Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
book review

‘জ্ঞান দিয়ে ভাঙো জাতের বেড়ি’

সাবিত্রীবাইয়ের সেই অভিজ্ঞতা প্রতিধ্বনিত হয়েছে আরও কত মেয়ের জীবনে। বাংলার প্রথম ম্যাট্রিক পাশ-করা মেয়েদের এক জন ছিলেন সরলা রায়।

—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

স্বাতী ভট্টাচার্য
শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০২৩ ১০:০১
Share: Save:

সংগ্রামী, সাহসী মেয়েদের কথা নবীনদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার একটি অভিনব উপায় উবাচ বইটি। এটি আসলে দু’মলাটের মধ্যে পঁয়ত্রিশটি পোস্টারের সঙ্কলন। সমাজের পরিচিত ছাঁচ ভেঙে মুক্তি খুঁজেছিলেন ভারতের যে মেয়েরা, তাঁদের কয়েক জনের ছবির সঙ্গে তাঁদেরই কথা থেকে উদ্ধৃতি নিয়ে তৈরি বাংলা পোস্টারগুলি। বইতে তার সঙ্গে সংযোজন হয়েছে উদ্ধৃতির ইংরেজি অনুবাদ, আর সেই সঙ্গে বাংলা ও ইংরেজিতে প্রত্যেকের সংক্ষিপ্ত জীবনী। এক-এক জন মেয়ের কথা পাশাপাশি দু’টি পাতায় ধরা রয়েছে। পোস্টারের ধর্মই হল ছবি এবং অল্প কথায় একটা গল্প বলা, যা আরও জানার আগ্রহকে উস্কে দেয়। এই বইয়ের পোস্টারগুলি সে কাজ করবে অতি চমৎকার ভাবে। ‘জ্ঞান দিয়ে ভেঙে দাও জাতের বেড়ি,’ উদ্ধৃতিটি রয়েছে ভারতের প্রথম স্কুলশিক্ষিকা সাবিত্রীবাই ফুলের ছবির পাশে। তিনি স্কুলে যাওয়ার সময়ে একটা বাড়তি শাড়ি নিয়ে যেতেন। রাস্তায় এত লোক কাদা ছুড়ত যে স্কুলে পৌঁছে কাপড় বদলাতে হত তাঁকে। পোস্টারটি দেখার পর পাঠকের কি ইচ্ছা করবে না তাঁর সম্বন্ধে আরও একটু জানতে?

সাবিত্রীবাইয়ের সেই অভিজ্ঞতা প্রতিধ্বনিত হয়েছে আরও কত মেয়ের জীবনে। বাংলার প্রথম ম্যাট্রিক পাশ-করা মেয়েদের এক জন ছিলেন সরলা রায়। পরে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মহিলা সদস্য হন। সেনেট হলের সিঁড়ি দিয়ে প্রথম বার যখন ওঠেন সরলা, তখন ছেলেরা চার দিক থেকে দুয়ো দিত, অনেকে মেঝেতে থুতু ফেলে বিরক্তি প্রকাশ করে। ১৯২০-র দশকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মুসলিম ছাত্রী ফজিলতুন্নেসা জোহা বোরখা ছেড়ে যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতেন, লোকে ইট-পাটকেল ছুড়ত তাঁকেও।

উবাচ: পোস্টারে মেয়েদের নানা স্বাধীনতার লড়াইয়ের কথা

সম্পা: শর্মিষ্ঠা দত্তগুপ্ত

৬০০.০০এবং

আলাপ, লা স্ত্রাদা

এই মেয়েরাও কি ‘স্বাধীনতা সংগ্রামী’ ছিলেন না? মানুষের মতো, নিজের মতো করে বাঁচার স্বাধীনতা আদায়ের লড়াই নানা ভাবে, নানা দিকে লড়তে হয়। প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার বা বীণা দাসের মতো মেয়েরা স্বাধীনতার জন্য হাতে অস্ত্র তুলেছিলেন, রেণুকা রায়, চন্দ্রপ্রভা শইকীয়ানীর মতো মেয়েরা মহাত্মা গান্ধীকে অনুসরণ করে সত্যাগ্রহে যোগ দিয়েছিলেন। মণিকুন্তলা সেন, বিমলা মাজী সামাজিক ন্যায় ও সাম্যের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে জন-আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। এঁদের সহজেই ‘নেত্রী’ বলে চিনে নেওয়া যায়। কম আলোচিত কেতকী দত্ত, রেবা মুহুরী বা আরতি সাহা, যাঁরা মঞ্চে, শিল্পে, খেলাধুলোয় আর সব মেয়েদের প্রবেশপথ তৈরি করে দিয়েছিলেন।

দলিত মেয়ে বাংলার চুনী কোটাল, তামিলনাড়ুর বামা, রূপান্তরকামী ক্রীড়াবিদ ওড়িশার দ্যুতি চাঁদ, তামিলনাড়ুর আন্দোলন কর্মী ও লেখক রেবতী— মাত্র কয়েকটি কথায় তাঁদের অপমান-জয়ের শক্তি প্রকাশ পেয়েছে। শর্মিষ্ঠা দত্তগুপ্ত এবং চান্দ্রেয়ী দে এই অবিস্ময়ণীয় মেয়েদের জীবন থেকে মণিমুক্তোর মতো কিছু কথা তুলে এনেছেন, যা কিশোরমনেও রেখা ফেলে যাবে।

একটা চার পাতার নিবন্ধের চেয়ে একটা ভাল পোস্টার অনেক বেশি মনে গেঁথে যায়। যেমন ইসমত চুঘতাইয়ের বুদ্ধিদীপ্ত মুখের পাশে এই কথাগুলি: “রোজ প্রার্থনা করতাম, ও আল্লা, আমাকে ছেলে করে দাও, যাতে ঘুড়ি ওড়ানোর জন্য আমাকে মার না খেতে হয়, যাতে আমি প্রাণভরে কাবাডি খেলতে পারি, আর নির্ভয়ে বাঁদরের পিছনে দৌড়তে পারি।” ঝকঝকে ছাপা আর কুশলী পুস্তক নির্মাণের গুণে বইটি সুদৃশ্যও বটে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

book review
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE