রাজবাড়ি সংলগ্ন সেই মাঠ। ছবি: প্রকাশ পাল।
বাম আমলে উত্তরপাড়ার ঐতিহাসিক রাজবাড়ি ঘড়িবাড়ি ভেঙেছিল প্রোমোটারেরা। তৃণমূলের আমলে সেই রাজবাড়ি লাগোয়া জমিদার আমলের প্রশস্ত খেলার মাঠও চলে গেল প্রোমোটারের হাতে। তবে অন্য মোড়কে।
প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, আদালতের আদেশে এ দিন জমির মালিকদের দখল দেয় পুলিশ। এই বিষয়ে জেলার পুলিশ সুপার সুনীল চৌধুরীর সাফাই, “আমরা আদালতের নির্দেশ পালন করেছি মাত্র।”
যদিও মাঠটিতে এলাকার কয়েকটি ক্লাব দীর্ঘদিন ধরেই তাদের খেলাধূলো চালিয়ে আসছে। নানারকম সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্যও এই মাঠই ভরসা স্থানীয় সংস্কৃতিপ্রেমীদের। মাঠে বড় ক্রিকেট এবং ফুটবল প্রতিযোগিতা করেন ক্লাব কর্তৃপক্ষ। সেই ক্লাবগুলি মাঠটি রাখতে পুলিশ, প্রশাসন এবং পুর কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানিয়ে আসছিল। মাঠ বাঁচাতে ঘড়িবাড়ি মাঠ বাঁচাও কমিটি তৈরি হয়। এলাকায় মিটিং, মিছিল হয়। মাঠ রক্ষায় পোস্টার পড়ে।
এসবের মাঝেই ওই জমির বর্তমান মালিক হিসাবে পরিচয় দিয়ে গিরিধারী ঘোষ নামে এক ব্যক্তি জমির মিউটেশনের জন্য পুরসভায় দৌঁড়ঝাঁপ শুরু করেন। সোমবার থেকে জমিতে ১৪৪ ধারা জারি করে আদালত। সোমবার জমিটি শক্তপোক্ত টিন দিয়ে ঘিরে ইট গেঁথে পাঁচিল তোলার কাজ শুরু হতেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন স্থানায় মানুষ। পুলিশ, প্রশাসন এবং পুর কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন তাঁরা। এলাকার বুদ্ধিজীবী, নাট্যকর্মীদের পাশাপাশি সিপিএম, বিজেপি, কংগ্রেস এদিন একযোগে রাস্তায় নামেন। যদিও আদালতের নির্দেশের বিষয়টি জানিয়ে, শেষ পর্যন্ত প্রোমোটারেরা কাজ চালিয়ে যেতে থাকে।
এদিন ঘড়িবাড়ি মাঠে দাঁড়িয়েই জমির মালিক পরিচয় দিয়ে গিরিধারীবাবু বলেন, “আমার কাছে সমস্ত নথিপত্র রয়েছে। আমার জমিতে আমি কাজ করছি।” তিনি মালিকানা দাবি করলেও অবশ্য এলাকার প্রোমোটার, জমি বাড়ির দালালির সঙ্গে যুক্ত লোকজন এদিন তাঁকে আগাগোড়া তাঁকে ঘিরেছিলেন।
এলাকার বিশিষ্ট প্রবীণ ঐতিহাসিক রথীন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ঘড়িবাড়ি রাখতে না পারায় ব্যাথা আমাদের আজও যায়নি। এবার আরও একটা আঘাত নেমে এল। ওই ঐতিহাসিক মাঠটি সর্বসাধারণের ব্যবহারের জন্য রাখতে প্রশাসন এখনই উদ্যোগী হন। উত্তরপাড়া থেকে ইতিহাস হারিয়ে যাচ্ছে। এটা অত্যন্ত অশুভ লক্ষণ। এর প্রতিবাদে সবাইকে এক হয়ে এগিয়ে আসতে অনুরোধ রাখছি।” প্রয়োজনে আদালতের দ্বারস্থ হোক প্রশাসন এমন দাবিও উঠেছে।
জেলার পুলিশ সুপার আদালতের নির্দেশের কথা বললেও জেলাশাসক মনমীত নন্দা বলেন,“ঐতিহাসিক ওই মাঠটি এলাকার মানুষের দাবিকে সম্মান জানিয়ে রাখার ব্যাপারে আমি স্থানীয় মানুষজনের সঙ্গে কথা বলব। কিন্তু তার আগে আইনের বিষয়টি দেখতে হবে। যতদূর জেনেছি সেটি এখন ব্যক্তি মালিকানাধীন।”
উত্তরপাড়া ভদ্রকালী এলাকার বাসিন্দাদের দাবি, উত্তরপাড়া পুরসভার বিএ এবং সিএ মাঠে সারা বছর নানা উৎসব, অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। খেলার প্রয়োজনে ওই দু’টি মাঠ এখন কমই পাওয়া যায়। সেখানে ঘড়িবাড়ি মাঠটি শুধু এলাকার খেলাধূলোর স্বার্থে ব্যবহার করা হোক। প্রয়োজনে ইন্ডোর স্টেডিয়াম করা যেতে পারে। এখানে একটা সুইমিং পুল পর্যন্ত নেই। এলাকার ছেলেমেয়েরা বালি আর হিন্দমোটরে সাঁতার শিখতে যায়।
এলাকার বিশিষ্ট নাট্য পরিচালক বাসুদেব হুই অবশ্য বলেন, “ঘড়িবাড়ি মাঠের একাংশে মুক্তমঞ্চ তৈরি করা হোক। বহুদিন ধরেই আমরা এই দাবি জানিয়ে আসছি।” পুরসভার চেয়ারম্যান অদিতি কুন্ডু অবশ্য বলেন,“ওই মাঠে এলাকার বাসিন্দারা দীর্ঘদিন ধরেই মুক্তমঞ্চের দাবি জানিয়ে আসছে। জমিটি দখলদারি সম্পর্কে আদালতের রায়ের কপি হাতে এখনও পাইনি। ওই জমি সংক্রান্ত বিষয়টি পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান পিনাকী ধামালি দেখতেন। বাসিন্দাদের দাবি মেনে মাঠটি রাখতে কোনও পদক্ষেপ করা যায় কি না সে বিষয়ে আমি আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলব।”
এ সবের মাঝেই এলাকার মানুষের অভিযোগ, উত্তরপাড়া এখন ‘প্রোমোটার নগরী’ হয়ে গিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরেই বিষয়টি ঝুলে রয়েছে। পুর কর্তৃপক্ষ আগে উদ্যোগী হলে এখন এই অবস্থ হতো না। এলাকার বিজেপি নেতা চন্দন চক্রবর্তী অবশ্য বলেন, “আমরা মাঠটি রাখতে শেষ পর্যন্ত যাব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy