Advertisement
০৮ মে ২০২৪

সল্টলেকে টিনটিন, দুষ্কৃতীদের হাত থেকে বাঁচাল কিশোরীকে

দু’জন হাত ধরে তাকে টানতে টানতে নিয়ে যাচ্ছে। আর এক জন পেছন থেকে চেপে ধরেছে তার মুখ। দম বন্ধ করা সেই হাতের ফাঁস থেকে এক টুকরো শব্দও উচ্চারণ করতে পারছিল না বছর আঠেরোর কিশোরী। গায়ের সমস্ত শক্তি দিয়েও তিন জনের সঙ্গে এঁটে উঠতে পারছিল না সে। টেনেহিঁচড়ে যে করেই হোক দুষ্কৃতীরা তাকে নিয়ে যাবেই পাশের নির্মীয়মান এক আবাসনের ভেতর।

সল্টলেকে টিনটিনের ছবি তুলেছেন সৌভিক দে।

সল্টলেকে টিনটিনের ছবি তুলেছেন সৌভিক দে।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ১২:৫১
Share: Save:

দু’জন হাত ধরে তাকে টানতে টানতে নিয়ে যাচ্ছে। আর এক জন পেছন থেকে চেপে ধরেছে তার মুখ। দম বন্ধ করা সেই হাতের ফাঁস থেকে এক টুকরো শব্দও উচ্চারণ করতে পারছিল না বছর আঠেরোর কিশোরী। গায়ের সমস্ত শক্তি দিয়েও তিন জনের সঙ্গে এঁটে উঠতে পারছিল না সে। টেনেহিঁচড়ে যে করেই হোক দুষ্কৃতীরা তাকে নিয়ে যাবেই পাশের নির্মীয়মান এক আবাসনের ভেতর।

আর গোটাটাই টিনটিনের চোখের সামনে ঘটে যাচ্ছিল। রাগে ফুঁসে উঠছিল সে। আর সেই সঙ্গে ভয়ানক চিত্কার। নিস্তব্ধ রাত, অথচ টিনটিনের তর্জন-গর্জনে যেন ফেটে পড়ার যোগাড় চার দিক। গর্জে উঠে তিন যুবকের দিকে তেড়ে যাচ্ছে মাঝে মাঝে। একের পর এক বাড়ির দরজা-জানলা খুলে যেতে থাকে। টিনটিনের টানা চিত্কারের কারণ খুঁজে দেখতে ছুটে আসেন তাঁদের অনেকেই। শেষে দুষ্কৃতীদের হাত থেকে রক্ষা পায় দ্বাদশ শ্রেণির ওই ছাত্রী। ধরা পড়ে তিন দুষ্কৃতীও।

এই টিনটিন যদিও বেলজিয়ান সাহেব জর্জ রেমি বা অ্যার্জে-র জনপ্রিয় চরিত্র নয়। তবে, শনিবারের রাতের পর থেকে এই টিনটিনও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। অনেকেই তার সঙ্গে দেখা করতে আসছে। আর কিশোরীর বাবা-মা তো টিনটিনের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। বিধাননগরের পুলিশ কমিশনারেট যা পারেনি সামান্য এক নেড়ি কুকুর টিনটিন তা করে দেখিয়েছে। আর তার জেরে এখন সকলের নয়নের মণি হয়ে উঠেছে সে। ঘটনাস্থল সল্টলেকের ডিডি ব্লক। অফিস পাড়া হিসেবেই বেশি পরিচিত এই এলাকা। তবে তার মধ্যে একটি অংশে আবাসিক প্লটও রয়েছে।

কী হয়েছিল ওই দিন?

রাত তখন পৌনে ১১টা। বইমেলা থেকে ফিরে টিনটিনকে নিয়ে হাঁটতে বেরিয়েছিল ওই কিশোরী। বাড়ির পিছন দিকের রাস্তায় সখের পোষ্যকে নিয়ে ঘুরছিল সে। রাস্তায় টিম টিম করে আলো জ্বলছে। প্রতিবেশীরাও তখন অনেকে জেগে। কাছের এক অনুষ্ঠানগৃহে তখনও উত্সবের আবহ। আচমকাই অন্ধকার থেকে এক যুবক এসে তার মুখ চেপে ধরে। বাকি দু’জন তাকে টেনে নিয়ে যেতে থাকে কাছের এক নির্মীয়মান আবাসনের দিকে। আর তখনই চিত্কার করতে শুরু করে টিনটিন। গর গর আওয়াজের সঙ্গে ডাক ছেড়ে চিত্কার করতে থাকে সে। টিনটিনের টানা চিত্কার শুনে উপরের জানলা দিয়ে মেয়েকে দেখার চেষ্টা করেন তাঁর বাবা। মেয়ের মুখে হাত-চাপা দিয়ে টেনে নিয়ে যাচ্ছে তিন জন! এর পরই তিনি সিঁড়ি দিয়ে নীচে নেমে আসেন। কিন্তু, বেরোবেন কী করে? মেয়ে বাইরে থেকে তালা দিয়ে হাঁটতে বেরিয়েছিল যে! এর পর তিনিও চিত্কার শুরু করে প্রতিবেশীদের ডাকতে থাকেন। টিনটিনের চিত্কার প্রতিবেশীরা আগেই শুনতে পেয়েছিলেন। তা শুনে বাইরে বেরিয়ে আসেন অনেকে। কিন্তু, কিশোরীর বাবার চিত্কারে তাঁরা দৌড়ে ঘটনাস্থলে যান। বিয়েবাড়ির নিরাপত্তা রক্ষী-সহ বেশ কয়েকজন দোকানদার ছুটে আসতেই তিন দুষ্কৃতী পালিয়ে যায়।

খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। পরে ওই কিশোরী পুলিশের সঙ্গে নির্মীয়মান আবাসনে গিয়ে দুই দুষ্কৃতীকে শনাক্ত করে। অন্য দুষ্কৃতীকে ওই রাতেই উল্টোডাঙা স্টেশন থেকে গ্রেফতার করা হয়। কিশোরীর মা বলেন, ‘‘অবশ্যই টিনটিনের কারণে দুষ্কৃতীদের ধরা সম্ভব হল।’’ ধৃতদের সকলের বয়স ২০ থেকে ২৫-এর মধ্যে। তাদের নাম তাপস দাস, দীপঙ্কর মণ্ডল এবং অতনু মণ্ডল। রবিবার তাদের আদালতে তোলা হলে ধৃতদের জেল হেফাজতের নির্দেশ হয়। তবে, মিনিট কুড়ির ওই ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, সল্টলেকের নিরাপত্তা ও নজরদারির ফাঁকটিকে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, ঘটা করে কমিশনারেট তৈরি করে কোনও লাভই হয়নি। নজরদারি সেই তিমিরেই পড়ে রয়েছে।

আরও খবর
• স্টেশনে নেমে কুকুর দেখে, মনিব নেই

সল্টলেকের একাধিক জায়গায় নির্মাণ কাজ চলছে। সেখানে অসংখ্য বহিরাগত কর্মসূত্রে থাকেন। এর আগেও কয়েকটি ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, এই সব বহিরাগতদের একটি অংশ বিভিন্ন অপরাধ মূলক কাজে জড়িয়ে পড়েছেন। এমনকী, বহিরাগত দুষ্কৃতীরাও অনেক ক্ষেত্রে অপরাধের পরে ওই সব নির্মীয়মান বাড়িতে আশ্রয় নেয় বলেও অভিযোগ। এ ক্ষেত্রেও যখন দুষ্কৃতীদের খোঁজে নির্মীয়মান বাড়িতে পুলিশ ও কিশোরীর পরিবার গিয়েছিল, দেখা গিয়েছে ২০-৩০ বছরের একাধিক শ্রমিক সেখানে তাকেন। যাঁদের অধিকাংশই মদ্যপ ছিল বলে অভিযোগ।

ওই কিশোরীর পরিবার যদিও পুলিশের ভূমিকা নিয়ে খুশি। খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশ পদক্ষেপ করেছে। যদিও নজরদারি ও নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ প্রসঙ্গে বিধাননগরের এক পুলিশ কর্তার দাবি, নিরাপত্তা ব্যবস্থা কিংবা নজরদারি আগের থেকে অনেক বাড়ানো হয়েছে। যার ফলে চুরি, ছিনতাইয়ের প্রবণতা আগের থেকে কমানো সম্ভব হয়েছে। তবে এটা ঠিক, নির্মীয়মান বাড়ির ক্ষেত্রে বার বার বলা সত্ত্বেও নির্দেশ মানছেন না একাংশ। নির্দেশ না মানলে পুলিশ আরও কড়া পদক্ষেপ করবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE