গত মার্চে বিধানসভায় তা পাশ হয়ে যায়। এপ্রিলে পুরসভার বিল্ডিং আইনে নতুন ধারা ৪১২এ যুক্ত হয়। সেই আইন প্রয়োগে একটি ‘স্কিম’ তৈরি করে পুরসভা। শো-কজের নোটিস পাঠানোর মাধ্যমেই সেই নতুন আইন কার্যকর করার কাজ শুরু হলে বলে জানান বিল্ডিং দফতরের ইঞ্জিনিয়ারেরা।

বিপজ্জনক বাড়ি জানানো হয় কী ভাবে?

বিল্ডিং দফতরের এক আধিকারিক জানান, পুরসভার প্রতিটি ওয়ার্ডে কর্মরত ইঞ্জিনিয়ারেরা কোন বাড়ির কী হাল, তা নজরে রাখেন। কখনও বা বিপজ্জনক বাড়ির পাশে থাকা বাসিন্দারাও পুরসভার সংশ্লিষ্ট অফিসে বা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিকে বিষয়টি জানান। পুর ইঞ্জিনিয়ারেরা ওই বাড়ি পরীক্ষা করে ‘বিপজ্জনক’ কি না, তা চিহ্নিত করেন। এটাই রীতি। এর পরে ওই বাড়িতে ৪১১এ এবং বি ধারায় ‘বিপজ্জনক’ বলে নোটিস ঝোলানো হয়। এত দিন পর্যন্ত বিষয়টি এখানেই শেষ হয়ে যেত। এ বার যে নোটিস পাঠানো হচ্ছে, তা নতুন আইন, অর্থাৎ ৪১২এ ধারা অনুযায়ী। শো-কজের এই নোটিসকে ‘কনডেমড’ নোটিসও বলা হচ্ছে।

কিন্তু শো-কজ নোটিসের জবাব না মিললে কী করবে পুর প্রশাসন?

এক আধিকারিকের কথায়, কলকাতা পুর আইনের নতুন ৪১২এ ধারায় বলা হয়েছে, প্রথমে মালিককে ওই বাড়ি ভাঙার সুযোগ দেওয়া হবে। তিনি রাজি না হলে তা ভাঙার দায়িত্ব দেওয়া হবে ওই কাজে অভিজ্ঞ কোনও সংস্থা বা প্রতিনিধিকে। তবে প্রতিটি ক্ষেত্রেই বিপজ্জনক বাড়ি ভেঙে নতুন করে গড়ার সময়ে ১০০ শতাংশ অতিরিক্ত নির্মাণে ছাড় (ফ্লোর এরিয়া রেশিও) দেওয়া হবে।

যে শো-কজ নোটিস পাঠানো হয়েছে, তার জবাব না দিলে পুরসভা নিজে থেকেই বাড়িটিকে ‘বসবাসের অযোগ্য’ বলে ঘোষণা করে দেবে। তার পরে মালিককে বলা হবে, এক মাসের মধ্যে নতুন বিল্ডিংয়ের নকশা জমা দিতে। তা-ও না দিলে ধরে নেওয়া হবে, মালিক তাঁর বিপজ্জনক বাড়ি ভেঙে নতুন করে নির্মাণে অপারগ। তার পরেই অন্য কোনও সংস্থাকে দরপত্রের মাধ্যমে তার দায়িত্ব দেওয়ার কাজ শুরু করবে পুর প্রশাসন। আপাতত শো-কজ নোটিসের জবাবের অপেক্ষায় রয়েছে পুরসভা। শহর জুড়ে অন্তত হাজার তিনেক বিপজ্জনক বাড়ি রয়েছে। একে একে সব বাড়িকেই শো-কজের নোটিস ধরানো হবে বলে খবর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE