রজনী বন্দ্যোপাধ্যায় ও রূপালি সাহা
দায়িত্বের টানাপড়েনে আবাসনগুলি হয়ে উঠছে ডেঙ্গির আঁতুড়ঘর!
শনিবার ফের শহরের দুই প্রান্তের দু’টি আবাসন থেকে দু’জন ডেঙ্গি আক্রান্তের মৃত্যুর খবর মেলে। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, মৃতা রূপালি সাহা (৪৬) বাগুইআটির বাসিন্দা ও রজনী বন্দ্যোপাধ্যায়ের (৪১) বাড়ি নেতাজিনগরে। পাশাপাশি, জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে দক্ষিণ দমদমের বাসিন্দা ঝন্টু বিশ্বােসর (২৭)।
বাগুইআটির সাহাপাড়ার একটি আবাসনের বাসিন্দা রূপালিদেবী গত রবিবার থেকে জ্বরে ভুগছিলেন। তাঁর স্বামী জয়ন্ত সাহা জানান, ক’দিন আগে তেঘরিয়ার নার্সিংহোমে ভর্তি করা হয় তাঁকে। অবস্থার অবনতি হলে শুক্রবার স্থানান্তরিত করা হয় সল্টলেকের একটি বেসরকারি হাসপাতালে। সেখানেই এ দিন সকালে মারা যান তিনি।
দক্ষিণ দমদমের প্রমোদনগরের বাসিন্দা ঝন্টু বিশ্বাসেরও জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় এ দিন। পরিবার সূত্রে খবর, ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে জ্বরে ভুগছিলেন তিনি। প্রথমে তাঁকে বরাহনগর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বৃহস্পতিবার ঝন্টুবাবুকে স্থানান্তরিত করা হয় আরজিকরে। শুক্রবার রাতে সেখানেই মারা যান তিনি।
এ দিকে, নেতাজিনগরের আর একটি আবাসনের বাসিন্দা রজনীদেবী গত মঙ্গলবার থেকে বাইপাসের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। পরিবার সূত্রে খবর, কয়েক দিন আগে রজনীদেবীর জ্বর হয়েছিল। স্থানীয় চিকিৎসকের পরামর্শে তিনি হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখানেই এ দিন মৃত্যু হয় তাঁর। তাঁর মেয়েও ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে ওই হাসপাতালে ভর্তি। ওই আবাসনের আরও ছ’জন বাসিন্দাও ডেঙ্গিতে আক্রান্ত বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে।
প্রসঙ্গত কলকাতা ও আশপাশের এলাকায় প্রতি দিনই ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। জানুয়ারি থেকে পুর এলাকায় ডেঙ্গি প্রতিরোধ কর্মসূচি নেওয়া হলেও সল্টলেক থেকে কসবা কয়েকশো মানুষ ডেঙ্গিতে কাবু। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, আবাসন এলাকায় ডেঙ্গির দাপট বেশি।
শহরের বহু আবাসনের বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, আবাসনের ভিতরের রাস্তা ও আশপাশের এলাকা পরিচ্ছন্ন রাখার দায়িত্ব কে নেবে, তা নিয়েই চলে বিস্তর টানাপড়েন। যার জেরে অধিকাংশ সময়ে পরিচ্ছন্নতা ও সচেতনতা প্রসারেই খামতি থেকে যায়। যেমন কসবার একটি আবাসনের এক বাসিন্দা জানাচ্ছেন, ‘‘আবাসনের মাঠে জল জমে থাকে। পুরকর্তাদের বললে তাঁরা জানান, এটি কেআইটি-র দায়িত্ব। কিন্তু কেআইটি কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না।’’ বেলগাছিয়ার একটি আবাসনের এক বাসিন্দা জানান, রাস্তাঘাট সাফ করা হলেও আবাসনের ভিতরের হাল খুব খারাপ। কারণ তা পুরসভা দেখে না। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘ডেঙ্গির প্রকোপ তো আবাসনের ভিতর আটকে থাকবে না! এই দড়ি টানাটানিতে ভুগতে হচ্ছে আমাদের মতো সাধারণ মানুষকে।’’
সংশ্লিষ্ট পুরকর্তাদের অবশ্য আশ্বাস, আতঙ্কের কোনও কারণ নেই। এলাকাকে ডেঙ্গি-মুক্ত করতে তৎপরতার সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) অতীন ঘোষ বলেন, ‘‘কোনও এলাকায় কেউ ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলে হাসপাতাল থেকে সংশ্লিষ্ট পুরসভায় এবং স্বাস্থ্য দফতরে খবর পাঠানো হয়। পুরসভার র্যাপিড অ্যাকশন ফোর্স সেই এলাকা পরিদর্শন করে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’’ পূর্ত দফতর কিংবা কেআইটি-র অধীনে কোনও আবাসন থাকলে তার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট দফতরের। কোনও বেসরকারি আবাসনের কমিটি পুরসভায় নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে আবেদন জানালেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান এক পুরকর্তা।
যদিও স্বাস্থ্য ভবনের কর্তারা জানান, ডেঙ্গি প্রতিরোধ নিয়ে বছরভর বিভিন্ন পুরসভার প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক হয়। সচেতনতার প্রচারের পাশাপাশি সাফাইয়ের দিকেও নজর দিতে বলা হয়। কিন্তু পুর এলাকার বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করা এবং আবাসনগুলির কমিটির সঙ্গে প্রয়োজনে বসে কথা বলার দায়িত্ব পুরকর্তাদের নিতে হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy