নিমাইতীর্থ ঘাটে চলছে সিসিটিভি বসানোর কাজ।--নিজস্ব চিত্র।
আজ থেকে তারকেশ্বরে শুরু শ্রাবণী মেলা। মেলায় আগত পুণ্যার্থীদের যাতে কোনওরকম সমস্যা না হয়। তাঁরা যাতে অসুূবিধায় না পড়েন সে জন্য জেলা প্রশাসনের তরফে নেওয়া হয়েছে নানা ব্যবস্থা।
তারকেশ্বর যাওয়ার পথে বৈদ্যবাটিতে গঙ্গার নিমাইতীর্থ ঘাটে জলযাত্রীদের হয়রানি রুখতে ব্যবসায়ীদের সচিত্র পরিচয়পত্র চালু হচ্ছে। ওই পরিচয়পত্র ছাড়া কেউ ঘাটে নেমে পুজোর সামগ্রী বিক্রি করতে পারবেন না। ঘাটে এবং সংলগ্ন রাস্তায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করতে সিসিটিভির সংখ্যা বাড়ানোর কথা ভাবছে পুলিশ-প্রশাসন। তারকেশ্বর মন্দির চত্বর এবং আশপাশেও জলযাত্রীদের স্বাচ্ছ্যন্দের জন্য নানা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে প্রশাসনের তরফে।
প্রতি বছর শ্রাবণী মেলায় লক্ষ লক্ষ ভক্তের সমাগম হয় তারকেশ্বরে। মহিলার সংখ্যাও থাকে প্রচুর। প্রতিবারই ভিড়ের সুযোগে চুরি-কেপমারি থেকে শুরু করে মহিলাদের শ্লীলতাহানির অভিযোগ--কিছুই বাদ থাকে না। ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে পূণ্যার্থীদের হয়রানির অভিযোগও বহু পুরনো। গত কয়েক বছর ধরেই এই সব সমস্যা মোকাবিলায় তৎপর প্রশাসন। তবে, জলযাত্রীদের হয়রানি এবং চুরি-ছিনতাইয়ের অভিযোগ রয়েছেই। পুলিশ এবং পুর কর্তৃপক্ষের একাংশের বক্তব্য, পুজোর সামগ্রী বিক্রি করতে প্রচুর অচেনা লোক ঘাটে ভিড় করেন। স্থানীয় ভাবে এঁদের ধরনধার বলা হয়। অনেক সময় সেই ভিড়ে চোর-ছিনতাইকারীরা মিশে থাকে বলে অভিযোগ। সম্প্রতি পুলিশ-প্রশাসন এবং পুর-কর্তৃপক্ষের সঙ্গে নিমাইতীর্থ মেলা কমিটির প্রতিনিধিদের একপ্রস্থ বৈঠক হয়। সেখানেই ধরনধারদের পরিচয়পত্র দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ওই পরিচয়পত্র দিচ্ছে মেলা কমিটি। কমিটির সম্পাদক সুশান্ত মুখোপাধ্যায় বলেন, “ওই কার্ড ছাড়া ঘাটে নেমে কোনও কিছু বিক্রি করা যাবে না।” অন্যান্য ব্যবস্থার মধ্যে ইতিমধ্যেই পূণ্যার্থীদের মধ্যে মহিলাদের পোষাক পরিবর্তনের জন্য প্রসাধন কক্ষ এবং শৌচাগার তৈরি হয়েছে। পুর-কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, মেলায় দিনে শ’দুয়েক সিভিক পুলিশ ও গ্রিন পুলিশ নামানো হবে। ভিড় সামাল দেওয়ার পাশাপাশি পূণ্যার্থীদের সাহায্য করবেন তাঁরা। যানজট নিয়ন্ত্রণেও তাঁদের কাজে লাগানো হবে।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, গঙ্গায় নজরদারি চালানোর জন্য এ বারও স্পিড বোট, লঞ্চের ব্যবস্থা থাকবে। পূণ্যার্থীদের সচেতন করতে নৌকায় মাইকিং করা হবে। জলপথে যে সব পূণ্যার্থী আসবেন, তাঁদের সুবিধার্থে তৈরি হচ্ছে অস্থায়ী জেটিঘাট। ঘাটে থাকছে সিসিটিভি এবং আলোর ব্যবস্থা। নিমাইতীর্থ ঘাটে এবং বৈদ্যবাটি চৌমাথায় জায়ান্ট স্ক্রিন বসানো হচ্ছে। জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, “ঘাটে কেউ কোনও অশোভন আচরণ করলে, তা ক্যামেরার নজর এড়াতে পারবে না।”
বৈদ্যবাটির পুরপ্রধান অজয়প্রতাপ সিংহ বলেন, “ঐতিহ্যপূর্ণ এই শহর এবং নিমাইতীর্থ ঘাটে যাতে কোনও ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, সে দিকে কড়া নজর রাখা হবে। মহিলা জলযাত্রীদের সুবিধার জন্য পর্যাপ্ত মহিলা সিভিক এবং গ্রিন পুলিশ নামানো হবে।” তিনি আরও জানান, কোনও পূণ্যার্থী অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে চিকিৎসাকেন্দ্রে পাঠানোর জন্য। গত বছর পর্যন্ত একটি অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা ছিল। এ বার আরও একটি অ্যাম্বুল্যান্স রাখা হচ্ছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, তারকেশ্বর মন্দির চত্বরও সিসিটিভি-র নজরদারিতে থাকবে। দুধপুকুরে থাকবে লাইফবোট। থাকছে মেডিক্যাল টিম। মেলার দিনগুলিতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পরিষেবা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানি।
তারকেশ্বরের পুরপ্রধান স্বপন সামন্ত জানান, এক মাস ব্যাপী মেলায় ২৪ ঘণ্টা পানীয় জল সরবরাহের ব্যবস্থা করবে পুরসভা। ব্যবস্থা করা হয়েছে পর্যাপ্ত শৌচাগারের। মন্দির চত্বর-সহ গোটা এলাকা সব সময় পরিষ্কার রাখার ব্যবস্থা করা হবে। জলযাত্রীদের নিরাপত্তায় এবং যে কোনওরকম দুষ্কর্ম রুখতে জেলা এবং রেল পুলিশের পাশাপাশি সিভিক পুলিশ মোতায়েন করা হবে।”
যা ব্যবস্থা হয়েছে
• অবাঞ্ছিত লোকজন আটকাতে নিমাইতীর্থ ঘাটের ব্যবসায়ীদের জন্য চালু হয়েছে পরিচয়পত্র।
• ঘাটে থাকছে সিসিটিভির কড়া নজরদারি
• পূণ্যার্থীদের সুবিধার জন্য শ’দুয়েক সিভিক পুলিশ এবং গ্রিন পুলিশ নামানো হবে।
• জলপথে আসা পূণ্যার্থীদের সুবিধার জন্য অস্থায়ী জেটি।
• দুধপুকুরে থাকবে লাইফবোট। থাকবে মেডিক্যাল টিম।
• এক মাসের মেলায় ২৪ ঘণ্টা পানীয় জল ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ব্যবস্থা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy