একাকী, নিঃসঙ্গ বার্ধক্য ভরসার হাত না-খুঁজে এখন যান্ত্রিক উপকরণে আস্থা রাখতে চাইছে!
যৌথ পরিবার এখন ছোট থেকে আরও ছোট হওয়ায় আত্মীয়দের অনেকের সঙ্গেই যোগাযোগ রাখতে পারেন না প্রবীণ মানুষেরা। ছেলে-মেয়ে অধিকাংশই দূরে। আত্মীয়দের বিড়ম্বিত করবেন না বলে অনেক প্রবীণই নিজেদের মতো থাকেন। কিন্তু সমস্যা দেখা দেয় হঠাৎ বিপদ এলে। তখন মনে হয়, কেউ থাকলে সময় মতো জানানো যেত। নিদেনপক্ষে, হাসপাতালে তো নিয়ে যাওয়া যেত!
বিপদের খবরটুকু যথাস্থানে, সময় মতো পৌঁছতে কলকাতা ও বৃহত্তর কলকাতার প্রবীণদের একটা বড় অংশ এখন যন্ত্রের মুখাপেক্ষী। তাঁদের কব্জিতে বাঁধা থাকছে ‘ইমার্জেন্সি স্মার্ট ওয়াচ’ বা বাড়িতে থাকছে ‘ইমার্জেন্সি রেসপন্স ডিভাইস’। যাতে বিপদে পড়া মাত্র একটি বোতাম টিপে অন্তত খবরটা দেওয়া যায়। প্রবীণদের বিভিন্ন রকম পরিষেবা দেওয়া একাধিক সংস্থা এই উপকরণগুলির ব্যবস্থা করছে।
এমনই একটি সংস্থা ২০১৫ থেকে ‘ইমার্জেন্সি স্মার্ট ওয়াচ’ পরিষেবা চালু করেছে কলকাতা, সল্টলেক ও নিউ টাউনে। বড় ডায়ালের একটি ঘড়ি। কব্জিতে লাগালে ব্যবহারকারী কোন জায়গায় আছেন, তা জানার পাশাপাশি সরাসরি সংস্থার কন্ট্রোল রুমে কথা বলা যায় এবং বোতাম টিপলেই কন্ট্রোল রুমে বেজে ওঠে বিপদঘণ্টি। সংস্থার তরফে অপ্রতিম চট্টোপাধ্যায় জানালেন, তাঁদের কন্ট্রোল রুমে আছেন ১৬ জন অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্মী। খবর পাওয়া মাত্র তাঁরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান অ্যাম্বুল্যান্স-সহ। শুধু তা-ই নয়, রোজ গ্রাহকদের ফোন করে তাঁদের খবর নেওয়া হয়। গোটা পরিষেবার খরচ মোটামুটি মাসে ২৮০০-৩৫০০ এর মধ্যে।
সকলে একটি ব্যাপারে একমত, পরিষেবা যেহেতু টাকার বিনিময়ে মিলছে, তাই কাউকে অসুবিধায় ফেলছেন এমন ভেবে তাঁরা আত্মগ্লানিতে ভোগেন না। তা ছাড়া সপ্তাহে এক দিন যেহেতু অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্মীরা ওই প্রবীণদের বাড়ি এসে খোঁজ নেন, তাই এই বার্তাও যায় যে তাঁদের পাশে কেউ আছেন।
ঠাকুরপুকুরের ৬৬ বছরের মঞ্জুশ্রী দাস বলছেন, ‘‘ঘড়িটা আমার কাছে অন্ধের যষ্টির মতো।’’ যোধপুর পার্কের বাসিন্দা, ৭৮ বছরের গৌতম বসু ও তাঁর স্ত্রী ৭০ বছরের আত্রেয়ীদেবীও এই ঘড়ি নিয়েছেন। তাঁদের কথায়, ‘‘আমরা কলকাতা পুলিশের ‘প্রণাম’ পরিষেবাতেও নাম লিখিয়েছি। কিন্তু পুলিশ তো ন’মাস-ছ’মাসে এক বার খোঁজ নেয়। আমরা চাই কেউ নিয়মিত খোঁজ নিক।’’
দিল্লি, মুম্বই, পুণে বা বেঙ্গালুরুতে প্রবীণদের জন্য এমন পরিষেবা বছর পাঁচেক আগে থেকেই জনপ্রিয়। কলকাতায় তা খানিক দেরিতেই এসেছে। কিছু দিন আগে পর্যন্ত তা মূলত চিকিৎসা সংক্রান্ত পরিষেবা এবং দৈনন্দিন কিছু কাজে সাহায্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। ভবানীপুরের একটি সংস্থাও দিচ্ছে ‘ইমার্জেন্সি রেসপন্স ডিভাইস’ পরিষেবা। সংস্থার তরফে ইলিনা দত্ত জানালেন, এই যন্ত্রের মাধ্যমেও বিপদঘণ্টি বাজানো যাবে, কন্ট্রোল রুমে কথা বলা যাবে। ব্যবহারকারী কখনও পড়ে গেলে স্বয়ংক্রিয় ভাবে সংস্থার কন্ট্রোল রুমে বেজে উঠবে বিপদঘণ্টি।
অর্থ দিয়ে কেনা পরিষেবাই ক্রমশ এখন বার্ধক্যের প্রহরীর ভূমিকায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy