Advertisement
১৮ মে ২০২৪

জলসঙ্কট, তবু জলেই যাচ্ছে জল

জল নষ্ট হওয়াটাই যেন এখানে দস্তুর! গরম পড়তে না পড়তেই যথারীতি জলসঙ্কট দেখা দিয়েছে শহরের নানা প্রান্তে। পুরসভা বলছে, জোগান রয়েছে আগের মতোই। তবে সে জল যাচ্ছে কোথায়? উত্তরটাও জানা। অপচয়ও যে হচ্ছে আগের রীতিতেই।

জলাঞ্জলি: অপচয়ের জলে ভাসছে পথ। সুবোধ মল্লিক স্কোয়ারে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

জলাঞ্জলি: অপচয়ের জলে ভাসছে পথ। সুবোধ মল্লিক স্কোয়ারে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

অনুপ চট্টোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০১৭ ০১:৩৪
Share: Save:

জল নষ্ট হওয়াটাই যেন এখানে দস্তুর!

গরম পড়তে না পড়তেই যথারীতি জলসঙ্কট দেখা দিয়েছে শহরের নানা প্রান্তে। পুরসভা বলছে, জোগান রয়েছে আগের মতোই। তবে সে জল যাচ্ছে কোথায়? উত্তরটাও জানা। অপচয়ও যে হচ্ছে আগের রীতিতেই।

পুরসভার সূত্রে জানা গিয়েছে, দৈনিক ১৫৪ কোটি ৮১ লক্ষ লিটার জল তৈরি হয় কলকাতায়। লিকেজ, কল খোলা থাকা ইত্যাদি কারণে অপচয় হয় ৩৬ কোটি ৬৪ লক্ষ লিটার। যা তৈরি হওয়া মোট পানীয় জলের প্রায় সাড়ে ২৩ শতাংশ। পুরসভার জল সরবরাহ দফতরেরই দেওয়া হিসেব অনুসারে যে পরিমাণ জল প্রতিদিন অপচয় হচ্ছে, তা তৈরি করতে খরচ হয় প্রায় ১১ লক্ষ টাকা। অর্থাৎ, মাসে ৩ কোটি ৬০ লক্ষ টাকার জল অপচয় হচ্ছে। এ ভাবেই তা চলছে বছরের পর বছর।

কেন এই হাল?

পুরসভার আমলাদের অনেকেই মনে করেন, এর মূল কারণ নজরদারির অভাব। শহরে প্রায় ২০ হাজারের মতো স্ট্যান্ড কল রয়েছে। ওই ধরনের অনেক কলেই অযথা জল পড়ে যায়। পুরসভা থেকে প্রতিদিন গাড়ি করে বিভিন্ন এলাকায় পানীয় জল সরবরাহ করা হয়। ওয়েলিংটন স্কোয়ারে মাটির নীচে পুরসভার যে জলাধার রয়েছে, সেখান থেকে পাম্পের সাহায্যে জল তুলে গাড়িতে ভরা হয়। এমনও দেখা গিয়েছে, নীচে জলের গাড়ি নেই, অথচ বড় কল থেকে ক্রমাগত জল মাটিতে পড়ছে। আবার অনেক ক্ষেত্রে গাড়ি থেকে জল উপচে ভেসে যাচ্ছে চাপরাশ। এ ছাড়া পাইপ ফেটে জল পড়ে যাওয়ার ঘটনার তো অন্ত নেই। তা চলেছেই অধিকাংশ এলাকায়। পুরসভার অন্দরেই অভিযোগ, টানা তিন-চার দিন লিকেজ হলেও অনেক ক্ষেত্রে তা নজরে আসছে না। ফলে অপচয় বেড়েই চলেছে।

বর্তমানে কলকাতা শহরে যে জল সরবরাহ হয়, তা মূলত পলতা, উত্তর কলকাতায় গঙ্গাপাড়ে মায়ের ঘাট, দক্ষিণে গার্ডেনরিচে গঙ্গা থেকে নিয়ে পরিস্রুত করা হয়। কলকাতা পুরসভার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, কলকাতায় যে পরিমাণ জল তৈরি হয়, তা শহরের জনসংখ্যার হিসেবে যথেষ্ট। কিন্তু এ ভাবে জল অপচয় হলে কী ব্যবস্থা নেবে পুর প্রশাসন? মেয়র জানান, অপচয় রুখতে ইতিমধ্যেই একাধিক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে পুরসভা।

কী সেই কর্মসূচি? পুরসভার এক ইঞ্জিনিয়ার জানান, শহরের জনসংখ্যা প্রায় ৪৫ লক্ষ। এ ছাড়া প্রতিদিন ১৫ লক্ষ লোক বাইরে থেকে কলকাতায় আসা-যাওয়া করেন। সেই হিসেবে প্রায় ৬০ লক্ষ লোক শহরে পানীয় জল খায়। জাতীয় স্ট্যান্ডার্ড অনুসারে জনপ্রতি ১৩৫ লিটার জল লাগে। প্রায় আড়াই লক্ষ বাড়িতে জলের সংযোগ দিয়েছে পুরসভা। কিন্তু দেখা গিয়েছে, অনেক বাড়িতেই জনপ্রতি ২০০ লিটারেরও বেশি জল ব্যবহার করা হয়। যা প্রয়োজনের তুলনায় বেশি বলেই মনে করছেন কলকাতা পুরসভার ইঞ্জিনিয়ারেরা। বাড়তি জলের ব্যবহার অপচয়েরই সামিল বলে মনে করেন তাঁরা। তাঁদের ধারণা, ওই ধরনের অপচয় বন্ধ করতে পারলে আরও ৫ কোটি ৬০ লক্ষ লিটার জল বাঁচানো সম্ভব হবে।

কী করছে পুরসভা?

মেয়রের কথায়, জল অপচয় যে বন্ধ করা দরকার, সে ব্যাপারে সচতেন করতে হবে নাগরিকদের। সেই ধরনের কাজ শুরু করছে পুরসভা। এ ছাড়া উত্তর কলকাতার ১ থেকে ৬ নম্বর ওয়ার্ডে প্রতিটি বাড়িতে মিটার বসানো হচ্ছে। কে কত পরিমাণ জল নিচ্ছে, তার হিসেব দেখার জন্য। পুরসভা সূত্রের খবর, মিটার বসানোর জন্য শুধু ওই ৬টি ওয়ার্ডেই খরচ হচ্ছে প্রায় ২০০ কোটি টাকা। কিন্তু তাতে কী কাজ হবে?

এ বিষয়ে পুরসভার এক আমলার বক্তব্য, ‘‘মিটার বসিয়ে কারও বাড়িতে পানীয় জল নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। একমাত্র জলের জন্য চার্জ দিতে হলে অপচয় ঠেকানো যেত। কিন্তু বর্তমান সরকার জলের উপরে কর করতে চায় না। তাই মিটার বসানোর টাকাও ‘জলে’ যাবে বলেই তাঁর ধারণা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Drinking water Crisis
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE