Advertisement
০৫ মে ২০২৪
আরামবাগ-তারকেশ্বর

বৃষ্টির সঙ্গে নদীর জলও ঢুকছে গ্রামে, ডুবছে খেত

টানা বৃষ্টি আর ডিভিসি-র ছাড়া জল, এই দুই সাঁড়াশি চাপে হুগলির আরামবাগ মহকুমা এবং তারকেশ্বর ব্লকের গ্রামীণ নিচু এলাকায় জল ঢুকতে শুরু করেছে। ভাঙছে মাটির বাড়ি।

তারকেশ্বরের কেশবচক পঞ্চায়েতের নচিপুরে দামোদরের ভাঙন। ছবি: দীপঙ্কর দে।

তারকেশ্বরের কেশবচক পঞ্চায়েতের নচিপুরে দামোদরের ভাঙন। ছবি: দীপঙ্কর দে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
আরামবাগ শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০১৫ ০১:৫৬
Share: Save:

টানা বৃষ্টি আর ডিভিসি-র ছাড়া জল, এই দুই সাঁড়াশি চাপে হুগলির আরামবাগ মহকুমা এবং তারকেশ্বর ব্লকের গ্রামীণ নিচু এলাকায় জল ঢুকতে শুরু করেছে। ভাঙছে মাটির বাড়ি। চন্দননগরের তারকেশ্বর ছাড়াও কয়েকটি ব্লকে চাষের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছেন চাষিরা। কেননা, সব্জি পচছে জমির জমা জলে। বাড়ছে সব্জির দর।

তবে, রাজ্যের সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের আশ্বাস, ‘‘ডিভিসি-র সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। ডিভিসি পর্যায়ক্রমে ২৫ হাজার কিউসেক করে জল ছাড়ছে। এখনই বড় কোনও বিপদের আশঙ্কা নেই আরামবাগে।’’

সেচমন্ত্রী আশ্বস্ত করলেও আরামবাগের মুণ্ডেশ্বরী এবং দামোদরের জল এখন প্রায় বিপদসীমা ছুঁয়েছে। তার জেরে খানাকুলের দু’টি ব্লক, পুড়শুড়া, আরামবাগ ব্লকের কিছু এলাকা এবং গোঘাট-১ ব্লকের নকুন্ডা ও শ্যাওড়া পঞ্চায়েত এলাকায় জমির উপরে প্রায় ৩ ফুট জল দাঁড়িয়ে গিয়েছে। চাষের বীজতলা নষ্ট হতে বসেছে। জমির জল নেমে গেলে ফের বীজতলা তৈরি করে আর ধান চাষ করা যাবে না বলেই ক্ষতির আশঙ্কায় গ্রামবাসীরা। গোটা পরিস্থিতি নিয়ে আরামবাগের মহকুমাশাসক প্রতুলকুমার বসু বলেন, ‘‘নতুন করে ডিভিসি-র জল ছাড়ার কোনও খবর নেই। মাঠের জমা জল ধীরে হলেও নামছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ খতিয়ে দেখার প্রক্রিয়া চলছে।’’

সংশ্লিষ্ট ব্লক প্রশাসনগুলি সূত্রে জানা গিয়েছে, নদীগুলি কানায় কানায় পূর্ণ থাকায় বৃষ্টির জমা জল নামতে পারছে না। উল্টে, নদীর জলই বিভিন্ন খালের সংযোগ মুখ দিয়ে ঢুকে যাচ্ছে মাঠে। এই বাড়তি বিপদ থেকে রক্ষা পেতে পুড়শুড়া এবং খানাকুলের দু’টি ব্লকের অনেক জায়গায় স্লুইস গেট বন্ধ করে রাখা হয়েছে। তার জেরে জল না বাড়লেও মাঠের জমা জল নামার পথ অনেক জায়গাতেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে। মাঠে সদ্য রোপণ করা আমন ধান এবং সব্জি চলে গিয়েছে জলের তলায়। খানাকুলে বাদাম চাষের বহু জমি এখন জলের তলায়।

সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি খানাকুল-২ ব্লকে। সেখানকার ১১ টি পঞ্চায়েত এলাকার ৫৩টি মৌজার সব ক’টিই জলমগ্ন। কোথাও কোথাও ৫ ফুট পর্যন্ত জল দাঁড়িয়ে। ব্লক প্রশাসনের কাছে নতিবপুর-১ পঞ্চায়েত এলাকার নদীবাঁধের কয়েকটি দুর্বল জায়গা অবিলম্বে সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন এলাকার মানুষ। সরেজমিনে তদন্তের পর বিডিও অনুপকুমার মণ্ডল বলেন, ‘‘কিশোরী হানা এলাকায় ৫০০ মিটার জুড়ে বাঁধ খুব খারাপ অবস্থায় রয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সেচ দফতরকে বলা হয়েছে।’’ পুরশুড়ার ডিহিবাতপুর, কেলেপাড়া এবং ভাঙ্গামোড়া পঞ্চায়েতের প্রায় ১৬০০ হেক্টর জমির সদ্য রোপণ করা আমন ধান চলে গিয়েছে ৩ ফুট জলের তলায়। যা দু’দিন ডুবে থাকলেই নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে কৃষি দফতরের মত। যে পরিমাণ বৃষ্টি হচ্ছে, তাতে ফের বীজতলা তৈরি করে আমন চাষ আর করা যাবে না বলেই কৃষি বিশেষজ্ঞদের অভিমত।

আরামবাগের পাশাপাশি চন্দননগর মহকুমার তারকেশ্বরের কেশবচক এলাকাও জলমগ্ন হয়েছে। হরিপাল ব্লকের ডাকাতিয়া খাল উপছে চাষের জমিতে জল ঢুকছে। তাতে ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা করছেন চাষিরা। পাশাপাশি, খানাকুল, পুরশুড়া, তারকেশ্বর এবং হরিপালের নিচু এলাকায় বহু মাটির ঘর ভেঙে গিয়েছে। চন্দননগরের মহকুমাশাসক পীযূষ গোস্বামী জানান, তারকেশ্বর এবং হরিপালে জমা জলের কারণে ফসলের কিছুটা ক্ষতির আশঙ্কা থাকছে। তবে, প্রশাসন সতর্ক আছে যে কোনও পরিস্থিতির মোকাবিলায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE