বাংলা বানান: রস ও রহস্য
প্রদীপ রায়গুপ্ত
২০০.০০
ঋতাক্ষর
মানুষ কেন বাংলা বানান ভুল করে? ভ্রমের অপার বৈচিত্রের দিকে তাকালে রাগ-বিরক্তি-হতাশার চেয়ে বিস্ময়ই বেশি জাগে। কেননা, বাংলা বানান নিয়ে সর্বজনগ্রাহ্য রীতি এখনও অনুপস্থিত, অনেক শব্দেরই দু’টি বানান প্রচলিত, উভয়েই ব্যাকরণগত ভাবে শুদ্ধ। অতএব, অজস্র বিকল্পকে চোখের সামনে থেকে সরিয়ে ফেলতে না পারলে ভ্রম এড়ানো সহজ হবে না। গত এক শতকে নানা প্রতিষ্ঠান— বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সংবাদপত্র— এ কাজে ব্রতী হয়েছে। প্রদীপ রায়গুপ্তের গবেষণা সেই ঐতিহ্যের অনুসারী। শব্দ ধরে ধরে তিনি বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, কোনও একটি বানান অন্য প্রচলিত বানানের চেয়ে কেন বেশি যুক্তিযুক্ত। শৈলেন্দ্র বিশ্বাস, হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়, জ্ঞানেন্দ্রমোহন দাস, রাজশেখর বসু, হেমচন্দ্র ভট্টাচার্য, সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়, বামনদেব চক্রবর্তী, মণীন্দ্রকুমার ঘোষ প্রমুখের এবং আনন্দবাজার পত্রিকা-র বিভিন্ন বানান গ্রন্থ ও অভিধান উল্লিখিত হয়েছে এ প্রসঙ্গে।
প্রদীপবাবুর আগ্রহ মূলত শব্দ নিয়ে। ‘ধাতু থেকে শব্দে’ প্রবন্ধে বলছেন, কোনও এক পত্রিকার সাব-এডিটর পথভ্রষ্ট হাতিকে ভাষিক উৎকর্ষ সাধনে ‘বেপথু’ করে দিয়েছিলেন! তাঁর জানা ছিল না, সংস্কৃত ‘বেপ্’ ধাতুর সঙ্গে ‘অথুচ্’ (অথু) প্রত্যয় যোগ করে তৈরি হয় ‘বেপথু’, যার অর্থ শিহরন বা কাঁপুনি। আবার, তাঁর সম্পাদিত জলার্ক পত্রিকায় এক অধ্যাপক রবীন্দ্রনাথ বিষয়ে প্রবন্ধ পাঠিয়েছিলেন, যেখানে অকারণেই ‘রাবীন্দ্রিক’-এর বদলে বার বার লেখা হয়েছিল ‘রৈবিক’। লেখককে বুঝিয়ে পারা যায়নি যে, ‘রবি’র সঙ্গে ‘ষ্ণিক’ প্রত্যয় যোগ করে ‘রৈবিক’ হয় না, বরং তাকে ভাঙলে পাওয়া যায় ‘রেবা’। ইদানীং, ব্যক্তি-স্বাধীনতার যুক্তিতে অনেকেই নিজের ইচ্ছেমতো বানান বা শব্দ লেখেন। এখানে প্রদীপবাবুর মন্তব্যটি অমূল্য— “অনৃষির ভুলকে কেউ আর্ষপ্রয়োগ বলে মেনে নেয় না।”
বইটির প্রথম ভাগে রয়েছে বাংলা বানান সংক্রান্ত এমনই আটটি প্রবন্ধ, যেখানে সংস্কৃত ব্যাকরণের ভিত্তিতে বাংলা শব্দের ব্যুৎপত্তি নিয়ে আলোচনা রয়েছে। দ্বিতীয় ভাগটিতে ‘গংগার তরংগে প্রাণের পদ্মা ভাসাইলাম রে’, ‘ঋষি ও কাঠবেড়া৯’, ‘সাক্ষী শুধু বিশালাক্ষ্মী’ শিরোনামে আরও অনেকগুলি প্রবন্ধ পাওয়া যাবে, কিঞ্চিৎ লঘু চালে লেখা, ব্যঙ্গ ও গল্পের মোড়কে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy