Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

রাস্তা, জল আর নিকাশি চায় পাণ্ডুয়া

যে কোনও শহরের প্রাথমিক শর্ত নাগরিক স্বাচ্ছন্দ্য। কিন্তু সেই নাগরিক স্বাচ্ছন্দ্যকে সুনিশ্চিত করতে পঞ্চায়েত সমিতি আর পঞ্চায়েতি ব্যবস্থার যতই ঢক্কানিনাদ থাক তার সুফল থেকে বঞ্চিত পাণ্ডুয়ার মানুষ। রাস্তা, জল থেকে আলো, নিকাশি---নাগরিক সভ্যতার প্রাথমিক শর্তগুলিই এখানে অদৃশ্য। দীর্ঘদিন ধরে এ সব নিয়ে সরব এখানকার মানুষ। তাঁদের ক্ষোভ, অভিযোগ বার বার সরকারি ব্যবস্থার বিরুদ্ধে আছড়ে পড়লেও পরিস্থিতির পরিবর্তন তাঁদের কাছে আজও স্বপ্ন।

অপরিসর রাস্তায় নিত্য ভোগান্তি যানচালক থেকে পথচারির।

অপরিসর রাস্তায় নিত্য ভোগান্তি যানচালক থেকে পথচারির।

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০১৪ ০১:২৬
Share: Save:

যে কোনও শহরের প্রাথমিক শর্ত নাগরিক স্বাচ্ছন্দ্য। কিন্তু সেই নাগরিক স্বাচ্ছন্দ্যকে সুনিশ্চিত করতে পঞ্চায়েত সমিতি আর পঞ্চায়েতি ব্যবস্থার যতই ঢক্কানিনাদ থাক তার সুফল থেকে বঞ্চিত পাণ্ডুয়ার মানুষ। রাস্তা, জল থেকে আলো, নিকাশি---নাগরিক সভ্যতার প্রাথমিক শর্তগুলিই এখানে অদৃশ্য। দীর্ঘদিন ধরে এ সব নিয়ে সরব এখানকার মানুষ। তাঁদের ক্ষোভ, অভিযোগ বার বার সরকারি ব্যবস্থার বিরুদ্ধে আছড়ে পড়লেও পরিস্থিতির পরিবর্তন তাঁদের কাছে আজও স্বপ্ন।

হুগলি জেলার অন্যতম প্রাচীন এই জনপদে রাস্তার পরিধি এবং মান নিয়ে নাগরিক সমাজের অভিযোগ কোনও নতুন ঘটনা নয়। তার ওপর এর সঙ্গে জুড়ে গিয়েছে পরিকল্পিত নিকাশি ব্যবস্থা না থাকার সমস্যা। বস্তুত, শেরশাহের আমলে তৈরি জেলার তথা রাজ্যের অন্যতম প্রধান দু’টি রাস্তা জিটি রোড এবং দিল্লি রোডই এখনও পর্যন্ত হুগলির সড়ক পরিবহণের মূল স্তম্ভ। রাস্তা তৈরির পর কয়েকশো বছর কেটে গেলেও আজও তা নিয়ে অভিযোগ থেকেই গিয়েছে। প্রায় একই সময়ে তৈরি হলেও দিল্লি রোড তুলনায় অনেক চওড়া। অন্যদিকে, জেলার অধিকাংশ এলাকা জুড়েই জিটি রোডের অবস্থা সরু গলির মতো। রাস্তার দু’পাশে পুরনো নির্মাণ আর হকারদের দাপটে যানজটের কবলে পড়ে নিত্য নাকাল হতে হচ্ছে যানচালক থেকে সাধারণ যাত্রীদের। বেদখল হতে হতে ক্রমেই শ্রী হারিয়েছে ঐতিহাসিক এই রাস্তা।

পাণ্ডুয়ার কলবাজার, হাটতলা, তেলিপাড়া লাগোয়া অপরিসর কালনা রোডে যানবাহনের চাপে যানজট নিত্যদিনের ছবি। রাস্তার উপর একটি প্রাইমারি স্কুল রয়েছে। ঝঁুকি নিয়ে অভিভাবকেরা তাঁদের বাচ্চাদের সেখানে নিয়ে আসেন। তার ওপর প্রায় রাস্তা জুড়েই হরেক কিসিমের হোটেল। সেই সব হোটেল ব্যবহার করা জল এসে পড়ছে জিটি রোডে। কারণ উপযুক্ত নিকাশি নালার অভাব। স্থানীয় ব্যবসায়ী সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছিল প্রতিকার চেয়ে। আজও সেই প্রতিকার পাননি তাঁরা। পাবেনই বা কী করে? কারণ বাসিন্দাদেরই বক্তব্য, যে শহরে পরিকল্পিত নিকাশি ব্যবস্থাই নেই সেখানে শুধুমাত্র স্মারকলিপির ধাক্কায় যে প্রশাসনের টনক নড়বে না ত বলাইবাহুল্য।

বেহাল পানীয় জল।

শুধু নিকাশি নয়, বেঁচে থাকার প্রধান শর্ত যে পানীয় জল তারও প্রভূত অভাব রয়েছে পাণ্ডুয়ায়। এক সময় জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর একটি জল প্রকল্প তৈরি করেছিল বাড়ি বাড়ি পানীয় জল সরবরাহের জন্য। পরিকাঠামোগত কিছুটা ত্রুটি দূর করে এক সময় সেই জল সরবরাহ শুরুও হয়। কিন্তু তাতে দেখা দিল অন্য বিপত্তি। হুকিংয়ের কায়দায় যেখানে সেখানে পাইপ লাইনে থাবা বসিয়ে একশ্রেণির অসাধু মানুষ ঘুরপথে জল টেনে নিতে শুরু করে। ফলে দেখা গেল যারা পানীয় জলের সংযোগ নেওয়ার জন্য টাকা জমা দিয়েছিলেন তাঁরা জল পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। যাঁরা পাচ্ছেন সেখানেও জলের চাপ অত্যন্ত কম। এই অবস্থায় নতুন করে জলের সংযোগ দেওয়া নিয়েও সমস্যা দেখা দিয়েছে। পরিস্থিতির মোকাবিলায় প্রশাসনিক আশ্বাস মিললেও তাতে কাজ হয়নি।

স্বাস্থ্য পরিষেবার ক্ষেত্রেও সমস্যা থেকে গিয়েছে। জিটি রোডের গা-ঘেঁষে রয়েছে পাণ্ডুয়া গ্রামীণ হাসপাতাল। কিন্তু হাসপাতালের পরিকাঠামোয় খামতি থেকে গিয়েছে। রয়েছে চিকিত্‌সার সরঞ্জামের অভাব। আর সেই সুযোগে গজিয়ে উঠেছে হাসপাতালের কাছেই বেড়ে গিয়েছে নার্সিংহোমের সংখ্যা। বিশেষ পরিস্থিতিতে নিরুপায় রোগী সেখানেই যেতে বাধ্য হন চড়া গুনাগার দিয়ে। কেন না অন্তত ৩০ কিলোমিটার দূরে জেলা সদর চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতাল। আরও পথ পেরিয়ে কালনা হাসপাতাল যেতে হলে তাও অন্তত ৪৫ কিলোমিটার দূরে।

পরিকল্পনাহীন নিকাশি।

পাণ্ডুয়ার এক প্রবীণ নাগরিক জানালেন, এই বয়সে ওষুধের প্রয়োজন বড় বেশি দরকার। কিন্তু রাত বিরেতে বা অসময়ে কোনও ওষুধের দোকান এখানে খোলা পাওয়া যায় না। রাজ্য সরকার নানা হাসপাতালে সুলভে ওষুধের দোকান করছে। পাণ্ডুয়ায় তার বিশেষ প্রয়োজন। আর এক বাসিন্দা প্রবীণ শিক্ষক তপন ভট্টাচার্য বলেন, “চিকিত্‌সা পরিষেবা মানুষের জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। পাণ্ডুয়ায় চিকিত্‌সা পরিষেবার যে হাল তাতে অবিলম্বে প্রশাসনের এ দিকে নজর দেওয়া উচিত।”

তবে হাজারো অপ্রাপ্তি নিয়েও পাণ্ডুয়ার নাগরিক জীবন বয়ে চলেছে। বয়ে চলেছে এই আশায়, একদিন অবশ্যই তাঁদের চাহিদা মর্যাদা পাবে।

ছবিগুলি তুলেছেন তাপস ঘোষ।
(চলবে)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE