ভোর ৫টা থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন পঁয়ষট্টি বছরের বৃদ্ধা ইহারন বিবি। এসেছেন নাতনির জন্য রেশন কার্ড করতে। অত ভোরে এসেও বেশ কয়েকজের পিছনে ঠাঁই হয়েছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে বাড়ছে লাইন। কাঁটায় কাঁটায় ১০ টা নাগাদ উলুবেড়িয়া মহকুমা খাদ্য সরবরাহ দফতরের তালা খোলার সময় লাইনে অপেক্ষমাণদের সংখ্যা ৮০ ছাড়িয়েছে। কিন্তু তালা খোলা হলেও অফিসের ভিতরে কোনও বাবুকে ঢুকতে দেখা গেল না। অফিসের নৈশরক্ষী সন্দীপ জিৎ দরজা খোলার পর ভিতরে ঢুকলেন দু’জন ক্যাজুয়াল কর্মী।
সরস্বতী দাস ঝাড়ু দিয়ে অফিসের ভিতরে এ দিক ওদিক ঝাঁট দিচ্ছিলেন। ক্যামেরায় ছবি তুলতেই সটান প্রশ্ন, “ছবি তুললেন কেন?” এমনিই। উত্তর যে মনঃপুত হল না তা মুখ দেখলেই বোঝা যায়। পাল্টা কিছু বলার আগেই ইতিমধ্যে অফিসে আসা স্বপন ঘোষ ও বিশ্বজিৎ মণ্ডলকে বসে থাকতে দেখে প্রশ্ন করি, “বাইরে লম্বা লাইন।” পরের প্রশ্নটা বোধহয় দু’জনেই আন্দাজ করেছিলেন। সঙ্গে সঙ্গে বলে ওঠেন, “ইন্সপেক্টর না এলে কাজ শুরু করা যায় না।’’ বাইরের লাইন এর মধ্যে আরও দীর্ঘ হয়েছে। ভেসে আসছে বিরক্তিকর নানা মন্তব্যও। কখন কাজ শুরু হবে তা নিয়ে সকলেই অস্থির। ঘড়িতে প্রায় সাড়ে ১০টা। পৌঁছলেন ইন্সপেক্টর জয়ন্ত সোম। ছবি তুলতেই তাঁর কুণ্ঠিত জবাব, “কী করব বলুন। ট্রেন লেট।”
বাইরে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষজন আরও অস্থির। ভেসে এল, ‘কখন কাজ শুরু হবে’ মন্তব্যও। এরই মাঝে এলেন অফিসের সর্বময় কর্ত্রী মহকুমা খাদ্য আধিকারিক মলি গুইন। ঘড়ির কাঁটায় তখন ১০টা ৫০। ছবি তুলতেই হুঙ্কার, “ছবি তুলবেন না।” বলতে বলতেই এক প্রকার ছুটে অফিসে ঢুকে পড়লেন। ইতিমধ্যে লাইন একটু একটু করে এগোতে শুরু করেছে। বেলা ঠিক ১১টা। একে একে খোশমেজাজে গল্প করতে করতে ঢুকলেন অ্যাকাউন্ট্যান্ট প্রদীপ গোপ ও কৃষ্ণা গুহরায়। দেরির কারণ জানতে চাইতেই ঝাঁঝালা উত্তর, “ট্রেন লেট হলে আমরা কী করব? ট্রেনটা ঠিক সময়ে চলার ব্যবস্থা করুন। তারপর এ সব করবেন।” বলার চেষ্টা করলাম, এই সমস্যা শুধু আপনাদের নয়, সকলেরই। তার আগেই দু’জনে অফিসের ভিতরে অদৃশ্য হয়ে গেলেন।
“এই ব্যাপারে আপনাদের সামনে আমি একটুও মুখ খুলব না।”
(উলুবেড়িয়া মহকুমা খাদ্য সরবরাহ দফতর)
এখন সাড়ে ১১টা। সার্কেল ইন্সপেক্টর গৌতম কুমার জানা ঢুকলেন অপিসে। আপনার দেরি কেন? উত্তর এল, “আমি আউট স্টাফ। মানে বাইরে আমার ননা ডিউটি থাকে। সেই সব সেরে আসতে হয়।” অফিসে কর্মীদের আসতে দেরির কারণে কাজে আসা মানুষজনের হয়রানি প্রসঙ্গ তুলতেই সটান জবাব মহকুমা খাদ্য আধিকারিকের, “এই ব্যাপারে আপনাদের সামনে আমি একটুও মুখ খুলব না।”
ঘড়ির কাঁটায় ১২টা। এখনও দফতরের বেশিরভাগ চেয়ারই ফাঁকা। বিশেষ সূত্রে জানা গেল, দফতরে সাংবাদিক আছে জেনে অনেকে আর উপরে না উঠে ফিরে গিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy