ছবি: প্রকাশ পাল।
ঝকঝক করছে জি টি রোড।
তাপ্পি পড়েছে অলি-গলির খানাখন্দেও।
আলোয় ঝলমল করছে ‘কুতুব মিনার’ থেকে ‘বাঁটুল দি গ্রেট’। মাইক থেকে ভেসে আসছে রবীন্দ্রসঙ্গীত।
জগদ্ধাত্রী পুজোর প্রস্তুতি প্রায় সারা। মণ্ডপে মণ্ডপে কারিগরদের শেষ মুহূর্তের তুমুল ব্যস্ততার মধ্যেই মঙ্গলবার, পঞ্চমীর দিন চন্দননগরে পথে নামলেন উৎসবপ্রিয় মানুষ। যাঁরা ভেবেছিলেন, ফাঁকায় ফাঁকায় মণ্ডপ দেখবেন, রাস্তায় নেমে তাঁরা চমকে গিয়েছেন। সন্ধ্যা থেকেই শহরের মূল সড়কগুলির ধারের এক মণ্ডপ থেকে অন্য মণ্ডপে চলেছে দর্শনার্থীদের ভিড়। এ দিনই উদ্বোধন হয়ে গেল বেশ কিছু পুজোর।
আজ, ষষ্ঠী। আজ থেকেই ভিড় সামাল দেওয়ার জন্য ব্যাপক পুলিশি বন্দোবস্ত করা হয়েছে। সাম্প্রতিক বর্ধমান বিস্ফোরণ কাণ্ডের প্রেক্ষিতে হুগলি জেলা পুলিশের কর্তারা এ বার চন্দননগরের পুজোয় একেবারেই ঝুঁকি নিতে চাইছেন না। তাই এ বারই প্রথম পুলিশের তরফে রাখা হচ্ছে ‘অ্যান্টি সাবোতাজ স্কোয়াড’। যারা সর্বক্ষণ নজরদারি চালাবে। কোনও কারণে সন্দেহ হলে ব্যবস্থা নেবে।
পুলিশ সুপার সুনীল চৌধুরী বলেন, “ভিড়ের জন্য আমরা প্রথাগত ভাবে চন্দননগরে পুজোর দিনগুলিতে প্রচুর পুলিশি ব্যবস্থা করি। এ বার তা আরও জোরদার করা হচ্ছে। কেন না রাজ্যের কয়েকটি জেলায় কিছু ঘটনা ঘটে গিয়েছে। সে জন্যই এ বার বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ‘অ্যান্টি-সাবোতাজ স্কোয়াড রাখছি।”
গত বেশ কয়েক বছর ধরেই থিমপুজোর রমরমা চন্দননগর জুড়ে। এ বারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। কোনও মণ্ডপে তুলে ধরা হয়েছে ‘কৃষ্ণকথা’। কোনও মণ্ডপের বিষয় পরিবেশ। উত্তর থেকে দক্ষিণ সর্বত্রই দর্শক টানার প্রতিযোগিতা তুঙ্গে। ট্রেনপথে এলে প্ল্যটফর্ম ছেড়ে শহরে ঢোকার মুখে খলিসানির পুজো। এখানে পুজোর উপকরণ দিয়ে কাল্পনিক মন্দিরের আদলে মণ্ডপে মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকেই দর্শকদের ভিড় জমেছে। স্টেশন রোড ধরে আরও এগোলে ফটকগোড়ার রাজবাড়ি দেখেও থমকেছেন অনেকে। আরও এগোলে মধ্যাঞ্চলে খড়ের মণ্ডপ। শহরের উত্তর থেকে দক্ষিণ এমনকী, অলিগলিতেও ছড়িয়ে রয়েছে এমন নানা চমক। স্টেশন সেজেছে আলোয়। স্ট্র্যান্ডে পসরা সাজিয়েছেন বিক্রেতারা। বাড়িতে কালীপুজোয় লাগানো আলো এখনও খোলেননি কেউই। দূরদূরান্তে ছড়িয়ে থাকা আত্মীয়-স্বজনদের অনেকেই চলে এসেছেন ইতিমধ্যেই। শহর এখন পুরোপুরি উৎসবমুখর।
‘চন্দননগরের পুজো’ বলা হলেও চুঁচুড়ার একটি বড় অংশ এবং মানকুণ্ডু-ভদ্রেশ্বর পর্যন্ত এই পুজোর বিস্তার। কেন্দ্রীয় কমিটির আওতায় এ বার মোট ১৫১টি পুজো হচ্ছে। বাড়ির পুজোর সংখ্যা অন্তত ৩২টি। জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ভিড়কে নিয়ন্ত্রণ করতে থাকছেন মোট এক হাজার পুলিশকর্মী। তার মধ্যে মহিলা পুলিশ অন্তত আড়াইশো জন। থাকছেন ৬০০ সিভিক ভলান্টিয়ার্সও। মোট ৩৮টি ‘পুলিশি সহায়তা কেন্দ্র’ থাকছে। ১৫টি জায়গায় বসানো হচ্ছে সিসিটিভি ক্যামেরা। মহিলাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাড়তি সতর্কতা নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন এসডিপিও (চন্দননগর) সৈকত ঘোষ। ফেরিঘাটগুলিতেও থাকছে সতর্ক প্রহরা। অসামরিক প্রতিরক্ষা দফতরের সঙ্গে প্রশাসন যৌথ ভাবে এ বার বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ডুবুরি রাখছে ঘাটগুলিতে।
যথারীতি এ বারও পুজোর চারটি দিন যান নিয়ন্ত্রণ করবে পুলিশ। বিকেল চারটে থেকে ভোর পর্যন্ত তা চলবে জি টি রোড-সহ গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলিতে। মোট ২০টি ‘নো-এন্ট্রি পয়েন্ট’ করা হয়েছে। ‘পার্কিং জোন’ করা হয়েছে ১৬টি। কলকাতা ও বর্ধমানের দিকে যে সব গাড়ি যাবে, তার জন্য ১০টি জায়গা (ডাইভারসান পয়েন্ট) স্থির করেছে পুলিশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy