“জিলিপি-পাঁপড় ভাজা না হলে রথের মেলা জমে না।” বলে উঠল শ্রেয়ান। পিকুর বিস্ময় “পুজোয় কোথায় পাবি এ সব!” শ্রেয়ান বলল সবুর কর। বালির বাদামতলায় পৌঁছে অবাক পিকু। রথের মেলায় বিকোচ্ছে জিলিপি-পাঁপড়। পুরীর রথে দুর্গা পিকু দেখে বুঝল বাদামতলা সর্বজনীনের মণ্ডপে ওরা।
সন্ধ্যা নামছে। বাড়ি ফিরেই পড়তে বসল। পুজোর পরে পরীক্ষায় পরিবেশ নিয়ে রচনা আসতে পারে। এই নিয়ে ভাবছে হাওড়ার কিছু পুজো। মণ্ডপ তৈরির ফেলে দেওয়া উপকরণ মাটিতে মিশে পরিবেশ দূষিত হয়। সালকিয়ার পুজো আলাপনী তাই শোলা শিল্প ও নকশি কাঁথার আধারে বিভিন্ন জৈবিক উপাদান দিয়ে করছে মণ্ডপসজ্জা। পিছিয়ে নেই সালকিয়ার ছাত্র ব্যায়াম সমিতি। বসুন্ধরা রক্ষায় দুর্গা এখানে পরী রূপে। ইগলুুর মতো মণ্ডপে ফুটিয়ে তোলা হবে জলসঙ্কট দূরীকরণের চিত্র। সবুজের সন্ধানে শিবপুর নবারুণ সঙ্ঘও। কংক্রিটের জঙ্গলের মাঝে এক টুকরো সবুজের দেশ। সবুজ বাঁচাতে তৎপর শিমুলতলা আমতলা সঙ্ঘশ্রী-ও। মণ্ডপ জুড়ে থাকবে সবুজের খেলা।
পড়া শেষ। টিভিতে বিজ্ঞান নিয়ে অনুষ্ঠান দেখতে বসল দুই ভাই। সৃষ্টির পিছনে কার কী ভূমিকা তাই দেখানো হচ্ছিল। যেমন, পৃথিবী সৃষ্টির পিছনে সূর্যের ভূমিকা। শ্রেয়ান বলল “ছোট মাসির বাড়ির সামনে রামকৃষ্ণপুর ব্যায়াম সমিতির থিমও তো সৃষ্টির অন্তরালে।”
হঠাৎই বাবার কাছে পিকুর বায়না, পুজোয় বাঁকুড়ার পলাশবনীর বাড়ি যাওয়ার। সেখানে পুকুরপাড়ে কাশ ফোটে। বটগাছের পিছনে ঠাকুরদালানে দুর্গাপুজো হয়। বাবা বললেন, “সালকিয়া রামলাল মুখার্জি লেনের অগ্রদূত এ বার পলাশবনীর আদলে মণ্ডপ করছে। বরং ওখানেই যাব।”
সীমিত চিরাচরিত শক্তিকে বাঁচাতে অচিরাচরিত শক্তির ব্যবহার নিয়ে ফের শুরু অনুষ্ঠান। এই ভাবনা ফুটে উঠছে আড়ুপাড়া মিলন সঙ্ঘের পুজোয়। অনুষ্ঠান শেষে পিকু-শ্রেয়ানের মা বললেন, “সাঁওতাল পরগনার এক গ্রামের আদলে এ বার মণ্ডপ সাজাচ্ছে ধর্মতলা পল্লিবাসী বৃন্দ।”
শুতে যাওয়ার আগে ওরা একটা খবর শুনেছে বাবার কাছে। পরীক্ষার পরেই ঘুরতে যাবে অজন্তা-ইলোরা বা গুজরাত। এর ঝলক মিলবে শিবপুর সর্বজনীন দুর্গোৎসবের মণ্ডপে। দুর্গার ন’টি রূপ নিয়ে ইলোরার ১২ নম্বর গুহার আদলে হচ্ছে মণ্ডপ। আবার গুজরাতের অম্বাজী দুর্গা মন্দিরের আদলে মণ্ডপ করছে শিবপুর মন্দিরতলা সাধারণ দুর্গোৎসব।
বেড়ানোর কথা ভাবতে ভাবতেই ঘুমের দেশে হাজির ওরা। অশিক্ষা আর অরাজকতা নামের দুই অসুরকে মেরে ফেলছে পিকু। এ কালের বন্ধু রামেদের সঙ্গে। কী অদ্ভুত কাণ্ড! এই স্বপ্নে সাজছে বালি নবযুব সঙ্ঘ। হাওড়ার সুবল স্মৃতি সঙ্ঘও এ বারের ভাবনায় রেখেছে অকাল বোধন। সে কাল ও এ কালের রাবণ বধ করবে ওরা। স্বপ্নেই মেসোপটেমিয়া সভ্যতায় ঢুকে পড়ল শ্রেয়ান। প্যুঁইলা দাশপাড়া সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির মণ্ডপ ঠিক এমনই।
ভোরে ঘুম ভাঙল ওদের। এ বার পড়তে বসা। বইয়ের ভারে কি শৈশব হারিয়ে যাচ্ছে? এই নিয়ে মণ্ডপ সাজাচ্ছে বালির শান্তিনগর সেবা সমিতি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy