পরিবেশই থিম। ভাগাড় ধার পুজো কমিটি। ছবি: তাপস ঘোষ।
চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজোর শোভাযাত্রাকে কলকাতার দুর্গাপুজোর ভাসানের মডেল করার কথা ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ বার চন্দননগরের পরিবেশপ্রেমীরা দাবি তুলছেন, জগদ্ধাত্রী পুজোর পরিবেশ-বান্ধব ভাবনাকে সঙ্গী করুক রাজ্যব্যাপী থিমপুজোর উদ্যোক্তারা।
চন্দননগরে পুজোর শুরু থেকে বিসর্জনের শোভাযাত্রা— প্রতিটি পর্বে দূষণ এড়াতে সমবেত ভাবে বিভিন্ন সংগঠন কাজ করে। গঙ্গাদূষণ এবং পরিবেশ রক্ষার কাজও করে নানা সংগঠন। শহরের কেন্দ্রীয় পুজো কমিটির আওতায় থাকা উদ্যোক্তাদের মানতে হয় নিজস্ব গাইডলাইন। সেখানে পথ নিরাপত্তা, প্রতিমা এবং মণ্ডপে রঙের ব্যবহার, শব্দদূষণ নিয়ে রয়েছে পরিবেশকে বাঁচানোর নানা আয়োজন। এক সময় চন্দননগরের বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠন যা প্রচার করে পুজো উদ্যোক্তাদের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ করেছিলেন, ক্রমেই এখন তা অভ্যাসে পরিণত হয়ে গিয়েছে।
আর মুখ্যমন্ত্রী এ বার শহরে পুজোর উদ্বোধন করতে এসে শোভাযাত্রার মডেল নিয়ে তাঁর ভাবনার কথা জানানোর পরে উৎসাহিত হয়েছেন শহরের পরিবেশপ্রেমীরা। এ শহরের বাসিন্দা পরিবেশবন্ধু বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমরা চাইছি চন্দননগর হয়ে উঠুক পরিবেশ-বান্ধব উৎসবের মডেল। যা শুধু এই রাজ্যে নয়, ভারতেও ছড়িয়ে প়ড়ে সেই লক্ষ্যে পরিবেশ আদালতের কাছে আমরা আবেদন করব।’’
২০০০ সালে কলকাতা হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল, প্রতিমার কাঠামো গঙ্গায় ফেলে রেখে দূষণ বন্ধ করতে হবে। এই বিষয়ে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদকেও দ্রুত রূপরেখা তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু গঙ্গাদূষণ রুখতে ঠিক কোনও মডেলে কাজ হবে তা ভেবে পাচ্ছিলেন না সরকারি কর্তারা। সেই সময় চন্দননগরের ‘সবুজের অভিযান’ সংস্থা এবং চন্দননগর পুরসভার কর্মীরা গঙ্গাদূষণ নিয়ন্ত্রণের কাজ করেন। তাঁদের সেই কাজ দেখতে জগদ্ধাত্রী পুজোর ভাসানের দিন দিল্লি থেকে কেন্দ্রীয় দূর্ষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান হাজির হন। পরে শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, বিসর্জনে চন্দননগর-মডেলই সারা ভারতে গঙ্গাকে দূষণমুক্ত করতে ব্যবহার করা হয়।
পুলিশের এই নজরদারি থাকবে ভাসানেও। ছবি: তাপস ঘোষ।
শুধু গঙ্গা বাঁচাতে নয়, পরিবেশগত ভাবনায় এই রাজ্যে চন্দননগর আগাগোড়াই এগিয়ে। চন্দননগর পরিবেশ উন্নয়ন সমিতি প্রথম পুজো উদ্যোক্তাদের জন্য ‘বসুন্ধরা’ পুরস্কার চালু করে। যে সব পুজো-উদ্যোক্তা পরিবেশ সচেতনতার নিদর্শন রাখেন, তাঁদের পুরস্কার দেওয়া এখন প্রায় রেওয়াজ হয়ে গিয়েছে। চিরাচরিত টুনির আলোর পরিবর্তে বেশ কয়েক বছর আগে চন্দননগরে এলইডি আলোর ব্যবহার চালু করেন এক পুজো উদ্যোক্তা। তা পরিবেশের উষ্ণতার ক্ষেত্রে যেমন সহায়ক, তেমনই বিদ্যুতের খরচ বা ব্যবহার উভয়ই কম হয়। কমে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে দুর্ঘটনার মাত্রাও। সিসাহীন রঙের ব্যবহার চন্দননগর থেকেই শুরু হয়। এলইডি আলো পুজোর থিমে ঢুকে পড়ায় চন্দননগর ভাসানেও এখন কম জেনারেটর ব্যবহার করা হয়। এ বার কেন্দ্রীয় পুজো কমিটর তরফে ভাসানে অংশ নেওয়া প্রতিটি উদ্যেক্তাকে অনুরোধ করা হয়েছে পরিবেশ-বান্ধব জেনারেটরের ব্যবহারের প্রশ্ন।
নিয়ন্ত্রণ করা গিয়েছে যেমন অনেক কিছুই, কিন্তু এখনও আরও অনেক পথ পার হওয়া বাকি আছে বলে মনে করেন চন্দননগরে পরিবেশ নিয়ে যাঁরা কাজ করছেন, তাঁদের অনেকেই। চন্দননগরে পুজোর দিনগুলিতে গড়ে আড়াই থেকে তিন লক্ষ দর্শনার্থী আসেন বলে পুলিশের পরিসংখ্যানই বলছে। তাতে প্রচুর বর্জ্য হয়। সেই কারণেই শহরে বিশেষত পুজোর সময় প্লাস্টিক ব্যবহার নিষেধ করা জরুরি বলে মনে করেন অনেকেই। তার উপর বহু মানুষ পুজোর দিনগুলিতে শহরে আসায় সেই সংখ্যায় শৌচাগার নেই। শহহরের বিভিন্ন প্রান্তে আরও বেশি সংখ্যায় শৌচাগারও প্রয়োজন বলে মনে করেন পরিবেশবাদীরা। পরের বছর পুজোর আগে এ ব্যাপারে উদ্যোগী হওয়ার আশ্বাস দিয়েছে চন্দননগরের মেয়র রাম চক্রবর্তী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy