রাস্তার পাশে পড়ে থাকা জঞ্জালের স্তূপ। ছবি: তাপস ঘোষ।
হাওড়া ব্যান্ডেল মেন শাখার রেল লাইন থেকে দূরত্ব বড়জোর ৫০ ফুটের। জিটি রোড থেকে আরও কম। গিজগিজে ঘনবসতি। হাত বাড়ালেই থানা, সরকারি বাসস্ট্যান্ড। তবে সবকিছুকে ছাপিয়ে চোখে পড়বে চারপাশ জুড়ে জঞ্জালের স্তুপ। সার সার খাটাল আর গরু, মোষ। অদূরেই বসতি। মানুষ ও জঞ্জালের এমন সহাবস্থান নিয়ে মাঝে মধ্যে কেউ কেউ সরব হলেও প্রশাসনের নজর এ দিকে পড়ে না বলে অভিযোগ বহুদিনের।
কিন্তু এমন অবস্থা কেন?
এক সময় একটি সার কারখানা লাগোয়া রেল লাইনের পাশে ধু-ধু ফাঁকা মাঠ ছিল। পুরসভা তাদের জঞ্জীাল ফেলার ডাম্পিং গ্রাউন্ড হিসাবে বেছে নেয় এই জায়গা। কিন্তু ক্রমে বসতি বাড়তে বাড়তে রিষড়া পুরসভা লাগোয়া এই এলাকায় বস্তি, ফ্ল্যাট এখন গিজগিজ করছে। বসতি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জঞ্জাল বাড়লেও দীর্ঘ বাম শাসনে পুরসভার জঞ্জাল ফেলার জায়গার পরিবর্তন হয়নি। ফলে বসতি বাড়ার পাশাপাশি জঞ্জালও বেড়েছে। দূষিত হয়েছে এলাকার পরিবেশ। নানা সময় এ নিয়ে প্রতিবাদও হয়েছে। কিন্তু বলাবহুল্য প্রশাসনের ঘুম ভাঙেনি। ফলে যা হওয়ার তাই হয়েছে। মশা, মাছি আর আর্বজনার গন্ধে এলাকায় টেকাই দুষ্কর হয়ে দাঁড়িয়েছে। এলাকায় রাস্তা দিয়ে চলতে গেলে পথচারীদের দমবন্ধ হওয়ার জোগাড়। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ম্যালেরিয়ার আঁতুর ঘরে পরিণত হয়েছে ওই সব এলাকা। কিন্তু তাতেও পুরসভার কোনও হেলদোল নেই। ক্ষমতার হাত বদল হলেও সমস্যা মেটাতে বর্তমান পুরসভাও উদাসীন বলে অভিযোগ উঠেছে।
যদিও বামেদের দাবি, এক সময়ের ডাকাবুকো চেয়ারম্যান দিলীপ সরকারের সময় থেকেই পরিস্থিতির বদল শুরু হয়েছে। জঞ্জাল আর খাটালের পাশাপাশি সমাজবিরোধীদের খাস ডেরা ছিল ওই অঞ্চল। তা নির্মূল করতেই জিটি রোডের সঙ্গে যোগ করে বাম আমলে মৈত্রী পথ তৈরি হয়েছে। তাতে রিষড়া স্টেশনের সঙ্গে জিটি রোডের যোগাযোগের যেমন সুবিধা হয়েছে, তেমনিই রাস্তায় আলো জ্বলায় সমাজবিরোধী দাপট অনেকটাই বাগে আনা গিয়েছিল। বাম নেতা রিষড়া পুরসভার এক প্রাক্তন কাউন্সিলর বলেন,“এখন তো শ্রীরামপুরের বিধায়ক, সাংসদ সবাই রাজ্যের শাসক দলের। রিষড়া পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান আবার আরামবাগের সাংসদ। প্রচুর টাকার কাজের সুযোগ রয়েছে ওঁদের। তারপরেও জঞ্জালের ডাম্পিং গ্রাউন্ড সরল না কেন?”
পাল্টা হিসাবে রিষড়া পুরসভার বর্তমান প্রশাসকদের যুক্তি, বামেরা ৩৪ বছর রাজ্যে ক্ষমতায় ছিল। মাত্র তিন বছর ক্ষমতায় এসেছে তৃণমূল। বামেরা এতদিন কী করছিলেন?
রাজনীতির কারবারীদের যুক্তি, পাল্টা যুক্তি লড়াই নিয়ে অবশ্য মাথাব্যাথা নেই এলাকাবাসীর। তাঁদের প্রশ্ন, রাজনীতির লোকেরা রাজনীতি করছে। তাতে সাধারণ মানুষের কী? বরং সমস্যা সমাধানের পথ খুঁজুক প্রশাসন। তাঁদের বক্তব্য, উত্তরবঙ্গে যে ভাবে জাপানি এনসেফ্যালাইটিস ছড়িয়েছে সে দিক থেকে এখানকার এই পরিবেশে রীতিমত আতঙ্কে আছেন মানুষজন।
তবে এ সবের মাঝেই অবশ্য আশার বাণী শুনিয়েছেন পুরসভার চেয়ারম্যান শঙ্করপ্রসাদ সাউ। তিনি বলেন, “জঞ্জাল সরাতে মাত্র কয়েক মাসের অপেক্ষা। দিল্লি রোডে দীর্ঘাঙ্গী মোড়ের কাছে সব জঞ্জাল সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। ওই জায়গায় কেএমডব্লুএসের প্রকল্পে জঞ্জাল থেকে নানা রকম জিনিস তৈরি হবে।”
এই অবস্থায় পুরপ্রাধানের আশ্বাসের দিকেই পথ চেয়ে আছেন বাসিন্দারা। যদিও ‘না আঁচালে বিশ্বাস নেই’ এমন মন্তব্যও করেছেন কেউ কেউ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy