Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
Book Review

যেন শান্তিনিকেতনেরই অনায়াস স্মৃতিকথা

আশ্রমের কর্মী সুধাকান্ত রায়চৌধুরী এক বার পণ করেছিলেন, বাঘের মাংস খাবেন। বাঘের বিরুদ্ধে মানবজাতির বার্তা হিসাবে, নীতিগত তাগিদে এই সিদ্ধান্ত।

—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০২৪ ০৬:৩৫
Share: Save:

এ এক জটিল প্রশ্ন, কাকে বলে ব্যক্তিগত প্রবন্ধ, আর কোনটি তা নয়। ব্যক্তি তো তার বড় পরিসরেই গাঁথা, ব্যক্তির কথা তো সেই পরিসরেরও কথা। তাই লেখকের শৈশবের শান্তিনিকেতন ‘চেনা’ লেখক ও লেখাকে ছাপিয়ে গিয়ে অনায়াসে হয়ে উঠতে পারে শান্তিনিকেতনেরই স্মৃতিকথা। এক অন্য সময়ের স্মৃতি— যখন শান্তিনিকেতনের উৎসবপোশাকে সাদা ধুতি কিংবা শাড়ির পাড়ে ‘সামান্য রং’ থাকলেও থাকতে পারত, যখন হাততালি না দিয়ে উদাত্ত গলায় বলে ওঠা যেত ‘সাধু সাধু সাধু’, যখন ঘুমন্ত ছাত্রকে ডাকতে এসে শিক্ষক নন্দলাল বসু তাকে না জাগিয়ে বরং মুখের উপর এসে পড়া রোদ আড়াল করার ব্যবস্থা করে ধীরে চলে যেতেন, বাইরে থেকে ডাক আসত ‘চিঠি আছে’। আশ্রমের কর্মী সুধাকান্ত রায়চৌধুরী এক বার পণ করেছিলেন, বাঘের মাংস খাবেন। বাঘের বিরুদ্ধে মানবজাতির বার্তা হিসাবে, নীতিগত তাগিদে এই সিদ্ধান্ত। কিন্তু যে-ই জানা গেল, বাঘের মাংস খেলে নাকি পাগলের পাগলামি সেরে যায়, অমনি সুধাকান্ত জেদ ছেড়ে দিলেন। ক্ষিতিমোহন সেন এক স্পর্ধিত ছাত্রকে বললেন, “মার খাবে।” সে বলল, “আশ্রমে কাউকে মারা বারণ।” ক্ষিতিমোহন ছেলেটির কান ধরে শূন্যে তুলে দুটো চড় মেরে বললেন, “এখন তুমি আশ্রমের বাইরে।” এই সব মানুষকে নিয়ে তৈরি আশ্রম আজ চার দিকে বেড়াজাল আর হুল্লোড়জালে ঘেরা। সব দেখেশুনে যাঁরা বিচলিতচিত্ত, তাঁদের জন্য এই বই এক আরামবটিকা। আর এর সঙ্গে, এ বইয়ের অলঙ্করণ একটি আলাদা প্রাপ্তি, কেবল সেইটুকু কারণেও বইটি হতে পারে বিরল গৌরবের দাবিদার।

পথের নাম শান্তিনিকেতননীলাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

৪০০.০০

বইওয়ালা বুক ক্যাফে

অসম ও বাংলার বৌদ্ধিক চিন্তাভাবনার ঐতিহাসিক সম্পর্কটি কোন খাতে বয়েছে, তার সাক্ষ্য দেয় বইটি। বিস্তৃত সময়পর্বের মধ্যে উনিশ শতকের কালখণ্ডটি অসমের চা-শিল্প ও শ্রমিকের আয়নায় দেখার চেষ্টা করা হয়েছে। অসমে চা-শিল্প তৈরি হওয়া, চা-শ্রমিকদের শোষণ ইত্যাদি বিষয়ে নানা তথ্য অনুসন্ধান করেছেন লেখক, সেই ধারাতেই এসেছে হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় দ্বারকানাথ বিদ্যাভূষণ প্রমুখ, সোমপ্রকাশ, তত্ত্বকৌমুদী, সঞ্জীবনী প্রভৃতি পত্রিকা-প্রসঙ্গ। রবার্ট ব্রুসের হাত ধরে অসমে চা-শিল্পের পত্তন, বাইরে থেকে শ্রমিকদের নিয়ে আসা আর তা করতে গিয়ে কী কী সমস্যা, রয়েছে সে সব তথ্যও।

উনিশ শতকের বিদ্বৎ সমাজ এবং অসমের চা-শ্রমিকপ্রসেনজিৎ চৌধুরী, অনু: বাসুদেব দাস

৪০০.০০

ছোঁয়া

বাংলাদেশের নীলকরদের মতো অসমের চা-বাগানের মালিকদের অত্যাচারেও যে মিল ছিল, তার নানা সাহিত্য-স্মৃতি হাজির এখানে। এই আবহে, বাংলা ও অসমের বৌদ্ধিক সমাজের প্রতিক্রিয়া বোঝার জন্য চা-কর দর্পণ নাটক ও বিভিন্ন রিপোর্টের উল্লেখ করা হয়েছে, ব্রাহ্মসমাজের রামকুমার বিদ্যারত্ন, দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায়-সহ অন্যদের কী ভূমিকা ছিল, বোঝার চেষ্টা করা হয়েছে তা-ও। বিষয়টি নিয়ে ভাবিত হয়ে স্বয়ং লর্ড কার্জন চিঠি লিখতে বাধ্য হয়েছিলেন। পরিশিষ্ট অংশে সোমপ্রকাশ, মৌ, ইন্ডিয়ান চার্চম্যান প্রভৃতি পত্রিকায় প্রকাশিত নিবন্ধ, চিঠিপত্রের সন্নিবেশ বইটির গুরুত্ব বাড়িয়েছে।

নবদ্বীপের শাক্তরাস

শান্তিরঞ্জন দেব

৫০০.০০

নবদ্বীপ পুরাতত্ত্ব পরিষদ

ঔরঙ্গজেবের মৃত্যুর পর বাংলায় জীবন-জীবিকার প্রবল অনিশ্চয়তা থেকে জাত বরাভয় শক্তির খোঁজ, আর নদিয়ারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের সমর্থনে শাক্ত আরাধনার ব্যাপক প্রসারেই লুকিয়ে নবদ্বীপে শাক্ত রাসের উৎস। উৎসবের আকার ও জৌলুস বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তার ইতিহাস নিয়ে নানা বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়ে, নবদ্বীপের এই উৎসবও ব্যতিক্রম নয়। প্রকৃত তথ্যের ভিত্তিতে উৎসবের উৎস ও তার ক্রমবিকাশ চিহ্নিত ও নথিবদ্ধ করাই বইটির লক্ষ্য। ঘটে ও যন্ত্রে শুরু হওয়া পূজা থেকে আজকের নবদ্বীপের রাসের বিখ্যাত সব প্রতিমার প্রচলন পর্যন্ত উৎসবের পূর্ণাঙ্গ রূপরেখা রয়েছে, প্রতিমা নির্মাণের খুঁটিনাটির পাশাপাশি আছে ধর্মদাস পাল, রমেন্দ্রনাথ পালের মতো শিল্পীর জীবনকথা। রাসের গান, রামপ্রসাদ-কমলাকান্তের মতো সাধক কবিদের প্রভাব নিয়ে আলোচনা ছাড়াও রয়েছে পট-পুর্ণিমা, আড়ং, ডুমুরেশ্বরী, ভূতেশ্বরীর মতো রাস-সম্পর্কিত শব্দের পরিচয়; শাক্ত রাসের ইতিহাসসূত্রে বিভিন্ন পাড়ার পূজার প্রাচীনত্বের তথ্যের ছাড়াও এলানে কালী, শবশিবা, রণকালী ইত্যাদি প্রাচীনতম প্রতিমাগুলির বিস্তারিত পরিচিতি। এই শাক্ত উৎসবের প্রতি নবদ্বীপের বৈষ্ণব সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির কথাও উঠে এসেছে ক্ষেত্রসমীক্ষা-ভিত্তিক বইটিতে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Shantiniketan Nabadwip
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE