Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ঠিকাদাররা নারাজ, থমকে বহু প্রকল্প

আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থার মূল দু’টি স্তম্ভসেতু এবং সড়ক। কিন্তু হুগলিতে সেই কাজ করতে গিয়ে বারেবারেই ফাঁপরে পড়ছে প্রশাসন। বেশ কিছু সেতু এবং সড়কের টেন্ডার করা হয়েছে একাধিক বার। কিন্তু কোনও ঠিকাদার সংস্থাই সে ভাবে টেন্ডার প্রক্রিয়ায় সামিল হয়ে কাজে আগ্রহ দেখায়নি। ফলে, সরকারি উদ্যোগ জলে যাচ্ছে। কোটি কোটি টাকার কাজ মাঝপথে আটকে রয়েছে। জেলায় উন্নয়ন হোঁচট খাচ্ছে।

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০১৪ ০১:৫৪
Share: Save:

আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থার মূল দু’টি স্তম্ভসেতু এবং সড়ক। কিন্তু হুগলিতে সেই কাজ করতে গিয়ে বারেবারেই ফাঁপরে পড়ছে প্রশাসন। বেশ কিছু সেতু এবং সড়কের টেন্ডার করা হয়েছে একাধিক বার। কিন্তু কোনও ঠিকাদার সংস্থাই সে ভাবে টেন্ডার প্রক্রিয়ায় সামিল হয়ে কাজে আগ্রহ দেখায়নি। ফলে, সরকারি উদ্যোগ জলে যাচ্ছে। কোটি কোটি টাকার কাজ মাঝপথে আটকে রয়েছে। জেলায় উন্নয়ন হোঁচট খাচ্ছে।

বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ঠিকাদারদের দাবি, সরকার নির্মাণ সামগ্রীর যে দর বেঁধে দিচ্ছে, তার চেয়ে বাজার-দর অনেকটাই বেশি। ফলে, সরকারি কাজ হাতে নিলে তাঁদের লোকসানের মুখে পড়তে হবে। সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য আশার কথা শুনিয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি মেনে নিয়েছেন, নির্মাণ সামগ্রীর যে দাম এত দিন দেওয়া হত, তার অনেকটাই পুরনো তালিকার ভিত্তিতে। সেই তালিকায় দাম কম থাকায় ঠিকাদারেরা এত দিন কাজে আগ্রহ দেখাচ্ছিলেন না। মন্ত্রী বলেন, “এখন বাজার-দর অনেকটাই বেশি। সম্প্রতি নির্মাণ সামগ্রীর দামের তালিকা সংশোধন করা হয়েছে। ফের টেন্ডার ডাকা হলে ঠিকাদারেরা তাতে অংশ নেবেন বলেই আমাদের ধারণা।”

সিঙ্গুরের সঙ্গে পোলবার যোগাযোগ ব্যবস্থা মসৃণ করতে ঘিয়া নদীর উপর অন্তত ৫০ ফুট লম্বা এবং ৩০ ফুট চওড়া একটি সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয় চলতি বছরে। ওই সেতুর কাজে আনুমানিক খরচ ধরা হয় ২ কোটি ৬২ লক্ষ টাকা। টাকা বরাদ্দ হতেই টেন্ডার ডেকে ওই কাজে ঠিকাদার নিয়োগে উদ্যোগী হয় সেচ দফতর। কিন্তু কোনও ঠিকাদার ওই কাজে সে ভাবে আগ্রহ না দেখানোয় টেন্ডার প্রক্রিয়া বানচাল হয়ে গিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় হরিপাল ব্লকের বালিয়া থেকে কাশীপুর পর্যন্ত প্রায় ৪ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ করতে গিয়ে ঠিকাদার না মেলায় জেরবার হচ্ছে প্রশাসন। ওই রাস্তা নির্মাণের জন্য অন্তত দু’কোটি টাকা খরচ হবে। একবার নয়, এ পর্যন্ত মোট ছ’বার টেন্ডার হয়েয়েছে ওই রাস্তা নির্মাণের জন্য। কিন্তু ঠিকাদার না মেলায় ফাঁপরে প্রশাসনের কর্তারা।

একই ভাবে ধনেখালিতে ডাকাতিয়া খালের উপর সেতু নির্মাণের কাজ বন্ধ। সিঙ্গুরে সুয়াখালের উপর দু’টি ভিন্ন জায়গায় সেতুর নির্মাণের জন্য পাঁচ কোটিরও বেশি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। কিন্তু এখানেও কাজও বন্ধ।

রাস্তা এবং সেতু কাজ থমকে যাওয়ার এমন উদাহরণ আরও রয়েছে।

ঠিকাদারদের অনেকেই চড়া বাজারদরকে তাঁদের অনাগ্রহের কারণ হিসেবে দেখালেও তাঁদেরই একটি অংশ জানিয়েছে, আগে সরাসরি টেন্ডার ডেকে কাজ হত। এখন ই-টেন্ডারের মাধ্যমে কাজ হচ্ছে। নতুন এই ব্যবস্থায় দেশের যে কোনও প্রান্ত থেকে যে কেউ কাজে অংশ নিতে পারে। আগে বিভাগীয় কর্তাদের ধরে নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়ার মাধ্যমে টেন্ডার পাওয়া যেত। কিন্তু নতুন ব্যবস্থায় সেই সুযোগ আর নেই। নতুন ব্যবস্থায় ঝুঁকির পরিমাণও অনেক বেড়ে গিয়েছে। তাই তাঁরা আগাম জানতেও পারছেন না কারা টেন্ডার প্রক্রিয়ায় সামিল হচ্ছেন।, কারাই বা বরাত পাচ্ছেন।

জেলা প্রশাসনের কর্তাদের একাংশও মেনে নিয়েছেন, নতুন ব্যবস্থায় সব ঠিকাদার অভ্যস্থ না হওয়ায় প্রাথমিক ভাবে অসুবিধা হচ্ছে। পরবর্তী সময়ে এই পরিস্থিতি আর থাকবে না বলেই তাঁদের ধারণা। হরিপালের বিধায়ক তথা মন্ত্রী বেচারাম মান্নাও সমস্যার কথা মেনে নিয়ে জানান, এলাকার উন্নয়ন এবং মানুষের প্রয়োজনের দিকে তাকিয়েই সেতু এবং রাস্তা নির্মাণের চেষ্টা হচ্ছে। কিন্তু টেন্ডারে কেউ সামিল না হওয়ায় সেই উদ্যোগ জলে যেতে বসেছে। তিনি বলেন, “ফের টেন্ডার ডেকে পরিস্থিতির কোনও পরিবর্তন হয় কিনা আমরা এখন সেইদিকে লক্ষ্য রাখছি।”

• সিঙ্গুর ও পোলবার মধ্যে যোগাযোগের জন্য ঘিয়া নদীর উপরে সেতু। বরাদ্দ ২ কোটি ৬২ লক্ষ।

• হরিপাল ব্লকের বালিয়া থেকে কাশীপুর পর্যন্ত চার কিলোমিটার রাস্তা। ছ’বার টেন্ডারের পরেও মেলেনি ঠিকাদার। খরচ হবে ২ কোটি।

• ধনেখালিতে ডাকাতিয়া খালের উপরে সেতু নির্মাণ।

• সিঙ্গুরে দু’টি জায়গায় সুয়া খালের উপরে সেতু তৈরি। বরাদ্দ ৫ কোটি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

overseer project goutam bandopadhyay southbengal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE