তরুণীর গায়ে আগুন, উধাও অভিযুক্ত যুবক

ঘরের ভিতর থেকে ভাইঝির আর্ত চিৎকার শুনে হকচকিয়ে গিয়েছিলেন পিসি। তখনই দেখেন, গায়ে আগুন নিয়ে ছুটে ঘর থেকে বেরিয়ে এলেন তাঁর একমাত্র ভাইঝি। সঙ্গে প্রতিবেশী এক যুবক। তারও হাতে আগুন জ্বলছে। কালবিলম্ব না করে দু’জনের গায়ে জল ছুড়ে দিতেই পালিয়ে যায় যুবক। তখনই তরুণী অভিযোগ করেন, ওই যুবকই তাঁর গায়ে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।

সোমবার সকালে বেলুড়ের ভোটবাগানে এমন ভাবেই এক তরুণীর গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠল এক যুবকের বিরুদ্ধে। পুলিশ জানায়, আশঙ্কাজনক অবস্থায় বছর উনিশের ওই তরুণীকে স্থানীয় জায়সবাল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হাসপাতাল সূত্রে খবর, তাঁর শরীরের প্রায় সত্তর শতাংশ পুড়ে গিয়েছে। তবে বছর ছাব্বিশের ওই অভিযুক্ত যুবক কোথায় পালিয়ে গিয়েছে, তা জানা যায়নি। তার খোঁজে তল্লাশি শুরু করেছে পুলিশ।

পুলিশ সূত্রের খবর, ভোটবাগানের কাশী মণ্ডল লেনে কলোনির ঘিঞ্জি ঘরে বিধবা মায়ের সঙ্গেই থাকেন ওই তরুণী। পাশেই থাকেন তাঁর পিসি ও দাদু। এ বছর প্রাইভেটে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবেন ওই তরুণী। এ দিন সকাল ৯টা নাগাদ মা কাজে চলে যাওয়ার পরে একাই ঘরে রান্না করছিলেন ওই তরুণী। অভিযোগ, সেই সময় মুখে-মাথায় ওড়না চাপা দিয়ে ঘরে ঢোকে ওই যুবক।

পুলিশের কাছে দায়ের করা অভিযোগে ওই তরুণীর কাকা জানিয়েছেন, হঠাৎ বাড়িতে ঢুকে পড়ে ওই যুবক পিছন থেকে তরুণীর মুখ চেপে ধরে প্রথমে তাঁকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। কিন্তু না পেরে পকেটে থাকা পেট্রোল ভর্তি বোতল বার করে মেয়েটির গায়ে ঢেলে দেয় সে। কিছুটা পেট্রোল ঢালে নিজের শরীরেও। এর পরেই দেশলাই দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। আগুন ধরে যায় ওই তরুণীর পিঠ, বুক ও হাতে। ওই যুবকের হাতে-পিঠেও আগুন ধরে যায়।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, তখন ঘরের বাইরেই বাসন ধুচ্ছিলেন তরুণীর পিসি। তিনি দু’জনকে আগুন লাগা অবস্থায় দেখে সামনে রাখা দুই বালতি জল ওই দু’জনের গায়ে ছুড়ে দেন। তখনই ঘরের পিছনের একটি গলি দিয়ে পালিয়ে যায় ওই যুবক। এর পরে ওই তরুণীর গায়ে কাপড়-কম্বল চেপে আগুন নেভানোর চেষ্টা হয়। চেঁচামেচিতে চলে আসেন প্রতিবেশীরাও। তাঁরাই ওই তরুণীকে হাসপাতালে নিয়ে যান। আসে বেলুড় থানার পুলিশ। এ দিন হাসপাতালে ঢোকার সময়ে তরুণী বলেন, ‘‘ও আমাকে প্রেম আর বিয়ের জন্য অনেক দিন ধরেই বিরক্ত করছিল।’’

পুলিশকে অভিযোগে ওই তরুণীর পরিবার জানিয়েছে, বেশ কয়েক মাস ধরেই পড়তে যাওয়ার সময়ে ওই তরুণীর পিছনে ধাওয়া করত যুবকটি। প্রেম নিবেদনও করেছিল। কিন্তু তরুণী রাজি হননি। শেষে বিয়ের জন্য উত্ত্যক্ত করতে শুরু করে সে। কয়েক দিন আগে ওই যুবককে এর জন্য বকাবকিও করেছিলেন স্থানীয়েরা। স্থানীয় সূত্রের খবর, কয়েক বছর আগেও স্থানীয় এক তরুণী প্রেমে রাজি না হওয়ায় তাঁর গায়ে অ্যাসিড ছোড়ার অভিযোগ উঠেছিল ওই যুবকের বিরুদ্ধে।

এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, ওই কলোনির সামনে প্রতিবেশীদের জটলা। তরুণীর ঘরের সামনে পড়ে রয়েছে পোড়া কাপড়-কম্বল, চেয়ার। ঘটনাস্থল থেকে একটি পোড়া প্লাস্টিকের বোতল উদ্ধার করেছে পুলিশ। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের অনুমান, ওই বোতলে ভরেই পেট্রোল নিয়ে এসেছিল যুবকটি। বোতলটি বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ। ওই তরুণীর পিসি বলেন, ‘‘দু’জনের গায়ে আগুন দেখে চমকে গিয়েছিলাম। জল দিতেই ছেলেটা পালিয়ে যায়। আমি ভাইঝিকে বাঁচাতে ঝাঁপিয়ে পড়ি। তখন ভাইঝি বলে, ছেলেটাই ওর গায়ে আগুন দিয়েছে।’’

এ দিন হাসপাতালে গিয়ে ওই তরুণীর সঙ্গে কথা বলেন হাওড়া সিটি পুলিশের কর্তারা ও মহিলা অফিসারেরা। পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘অভিযোগের ভিত্তিতে খুন ও ধর্ষণের চেষ্টার মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু করা হয়েছে।’’