Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

সন্তানকে কুয়োয় ফেলে খুনে দোষী সাব্যস্ত মা

নিজের একরত্তি সন্তানকে কুয়োয় ফেলে খুনের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হলেন মা। বুধবার চুঁচুড়া আদালতের দ্বিতীয় ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টের বিচারক জাহাঙ্গির কবীর মগরার বাসিন্দা ডলি প্রামাণিককে দোষী সাব্যস্ত করেন। আজ, বৃহস্পতিবার তাঁর সাজা ঘোষণা করবেন বিচারক। ছেলের হাঁটাচলা এবং কথা স্বাভাবিক ছিল না বলেই ওই মহিলা রীতিমতো পরিকল্পনা করে তাকে মেরে ফেলেন বলে অভিযোগ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০১৫ ০৩:২৮
Share: Save:

নিজের একরত্তি সন্তানকে কুয়োয় ফেলে খুনের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হলেন মা।

বুধবার চুঁচুড়া আদালতের দ্বিতীয় ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টের বিচারক জাহাঙ্গির কবীর মগরার বাসিন্দা ডলি প্রামাণিককে দোষী সাব্যস্ত করেন। আজ, বৃহস্পতিবার তাঁর সাজা ঘোষণা করবেন বিচারক। ছেলের হাঁটাচলা এবং কথা স্বাভাবিক ছিল না বলেই ওই মহিলা রীতিমতো পরিকল্পনা করে তাকে মেরে ফেলেন বলে অভিযোগ।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনাটি ঘটেছিল ২০০৯ সালের ২০ জুলাই। সেই সময় ওই মহিলা স্বামী অনিল প্রামানিক এবং দুই ছেলের সঙ্গে মগরার মধুসূদনপুর নেতাজি সুভাষ কলোনিতে ভাড়ি থাকতেন। বড় ছেলে অরিন্দমের বয়স ছিল ৬ বছর। আর ছোট ছেলে মৃত্যুঞ্জয়ের ৩ বছর। তার হাঁটাচলা এবং কথা স্বাভাবিক ছিল না।

ঘটনার দিন রাতে দুই ছেলেকে খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেন ডলি। রাত ১২টা নাগাদ স্বামী-স্ত্রীও খাওয়াদাওয়া সেরে শুয়ে পড়েন। রাত সাড়ে ৩টে নাগাদ ডলি স্বামীকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে বলেন, ছোট ছেলেকে পাওয়া যাচ্ছে না। রাতেই দু’জনে বাইরে বেরিয়ে ছেলেটিকে খুঁজতে থাকেন। কিন্তু খোঁজ মেলেনি। পরের দিন ভোরে অনিল পড়শিদের ঘটনার কথা জানান। প্রতিবেশীরাও ছেলেটিকে খোঁজার চেষ্টা করেন। কিন্তু পাওয়া যায়নি। এর পরে স্ত্রী এবং প্রতিবেশীদের নিয়ে অনিলবাবু মগরা থানায় যান নিখোঁজ সংক্রান্ত ডায়েরি করতে। থানায় ঢোকার মুখে ডলি কিন্তু থমকে দাঁড়ান। বলেন, তিনিই মৃত্যুঞ্জয়কে কুয়োয় ফেলে দিয়েছেন। কারণ হিসেবে জানান, ছেলে অনেক দেরি করে হাঁটাচলা শিখছে। কথা বলাও শিখছে অনেক দেরি করে। ফলে, সে স্বাভাবিক নয়। শিশুটির চিকিৎসাও চলছিল। তাই সে ওই কাজ করেছে। ডলির মুখে ওই কথা শুনে সকলে থানায় না ঢুকে গ্রামে ফিরে আসেন। গ্রামবাসীরা কুঁয়োয় নেমে মৃত্যুঞ্জয়ের নিথর দেহ উদ্ধার করে।

এর পরেই অনিলবাবু মগরা থানায় গিয়ে স্ত্রী এবং শাশুড়ি অঞ্জনা গায়েনের বিরুদ্ধে ছেলেকে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন। অঞ্জনাদেবী খুনের ষড়যন্ত্রে সামিল বলে তিনি অভিযোগ করেন। ওই অভিযোগের ভিত্তিতে ডলি এবং অঞ্জনাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। শিশুটির দেহ ময়না-তদন্ত করা হয়। পড়শিরা জানান, ওই ঘটনার আগেও এক বার মৃত্যুঞ্জয়কে কুয়োয় ফেলে দিয়েছিলেন ডলি। প্রতিবেশিরা সে যাত্রা তাকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করতে পেরেছিলেন। কিন্তু তার পরেও রাতের অন্ধকারে চুপিচুপি ঘর থেকে বেরিয়ে ছেলেকে ছুড়ে ফেলে দেন। ফলে, কেউই টের পাননি। পরে ধৃত মা-মেয়ে দু’জনেই জামিনে ছাড়া পান। মামলার তদন্তকারী অফিসার স্বপন মুখোপাধ্যায় ওই দু’জনের বিরুদ্ধেই আদালতে চার্জশিট দেন। চার্জশিটে তাঁদের বিরুদ্ধে খুন, তথ্যপ্রমাণ লোপাট এবং অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়।

মামলার সরকারি আইনজীবী চণ্ডীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, শুনানিতে মোট ৯ জন সাক্ষ্য দেন। সাক্ষ্যদানকারীদের মধ্যে পুলিশ আধিকারিক, ময়না-তদন্তকারী চিকিৎসক এবং এক সাক্ষীর গোপন জবানবন্দি গ্রহণকারী ম্যাজিস্ট্রেটও ছিলেন। শুনানিতে ঘটনা প্রসঙ্গে নয়ডায় আরুষি হত্যাকান্ডের প্রসঙ্গ টানেন চণ্ডীচরণবাবু। বুধবার ডলিকে দোষী সাব্যস্ত করেন বিচারক। তবে তাঁর মা তথ্যপ্রমাণের অভাবে বেকসুর খালাস হয়ে যান। বিচারক ডলির উদ্দেশ্যে বলেন, যে ধরণের অপরাধ তিনি করেছেন, তার সর্বোচ্চ সাজা ফাঁসি অথবা যাবজ্জীবন কারাদন্ড।

বিচারক অপরাধী মাকে কোন সাজা দেন, সেটাই দেখার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE