Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

গ্রিল কেটে শিল্পীর বাড়িতে চুরি

দোতলায় চারটি ঘরের মধ্যে তিনটিতে ঘুমোচ্ছিলেন বাড়ির লোকজন। ততক্ষণে অনায়াসে একতলার একটি ঘরের জানলার পাল্লা খুলে, গ্রিল কেটে ভিতরে ঢুকেছে দুষ্কৃতীর দল। এর পরে একতলার সেই ঘর এবং দোতলার যে ঘরে কেউ ছিলেন না, সেখান থেকে চুরি করে চম্পট দেয় তারা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০২:৩২
Share: Save:

দোতলায় চারটি ঘরের মধ্যে তিনটিতে ঘুমোচ্ছিলেন বাড়ির লোকজন। ততক্ষণে অনায়াসে একতলার একটি ঘরের জানলার পাল্লা খুলে, গ্রিল কেটে ভিতরে ঢুকেছে দুষ্কৃতীর দল। এর পরে একতলার সেই ঘর এবং দোতলার যে ঘরে কেউ ছিলেন না, সেখান থেকে চুরি করে চম্পট দেয় তারা।

সোমবার কাকভোরে উঠতেই বন্ধ থাকা দরজা খোলা দেখে প্রথমে সন্দেহ হয় বাড়ির লোকজনের। এর পরেই তাঁরা দেখেন নগদ-সহ চুরি গিয়েছে প্রায় ২ লক্ষাধিক টাকার সামগ্রী। প্রবীণ সেতারশিল্পী মণিলাল নাগের মতো বিশিষ্ট শিল্পীর বাড়িতে এমন দুঃসাহসিক চুরির ঘটনায় রীতিমতো আতঙ্কিত ওই পরিবার।

বিটি রোডে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের অদূরে কলকাতা পুরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডে গোবিন্দ মণ্ডল লেনে শিল্পীর তিনতলা বাড়ি। চারদিকে পাঁচিল, সামনে-পিছনে লোহার দরজায় তালা দেওয়া থাকে। তার পরেও এমন ঘটনায় পুলিশি নজরদারি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বাসিন্দারা। তাঁদের অভিযোগ, বিটি রোডে রাতে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ কিংবা পেট্রোলিং থাকলেও পাশে ১ নম্বর ওয়ার্ডের অলিগলিতে রাতে তো বটেই, দিনেও কোনও পুলিশি নজরদারি চোখে পড়ে না।

তদন্তকারীদের অনুমান, রবিবার রাত ২টো থেকে ভোর ৫টার মধ্যে ওই চুরির ঘটনা ঘটে। ওই পরিবারের তরফে জানানো হয়েছে, ৩টি মোবাইল, ল্যাপটপ, নোটবুক, গয়না ও নগদ ৩৫ হাজার টাকা খোয়া গিয়েছে। মণিলালবাবুর পুত্রবধূ মধুমিতা নাগ জানান, তাঁরা রবিবার রাতে দেড়টা নাগাদ ঘুমিয়েছিলেন। ভোরে পাঁচটা নাগাদ উঠতেই তাঁর নজরে পড়ে দো’তলার মূল দরজা খোলা। তিনি প্রথমে ভেবেছিলেন পরিবারের কেউ হয়তো ঘুম থেকে উঠে নীচে নেমেছেন। কিন্তু নীচে নেমে দেখেন একতলার মূল দরজা ও কোল্যাপসিব্‌ল গেটও খোলা, নীচে পড়ে রয়েছে তালা। এর পরে দেখা যায় একতলার পিছনের দিকের ঘরের জানলার গ্রিল সমেত পাল্লা উধাও, সারা ঘর লণ্ডভণ্ড, আলমারির পাল্লা খোলা। দেখা যায় আলমারির ভিতর থেকে উধাও সমস্ত গয়না, বিভিন্ন নথি ছিল চারদিকে ছড়ানো-ছেটানো অবস্থায়। এমনকী শো-কেস থেকে উধাও হয়ে গিয়েছে প্রবীণ সেতারবাদকের বিভিন্ন স্মারকও। এ দিন ভোরে পরিবারের তরফে প্রথমে ফোন করা হয় লালবাজারেই। সেখান থেকে খবর যায় কাশীপুর থানায়। থানার ওসি-কে নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছন ডিসি (নর্থ) শুভঙ্কর সিংহ সরকার।

সেতারশিল্পীর কন্যা শিল্পী মিতা নাগ বলেন, ‘‘কাগজে চুরি-ডাকাতির খবর পড়েছি। কিন্তু নিজের বাড়িতে এমনটা হবে ভাবতে পারছি না। খুব আতঙ্কে রয়েছি। নিরাপত্তা কোথায়? কোন ভরসায় বাড়ির লোকজনদের রেখে বাইরে কাজে যাব?’’

পুলিশ সূত্রে খবর, জানলার খোলা পাল্লা ও গ্রিল বাড়ির পিছন দিকে রেখে গিয়েছে দুষ্কৃতীরা। কিন্তু যে ভাবে জানলার পাল্লা চাড় দিয়ে খোলা হয়েছে এবং দরজার ছিটকিনি ভাঙা হয়েছে, তাতে শব্দ হওয়ার কথা। মণিলালবাবুর পরিবারের অবশ্য দাবি, কেউ কোনও রকম শব্দ শুনতে পাননি। পরিবারের তরফে জানানো হয়েছে, মার্চ-এপ্রিল মাসে শিল্পীর উপহার পাওয়া একটি বুদ্ধমূর্তিও চুরি হয়। একটি ছেলেকে মূর্তি নিয়ে বেরোতে দেখে ধাওয়া করেছিলেন তাঁরা। কিন্তু ছেলেটিকে ধরতে পারেননি। এ দিন পুলিশকে সেই ঘটনাও জানানো হয়েছে।

এলাকাবাসীদের অভিযোগ, একে তো পুলিশি নজরদারি নেই। তার উপরে কেউ যদি আওয়াজ পেয়ে ঘুম ভেঙে উঠে পড়তেন, তাহলে আরও বড়সড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারত।

কলকাতা পুলিশের এক শীর্ষকর্তা অবশ্য দাবি করেন, এলাকায় নজরদারি ব্যবস্থা যথেষ্টই মজবুত। তবে নিশ্চিত ভাবেই ওই চুরির ঘটনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। দ্রুত দুষ্কৃতীদের ধরা হবে। পরিচিত কারও সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতেই পেশাদার দুষ্কৃতীরা ওই ঘটনা ঘটিয়েছে বলে অনুমান পুলিশের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE