Advertisement
১১ মে ২০২৪

খেলায় পিছিয়ে, মার পুলিশের

ফুটবল মাঠে যুযুধান দু’পক্ষের মধ্যে এক পক্ষ পুলিশ। অন্য পক্ষ স্থানীয় ক্লাব। দর্শকের মধ্যেও প্রচুর পুলিশ। তবু তার মধ্যেই রেফারির একটি সিদ্ধান্ত পুলিশ দলের বিপক্ষে যাওয়ায় শনিবার তুলকালাম হল চুঁচুড়ার গোর্খা ময়দানে। পুলিশ দলের খেলোয়াড়দের সঙ্গে দর্শকদের একাংশও মাঠে ঢুকে প্রথমে রেফারিকে তাড়া করেন। রেফারি প্রাণ বাঁচাতে সরে যান স্বেচ্ছাসেবকদের দিকে। এর পরে সেই দর্শকদেরই এক জনের হাতে আক্রান্ত হন বিপক্ষ দলের এক খেলোয়াড়। তাঁর চোখের নীচে ঘুষি চালানো হয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের কয়েক জনের দাবি, রিভলভারের বাট দিয়েও কপালে আঘাত করা হয় ওই খেলোয়াড়ের।

অসিত সাঁতরা

অসিত সাঁতরা

নিজস্ব সংবাদদাতা
চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০১৪ ০০:০৭
Share: Save:

ফুটবল মাঠে যুযুধান দু’পক্ষের মধ্যে এক পক্ষ পুলিশ। অন্য পক্ষ স্থানীয় ক্লাব। দর্শকের মধ্যেও প্রচুর পুলিশ। তবু তার মধ্যেই রেফারির একটি সিদ্ধান্ত পুলিশ দলের বিপক্ষে যাওয়ায় শনিবার তুলকালাম হল চুঁচুড়ার গোর্খা ময়দানে।

পুলিশ দলের খেলোয়াড়দের সঙ্গে দর্শকদের একাংশও মাঠে ঢুকে প্রথমে রেফারিকে তাড়া করেন। রেফারি প্রাণ বাঁচাতে সরে যান স্বেচ্ছাসেবকদের দিকে। এর পরে সেই দর্শকদেরই এক জনের হাতে আক্রান্ত হন বিপক্ষ দলের এক খেলোয়াড়। তাঁর চোখের নীচে ঘুষি চালানো হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীদের কয়েক জনের দাবি, রিভলভারের বাট দিয়েও কপালে আঘাত করা হয় ওই খেলোয়াড়ের। হামলাকারী দর্শকের মধ্যে থাকা সাদা পোশাকের পুলিশই। সার্ভিস রিভলভারের বাট দিয়েই ওই খেলোয়াড়কে আঘাত করে তিনি সরে পড়েন। পুলিশ অবশ্য এই দাবি মানেনি। প্রহৃত ফুটবলার চুঁচুড়া থানায় ডায়েরি করেছেন। সেখানে রিভলভার দিয়ে মারার প্রসঙ্গ রাখা হয়নি।

অসিত সাঁতরা নামে আক্রান্ত ফুটবলার মানকুণ্ডু স্পোর্টিং ক্লাবের। আচমকা আঘাতে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন অসিত। তাঁর চোখের নীচে ফুলে যায়। মাঠেই প্রাথমিক শুশ্রূষার পরে তাঁকে চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিত্‌সার পরে ফিরে এলেও আর মাঠে নামতে পারে‌ননি। তিনি বলেন, “আচমকা কয়েক জন আমাকে ঘিরে ধরেছিল। এক জন প্রথমে মাথায় ও মুখে ঘুষি মারে। আমি বসে পড়ি। তখন ভারী কিছু দিয়েও মারে।” কোচ সুবিমল সিংহ বলেন, ‘‘যা ঘটেছে, সবাই দেখেছেন। ওই ঘটনার জেরে দলের ছেলেরা মুষড়ে পড়েন। কোনও রকমে খেলা শেষ করেছি।” নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ক্লাবের এক কর্তা বলেন, “ওই খেলার সঙ্গে বড় বড় লোক জড়িত। স্বভাবতই আমরা খুব বেশি ঘাঁটাইনি।”

চুঁচুড়া থানার পুলিশ মুখে কুলুপ এঁটেছে। তারা শুধু জানিয়েছে, তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। চুঁচুড়ার তৃণমূল বিধায়ক অসিত (তপন) মজুমদার বলেন, “খেলার মাঝে দর্শকের এক জন মানকুণ্ডুর এক জন খেলোয়াড়কে মেরেছেন। উনি পুলিশের লোক না বহিরাগত, সেটা দেখে পুলিশকে ব্যবস্থা ‌নিতে বলেছি।” পুলিশ সুপার সুনীল চৌধুরীর দাবি, “মাঠে একটা সমস্যা হয়েছিল। দু’পক্ষের কথা কাটাকাটি হয়। তা মিটেও যায়।”

তপনবাবুর উদ্যোগে এবং দলের হুগলি-চুঁচুড়া শহর যুব সংগঠনের পরিচালনায় গত ২৪ ডিসেম্বর থেকে ৮টি দলকে নিয়ে ফুটবল প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে গোর্খা ময়দানে। এ দিন কোয়ার্টার ফাইনালের শেষ খেলায় মানকুণ্ডু স্পোর্টিং ক্লাব মুখোমুখি হয় জেলা পুলিশ অ্যাথলেটিক ক্লাবের। প্রথমার্ধে মানকুণ্ডুর রাজু দেবনাথ জোড়া গোল করেন। দ্বিতীয়ার্ধে পুলিশ দলটি পেনাল্টিতে একটি গোল শোধ করে। তার কিছু ক্ষণ পরে তাদের একটি গোলমুখী আক্রমণ মানকুণ্ডুর এক খেলোয়াড়ের হাতে লাগে বলে দাবি করেন পুলিশ দলের খেলোয়াড়রা। তাঁরা পেনাল্টি চান। কিন্তু রেফারি পেনাল্টি দেননি।

এর পরেই শুরু হয় গোলমাল। মানকুণ্ডুর খেলোয়াড়রা মাঠেই ছিলেন। তাঁদের স্টপার অসিত সাঁতরা সেন্টার সার্কেলের কাছে দাঁড়িয়েছিলেন। সেখানেই তিনি আক্রান্ত হন। হামলাকারীকে ধরতে পারেনি পুলিশ। সংগঠকদের অনুরোধে মানকুণ্ডু অবশ্য খেলা চা‌লিয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত ২-১ গোলে জিতেই তারা সেমিফাইনালে পৌঁছয়।

খেলার পরে অসিতকে নিয়ে চুঁচুড়া থানায় যান মানকুণ্ডুর কর্তারা। তাঁদের দাবি, রেফারি পেনাল্টি না দিয়ে সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছিলেন। দলের কারও হাতে বল লাগেনি। ক্লাবের কর্তা অভীক খাঁ বলেন, “আমরা এফআইআর করতে গিয়েছিলাম। পুলিশ ডায়েরি নিয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE