Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

পালিয়ে ধৃত লিলুয়া হোমের ৩৫ মহিলা, সারা দিন ধুন্ধুমার

ফের পাঁচিল টপকে পঁয়ত্রিশ জন আবাসিকের পালানোর ঘটনা ঘটল হাওড়ার লিলুয়া হোমে। পুলিশ জানায়, শুক্রবার সকালে থানায় এই খবর দেন হোম-কর্তৃপক্ষ। যদিও পুলিশি তৎপরতায় সকলকেই উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। গত সোমবারও নারী ও শিশুকল্যাণ দফতরের ওই হোম থেকেই জানলার গ্রিল ভেঙে ২৫ জন বাংলাদেশি মেয়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে দু’জনের এখনও হদিস মেলেনি।

তখনও চলছে বিক্ষোভ। শুক্রবার।

তখনও চলছে বিক্ষোভ। শুক্রবার।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ জুলাই ২০১৪ ০১:৫৪
Share: Save:

ফের পাঁচিল টপকে পঁয়ত্রিশ জন আবাসিকের পালানোর ঘটনা ঘটল হাওড়ার লিলুয়া হোমে। পুলিশ জানায়, শুক্রবার সকালে থানায় এই খবর দেন হোম-কর্তৃপক্ষ। যদিও পুলিশি তৎপরতায় সকলকেই উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। গত সোমবারও নারী ও শিশুকল্যাণ দফতরের ওই হোম থেকেই জানলার গ্রিল ভেঙে ২৫ জন বাংলাদেশি মেয়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে দু’জনের এখনও হদিস মেলেনি।

তবে এ দিন নিখোঁজ হওয়া কিশোরী ও মহিলাদের উদ্ধারের পরেও কার্যত রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় হোম চত্বর। নানা অব্যবস্থার অভিযোগ করে তাণ্ডব চালান প্রায় কয়েকশো আবাসিক। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হোমের ভিতরে বসানো হয় পুলিশ পিকেট।

পুলিশ জানায়, এ দিন সকাল সাড়ে ন’টা নাগাদ হোম কর্তৃপক্ষ বেলুড় থানায় খবর দেন, প্রায় ৩৫ জন আবাসিক পালিয়ে গিয়েছেন। বিশাল পুলিশ বাহিনী গিয়ে হোম চত্বর ঘিরে ফেলে। কিছুক্ষণ পরে পুলিশ জানতে পারে, হোমের পিছন দিকে হনুমানভক্ত মণ্ডল গার্ডেন এলাকার একটি বন্ধ কারখানা ও তার পাশের একটি বহুতলের ভিতরে রয়েছেন ওই আবাসিকেরা। এর পরে পুলিশ বাহিনী আসে মালিপাঁচঘরা থানা থেকেও। দুই থানার পুলিশ মিলে ওই কিশোরী ও মহিলাদের উদ্ধার করে। পুলিশের গাড়ি করেই ওই আবাসিকদের হোমে ফেরত পাঠানো হয়।

কিন্তু হোমের কাছে পৌঁছনোর পরেই শুরু হয় বিক্ষোভ। তাঁরা প্রথমে গাড়ি থেকে নামতে চাননি। উল্টে পুলিশকে জানান, প্রয়োজনে তাঁদের জেলে নিয়ে যাওয়া হোক। কিন্তু হোমে কোনও মতেই তাঁরা থাকবেন না। তাঁদের অভিযোগ, হোমে তাঁদের মারধর করা হয়। ঠিক মতো খেতে দেওয়া হয় না। যোগাযোগ করতে দেওয়া হয় না বাড়ির লোকেদের সঙ্গেও। এমনকী কয়েক জন পুরুষ কর্মী তাঁদের সঙ্গে অশ্লীল আচরণ করে বলেও পুলিশকে অভিযোগ করেন ওই আবাসিকেরা। তাঁদের অভিযোগ, হোমে মোবাইল রাখা নিষিদ্ধ হলেও বেশ কয়েক জন আবাসিকের কাছে মোবাইল রয়েছে।

প্রসঙ্গত, দীর্ঘদিন ধরেই এই হোমকে ঘিরে নানা অভিযোগ উঠেছে, তৈরি হয়েছে বিতর্কও। বেশ কয়েক মাস আগে এই হোমেরই এক অস্থায়ী শিক্ষক অশোককুমার দাসকে শ্লীলতাহানির অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়। বছর কয়েক আগে তৎকালীন সুপার হোমের অ্যাম্বুল্যান্সকে নিজের ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করতেন বলে অভিযোগ উঠেছিল। মাঝেমধ্যেই হোম থেকে আবাসিক পালিয়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটে। যেমন ঘটেছিল গত সোমবারও।

এ দিন ওই আবাসিকদের অভিযোগ শুনলেও পুলিশ তাঁদের হোমের ভিতরে ঢুকিয়ে দেয়। এর পরেই ওই তরুণী ও মহিলারা বিক্ষোভ শুরু করেন। যোগ দেন বাকি আবাসিকেরাও। হোমের মূল দরজা খুলে দেওয়ার জন্য জোরাজুরি করতে থাকেন তাঁরা। পুলিশের দিকে উড়ে আসতে থাকে ইট-পাথর। পরিস্থিতি ক্রমশ নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতে থাকায় বালি, নিশ্চিন্দা ও লিলুয়া থানার পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। পুলিশলাইন থেকেও বহু কর্মীকে নিয়ে আসা হয় ঘটনাস্থলে। কাঁদানে গ্যাসও আনা হয়। ঘটনাস্থলে পৌঁছন হাওড়া সিটি পুলিশের এডিসিপি নর্থ শিবানী তিওয়ারি, এসিপি ডিডি সৌমিক সেনগুপ্তও। তাঁদের ঘিরে ধরেও বিক্ষোভ শুরু করেন হোমের প্রায় ২৪০ জন আবাসিক। ইতিমধ্যে তাঁরা খাওয়াদাওয়া বন্ধ করে দিলে দু’জন অসুস্থ বোধও করতে থাকেন। তাঁদের লিলুয়ার টি এল জায়সবাল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

এ দিন কেন পালিয়ে যান ওই পঁয়ত্রিশ জন আবাসিক? পুলিশ ও হোম সূত্রের খবর, দিন সাতেক আগে হলদিয়া আদালতের নির্দেশে ২৮ জন মেয়েকে লিলুয়া হোমে আনা হয়। ২১ জুলাই তাঁদের দু’জনের আদালতে হাজিরা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তাঁরা

সকলে একসঙ্গে আদালতে যাবেন, এই দাবি তোলেন ওই আবাসিকেরা। সে দিনকার মতো তা মিটে যায়। অভিযোগ, তার পরে এ দিন সকালে হোমে নিজেদের ব্লকেই ফের একই দাবিতে বিক্ষোভ-ভাঙচুর শুরু করেন ওই ২৮ জন। এমনকী কর্মীদের উপরেও তাঁরা চড়াও হন। সঙ্গে যোগ দেন আরও বেশ কয়েক জন আবাসিকও। অন্য আবাসিকদের দাবি, প্রাণে বাঁচতে ওই ব্লকের দরজা খুলে দেন হোমের কর্মীরাই। তার সুযোগ নিয়ে হোমের পিছনের একটি ভাঙা পাঁচিল সংলগ্ন বটগাছে উঠে চম্পট দেন ওই ২৮ জন-সহ মোট পঁয়ত্রিশ জন আবাসিক। তাঁদেরকে পরে পুলিশ ফিরিয়ে আনলে ফের শুরু হয়ে যায় বিক্ষোভ।

এ দিন সকালেই ঘটনার খবর পেয়ে গিয়েছিলেন রাজ্যের নারী ও শিশুকল্যাণ দফতরের মন্ত্রী শশী পাঁজা। তাঁর নির্দেশেই দুপুরে ঘটনাস্থলে যান হাওড়া মহকুমাশাসক (সদর) বাণীপ্রসাদ দাস এবং নারী ও শিশু কল্যাণ দফতরের জেলার আধিকারিকেরা। পৌঁছে যান রাজ্যের হোম পরিদর্শন কমিটির এক সদস্যও। মন্ত্রী শশী পাঁজা বলেন, “জেলা শাসক ও পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে সকাল থেকেই কথা হয়েছে। হলদিয়া থেকে যে মেয়েরা এসেছেন, তাঁরা থাকতে চাইছেন না বলেই অব্যবস্থার অজুহাত দিচ্ছেন।” আর মহকুমাশাসক বলেন, “ওই ২৮ জন আবাসিক একসঙ্গে আদালতে যেতে চান। তা আমাদের পক্ষে সম্ভব হয়নি। বিষয়টি হলদিয়ার জেলা জজকে জানিয়েছি।”


বিক্ষোভের পরে।

মন্ত্রী আরও জানান, বাংলাদেশি ২৫ জন আবাসিকের মধ্যে ১৩ জনকে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ। বাকিদের ক্ষেত্রে প্রক্রিয়া কতটা এগিয়েছে, তা জানতে রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। নারী ও শিশুকল্যাণ দফতর সূত্রে খবর, ওই হোমে বেশ কিছু জানলা-দরজা বেহাল। সেগুলো ভেঙেই আবাসিকেরা পালান। তাই এ দিন বিকেলের থেকে সেগুলি মেরামতির কাজ শুরু করেছে পূর্ত দফতর। এ দিন বিক্ষোভের জেরে অসুস্থ আবাসিকদের জন্য পাঠানো হয়েছে মেডিক্যাল টিম। বসানো হয়েছে মহিলা পুলিশ পিকেট।

—নিজস্ব চিত্র

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

liluah home demonstration home inmates
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE