Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

অস্ত্রোপচার ‘ফ্রি’, শুশ্রূষার ভার কার

২০১২ সালে মেরুদণ্ডে চোট পান বিশ্বনাথবাবু। তার পরে পাঁচটি হাসপাতালে একাধিক অস্ত্রোপচার হয়েছে তাঁর। তবে সোজা হয়ে বসা আর হয়নি। স্ত্রী সবিতা জানালেন, পুকুরে মুখ ধুতে গিয়ে পড়ে যান বিশ্বনাথ। তা থেকেই পিঠে চোট পান।

অসহায়: বাড়িতে বিশ্বনাথ পাল। নিজস্ব চিত্র

অসহায়: বাড়িতে বিশ্বনাথ পাল। নিজস্ব চিত্র

নীলোৎপল বিশ্বাস
শেষ আপডেট: ১৫ মার্চ ২০১৮ ০১:৪০
Share: Save:

গত ছ’বছর ধরে তিনি বিছানা-বন্দি! শুয়ে থেকে থেকে হাত-পা অসাড় হয়ে এসেছে। বেডসোরও হয়েছে। সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা, একের পর এক অস্ত্রোপচার হলেও সম্পূর্ণ সুস্থ হননি বিমানবন্দর থানা এলাকার গঙ্গানগরের বাসিন্দা বিশ্বনাথ পালের। সরকারি হাসপাতালে এখন ওষুধ, পরীক্ষা-নিরীক্ষা, অস্ত্রোপচার, সবই বিনামূল্যে। কিন্তু অস্ত্রোপচার পরবর্তী পরিচর্যার ক্ষেত্রে পরিকাঠামো কেমন বা আদৌ আছে কিনা সেই প্রশ্ন তুলে দিয়েছে বিশ্বনাথবাবুর এই ঘটনা।

২০১২ সালে মেরুদণ্ডে চোট পান বিশ্বনাথবাবু। তার পরে পাঁচটি হাসপাতালে একাধিক অস্ত্রোপচার হয়েছে তাঁর। তবে সোজা হয়ে বসা আর হয়নি। স্ত্রী সবিতা জানালেন, পুকুরে মুখ ধুতে গিয়ে পড়ে যান বিশ্বনাথ। তা থেকেই পিঠে চোট পান।

বিশ্বনাথবাবুকে নিয়ে যেতে হয় মধ্যমগ্রাম হাসপাতালে। তবে সেখান থেকে তাঁকে বারাসত হাসপাতালে পাঠান চিকিৎসকেরা। বারাসত হাসপাতাল তাঁকে কলকাতার হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলে। অবশেষে বিশ্বনাথবাবুকে ভর্তি করানো হয় আর জি কর হাসপাতালে। সেখানে তাঁর মেরুদণ্ডের চোট ধরা পড়ে। তবে ওই হাসপাতালেও সম্পূর্ণ চিকিৎসা হয়নি। ১৯ দিন বাদে তাঁকে এসএসকেএম-এ ভর্তি করানোর পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা। সেখান সরানো হয় নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সেখানেই অস্ত্রোপচার হয় তাঁর। পরে তাঁকে বাড়ি ফিরিয়ে আনা হয়।

যদিও সেই ফিরে আসায় রোগমুক্তি ঘটেনি। চিকিৎসকেরা জানিয়ে দেন, ফিজিওথেরাপি ছাড়া সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। বিটি রোডে বনহুগলি ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অর্থোপেডিক্যালি হ্যান্ডিক্যাপড’-এ ভর্তি করানো হয় বিশ্বনাথকে। তবে সেখানেও অর্থাভাবে বেশি দিন থাকা হয়নি তাঁর।

সবিতাদেবী একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রাথমিক স্কুলে পড়ান। বললেন, ‘‘হাসপাতালে পুরুষ বিভাগে আমাকে থাকতে দেয় না। লোক রাখতে বেলা পিছু ৩০০ টাকা লাগে। আমাদের অত টাকা কই?’’ফের আরজিকর-এ নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানেও ভর্তি নেওয়া হয়নি।

বিছানায় শোয়া বিশ্বনাথ কান্না জড়ানো গলায় বললেন, ‘‘পুরো চিকিৎসা হওয়ার আগেই ফিরে আসতে হল। আর এক বার ভর্তি হয়ে পুরো চিকিৎসা করাতে চাই। আমার বিশ্বাস ফের সোজা হতে পারব।’’ শিরদাঁড়ায় জোর না থাকলেও তাঁর মনের জোর প্রবল। এখনও মনে হয়, কেউ সাহায্যে এগিয়ে এলে চিকিৎসা সম্ভব। সম্ভব সোজা হয়ে বসাও!

স্বাস্থ্য কর্তারা অবশ্য জানাচ্ছেন, রোগীর যে বিপুল চাপ সরকারি হাসপাতালগুলিকে সামলাতে হয়, তাতে এক জন রোগীকে শয্যা আটকে রেখে দেওয়া সম্ভব নয়। এক স্বাস্থ্য কর্তা জানান, ফিজিক্যাল মেডিসিন বিভাগে এলে বিশ্বনাথবাবুর চিকিৎসা আউটডোর ভিত্তিতে নিশ্চয়ই
হবে। কিন্তু বিশ্বনাথবাবুর স্ত্রীর প্রশ্ন, স্বামীকে এক দিন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার খরচই জোগাড় করতে পারেন না তিনি। নিয়মিত কী ভাবে নিয়ে যাবেন?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Patient Doctor
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE