দলীয় সদস্যদের একাংশের আনা অনাস্থায় হেরেই গেলেন তৃণমূল শাসিত হাওড়ার জগৎবল্লভপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মহম্মদ ইব্রাহিম।
দিন পনেরো আগে দুর্নীতি ও স্বজন-পোষণের অভিযোগ তুলে সভাপতির বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবটি হাওড়া সদর মহকুমাশাসকের দফতরে জমা দেন তৃণমূলেরই ১৬ জন সদস্য। মঙ্গলবার ছিল ভোটাভুটি। সভাপতি এবং তাঁর অনুগামীরা ভোটাভুটিতে গরহাজির ছিলেন। প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিতে হাজির ছিলেন ১৩ জন তৃণমূল সদস্য এবং সিপিএমের ১০ জন। ফলে, ৪১ আসনের ওই সমিতিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অনাস্থা প্রস্তাবটি পাশ হয়ে যায় বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। সমিতিতে তৃণমূলের সদস্য রয়েছেন ২৬ জন। সিপিএমের ১৫ জন।
অনাস্থা প্রস্তাবটিকে কেন্দ্র করে তৃণমূল তো বটেই সিপিএমের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বও এ দিন প্রকট হয়। অবশ্য প্রস্তাবটি জমা পড়ার পর থেকেই তৃণমূল নেতৃত্বের মধ্যে পরস্পরের বিরুদ্ধে কাদা ছোড়াছুড়ি শুরু হয়। ইব্রাহিম অভিযোগ করেছিলেন দলের স্থানীয় বিধায়ক আবুল কাশেম মোল্লাই নিজের ভাইকে সভাপতি করার জন্য কলকাঠি নাড়ছেন। জগৎবল্লভপুর বিধানসভাকেন্দ্রের তৃণমূল সভাপতি বিমান চক্রবর্তীও বিধায়ককে দায়ী করে বলেছিলেন, “যতই চক্রান্ত হোক, ইব্রাহিমকে সভাপতির পদ থেকে সরানো যাবে না।”
অনাস্থা প্রস্তাবটি পাশ হয়ে যাওয়ার পরে এ দিন ইব্রাহিম বলেন, “লক্ষ লক্ষ টাকা দিয়ে সিপিএমের সদস্যদের কিনে নিয়ে বিধায়ক আমাকে হারানোর ব্যবস্থা করেছেন। সেই কারণে এ দিন আমি আর যাইনি।” একই সুরে বিমানবাবুও দাবি করেন, “চোখের সামনে দেখলাম সিপিএম সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে সভাপতিকে হারানোর জন্য বিধায়ক ব্লক অফিসে ঢুকছেন।”
অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বিধায়ক। তাঁর পাল্টা দাবি, “আমি এ দিন এলাকায় ছিলাম না। আমার ভাইকে সভাপতি হওয়ার যোগ্য মনে করি না। সভাপতির বিরুদ্ধে মহিলা কর্মাধ্যক্ষদের অপমান করার অভিযোগ রয়েছে। তা ছাড়া খাতায়-কলমে উন্নয়ন দেখানো হলেও বাস্তবে তার কিছুই হয়নি। উল্টে এ বাবদ বরাদ্দ করা টাকা চলে গিয়েছে স্বার্থান্বেষীদের পকেটে। অনাস্থা প্রস্তাব তারই প্রতিফলন।” অন্য দিকে যাঁর নেতৃত্বে অনাস্থা প্রস্তাবটি আনা হয় সেই শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ শেখ হাফিজুলও বলেন, “সভাপতি যে ভাবে মহিলা কর্মাধ্যক্ষ এবং সদস্যদের অপমান করছিলেন এবং উন্নয়নের নামে দুর্নীতি করছিলেন তা মানা যাচ্ছিল না।” তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগই অস্বীকার করেন ইব্রাহিম।
সিপিএমের যে ১০ জন অনাস্থা প্রস্তাবটিকে সমর্থন করেছেন তাঁদের আবার কারণ দর্শানোর চিঠি দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন দলের জেলা সম্পাদক বিপ্লব মজুমদার। তিনি বলেন, “সভাপতির বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ আনা হয়েছে তার সঙ্গে আমরা সহমত। তা বলে অন্য দলের আনা অনাস্থা প্রস্তাবকে সমর্থন করা আমাদের নীতির বিরোধী। বিধায়ক সোমবার রাতে আমাদের অনুরোধ করেছিলেন যাতে তাঁদের দলের একাংশের আনা অনাস্থা প্রস্তাবটিকে আমরা সমর্থন করি। কিন্তু তাঁকে আমরা সরাসরি না করে দিই।”
বিপ্লববাবুকে ফোন করে সিপিএমের সমর্থন চাওয়ার কথা অস্বীকার করেন বিধায়ক। তাঁর দাবি, “আমি বিপ্লববাবুকে ফোন করেছিলাম ঠিকই। তবে তাঁকে বলেছিলাম, এলাকার ঠিকমতো উন্নয়ন হচ্ছে না। সমিতির কাজকর্ম যাতে ঠিকঠাক চলে তা যেন সব রাজনৈতিক দলই দেখে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy