Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

নির্ভরশীল হতে ওঁদের যাত্রা শুরু

প্রকৃতি, সালোনি, কোমল, মুদিতা, উদিতি, অভিশ্রী এবং অংশুমান এঁরাই দক্ষিণ কলকাতার অভিজাত এলাকার ছোট্ট এই ক্যাফের প্রাণভোমরা। বিশেষত্ব যে, ওঁরা প্রত্যেকেই ডাউন সিনড্রোমের শিকার। কিন্তু সমস্ত প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে অতিথি আপ্যায়ন, ক্রেতার পছন্দ মতো খাবার ট্রেতে করে সাজিয়ে পরিবেশন করা, বিশেষ কিছু খাবার তৈরি করায় ধীরে ধীরে সিদ্ধহস্ত হয়ে উঠছেন ওঁরা।

উদ্যোগ: এ ভাবেই ক্যাফের কাজে হাত লাগাচ্ছেন ওঁরা। নিজস্ব চিত্র

উদ্যোগ: এ ভাবেই ক্যাফের কাজে হাত লাগাচ্ছেন ওঁরা। নিজস্ব চিত্র

জয়তী রাহা
শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০২:১০
Share: Save:

দরজা ঠেলে ক্যাফেতে ঢুকতেই এক মুখ হাসি নিয়ে এগিয়ে এলেন মিষ্টি একটি মেয়ে। পিছন পিছন আরও এক জন। শিশু সুলভ ভঙ্গিতে হাত ধরে নিয়ে গেলেন আসনের দিকে। দেখিয়ে বললেন— এটাই এখানে বসার সব থেকে ভাল জায়গা। প্রথম জন দিয়ে গেলেন রংচঙে মেনু বুক। অন্য এক জন নিয়ে এলেন ঠান্ডা জল।

প্রকৃতি, সালোনি, কোমল, মুদিতা, উদিতি, অভিশ্রী এবং অংশুমান এঁরাই দক্ষিণ কলকাতার অভিজাত এলাকার ছোট্ট এই ক্যাফের প্রাণভোমরা। বিশেষত্ব যে, ওঁরা প্রত্যেকেই ডাউন সিনড্রোমের শিকার। কিন্তু সমস্ত প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে অতিথি আপ্যায়ন, ক্রেতার পছন্দ মতো খাবার ট্রেতে করে সাজিয়ে পরিবেশন করা, বিশেষ কিছু খাবার তৈরি করায় ধীরে ধীরে সিদ্ধহস্ত হয়ে উঠছেন ওঁরা।

আরও পড়ুন: কেনাকাটা সেরে ভিড় জমছে মণ্ডপে

সব কাজেই খুঁতখুঁতে প্রকৃতি ভালবাসেন বেক করতে আর অতিথিদের ডেজার্ট পরিবেশন করতে। ক্যাফেতে আসা অতি‌থিদের নিজের পছন্দের জায়গায় নিয়ে গিয়ে বসাতে হাসিখুশি কোমলের বেশি আনন্দ। মুদিতা ভালবাসেন কফি বানিয়ে খাওয়াতে। এক মুখ হাসি নিয়ে সূর্যমুখী ফুলের মতোই উজ্জ্বল সালোনি সদাব্যস্ত অভ্যর্থনায়। পিৎজা বানাতে এবং পরিবেশন করতে ভালবাসেন অনর্গল বকে যাওয়া উদিতি। হাসিখুশি অভিশ্রী আর অংশুমান অতিথি দেখলেই এগিয়ে যান। তবে ওঁদের সাহায্য করতে কেউ না কেউ সব সময় আশপাশে থাকেন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এ দেশে চিকিৎসা এবং প্রশিক্ষণ সব দিকেই দিয়েই অবহেলিত ডাউন সিনড্রোম আক্রান্তেরা। পরিসংখ্যান বলছে, বিশ্বে প্রতি আটশো জনের এক জন ডাউন সিনড্রোমের শিকার। যেহেতু এটি জিনঘটিত তাই পুরো সারে না কখনওই। শিশু চিকিৎসক অপূর্ব ঘোষের মতে, ‘‘পাশ্চাত্যের দেশে ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্তদের অবস্থা এ দেশের তুলনায় অনেক ভাল। তার অন্যতম কারণ উন্নত প্রশিক্ষণ। যা এ দেশে মোটেও নেই। বিক্ষিপ্ত ভাবে কিছু থাকলেও তা পরিকাঠামো এবং প্রয়োজন কোনও দিকেই যথেষ্ট নয়। প্রশিক্ষণের জন্য স্কুল আছে ঠিকই, কিন্তু পরিকাঠামো আরও উন্নত হওয়া দরকার। আধুনিক প্রশিক্ষণ পেলে ওঁরা কিন্তু স্বনির্ভর হতে পারেন।’’

কী ভাবে হয়েছে ওঁদের এই যাত্রা? ক্যাফের কর্ণধার মিনু বুধিয়া বলেন, ‘‘ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্তদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা প্রায় নেই এ শহরে। তিন বছর আগে শারীরিক, মানসিক-সহ বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজটা শুরু করি। তখনই মনে হয়েছিল, ওঁদের স্বনির্ভরও করতে হবে। সেই ভাবনা থেকে এই উদ্যোগ।’’ এ জন্য চার মাস বিশেষ ট্রেনিং দেওয়া হয়েছে ওঁদের। খেলনা কাপ-ডিশ –সহ বিভিন্ন রান্নার উপকরণ, আনাজ প্রভৃতির সঙ্গে পরিচিতি ঘটানো হয়। সকাল ১১.৩০ থেকে রাত ন’টা পর্যন্ত খোলা ক্যাফেতে এই বিশেষ কর্মীরা আসেন তিনটি শিফ্‌টে। ছোট্ট ক্যাফেতে কাজে যাতে একঘেয়েমি না সে জন্য কোনও সন্ধ্যায় বসে গান, খেলা বা ক্যুইজ প্রতিযোগিতার আসর। ওঁরাও যোগ দেন। ক্যাফে শুরুর পরে এ বার প্রথম পুজো। এখনও ওঁরা সড়গড় হয়ে ওঠেননি। তাই পুজোর দিনে বন্ধ থাকবে ক্যাফে। — বলছিলেন মিনু।

সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধীদের একটি নির্দিষ্ট কোটা থাকলেও বেসরকারি ক্ষেত্রে এখনও সুযোগ কম, শহরের কয়েকটি শপিং মল ও কফি শপে ইদানীং এঁদের নিয়োগ শুরু হয়েছে। ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্তরাও সেই তালিকায় ঠাঁই পাচ্ছেন। আক্রান্তদের পরিবারের কাছে আপাতত এটাই আশার কথা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mentally challenged Down Syndrome Cafe
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE