বাসের চাকার হাওয়া খুলে দিচ্ছেন বন্ধ সমর্থকেরা। উলুবেড়িয়ায়।
সুনসান মুম্বই রোড। শুধুমাত্র যাত্রীহীন ফাঁকা সরকারি বাস ছুটছে। দেখা মেলেনি অধিকাংশ রুটের বেসরকারি বাস, অটো, ট্রেকার এবং ছোট গাড়ির। ঝাঁপ বন্ধ ছিল অধিকাংশ দোকানপাটের। বাজার বসেছে নামমাত্র। বুধবার ১১টি কেন্দ্রীয় শ্রমিক সংগঠনের ডাকা শিল্প ধর্মঘটে হাওড়া গ্রামীণ এলাকায় এটাই ছিল সার্বিক ছবি। এদিন ডোমজুড় এবং শ্যামপুর থেকে ২২ জন বন্ধ সমর্থককে পুলিশ গ্রেফতার করে। ডোমজুড়ে ধৃতদের মধ্যে ছিলেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা সিপিএম নেতা মোহন্ত চট্টোপাধ্যায়।
এদিন সকাল থেকেই মুম্বই রোডে গাড়ি কার্যত উধাও হয়ে যায়। আমতা, উদয়নারায়ণপুর, ডোমজুড়, শ্যামপুর, উলুবেড়িয়া প্রভৃতি এলাকাতেও দেখা যায় একই চিত্র। সাঁকরাইলের ধূলাগড় পাইকারি বাজারে বেচাকেনা প্রায় হয়নি বললেই চলে। বাগনান, আমতা, শ্যামপুর, প্রভৃতি এলাকায় বাসস্ট্যান্ডগুলি ছিল কার্যত ফাঁকা। বিভিন্ন রুটের বেসরকারি বাস চলাচল বন্ধ ছিল। অধিকাংশ রুটের অটো রিকশা, ট্রেকার এবং ছোট গাড়ি চলাচল বন্ধ ছিল। তবে চলাচল করেছে বিভিন্ন রুটের সরকারি বাস। বাগনান-ধর্মতলা, আমতা-ধর্মতলা, গাদিয়াড়া ধর্মতলা রুটের সিটিসি বাসও চলেছে। অন্যদিনে তুলনায়ে এদিন বাসের সংখ্যা বেশি ছিল। কিন্তু সেগুলিতে যাত্রী ছিল হাতে গোনা।
সিপিএমের হাওড়া জেলা সম্পাদক বিপ্লব মজুমদার বলেন, ‘‘মানুষ স্বতস্ফূর্তভাবে বন্ধ সমর্থন করেছেন। শাসক দলের হুমকি উপেক্ষা করেই মানুষ বন্ধে সাড়া দিয়েছেন।’’ তৃণমূল কংগ্রেসের হাওড়া সদর সভাপতি তথা রাজ্যের কৃষি বিপণনমন্ত্রী অরূপ রায়ের দাবি, ‘‘সিপিএম মানুষকে বাইরে বেরোতে বাধা দিয়েছিল। কিন্তু মানুষ এই হুমকি মানেনি। অফিস, আদালত, কল-কারখানায় মানুষ গিয়েছেন। তাঁরা বন্ধ ব্যর্থ করেছেন।’’ একই বক্তব্য দলের হাওড়া গ্রামীণ সভাপতি তথা উলুবেড়িয়া দক্ষিণ কেন্দ্রের বিধায়ক পুলক রায়েরও।
সাঁকরাইলে বন্ধ বেসরকারি বাস।
দক্ষিণ-পূর্ব রেলের হাওড়া-খড়্গপুর শাখায় বীরশিবপুর স্টেশনে সকাল ৮ টা থেকে ঘণ্টাখানেক রেল অবরোধ করেন বন্ধ সমর্থকেরা। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে অবরোধ উঠে যায়। এ ছাড়া সারাদিন নিয়মিতই ট্রেন চলাচল করলেও যাত্রীসংখ্যা কম ছিল লোকাল ট্রেনগুলিতে।
উলুবেড়িয়ার শিল্পাঞ্চলে চটকলগুলি খোলা থাকলেও শ্রমিকদের হাজিরা ছিল কম। একই অবস্থা দেখা গিয়েছে বীরশিবপুরের শিল্পতালুকে। এখানেও হাজিরা কম ছিল শ্রমিকদের। উলুবেড়িয়া মহকুমাশাসকের কার্যালয়ে ৯০ শতাংশ আধিকারিক ও কর্মচারি হাজির ছিলেন বলে দাবি করেছেন মহকুমাশাসক নিখিল নির্মল। জেলা জুড়ে বিভিন্ন এলাকায় অধিকাংশ দোকান বন্ধ ছিল। বাজারগুলি বসলেও ক্রেতা ছিল কম। মাছের বাজারগুলিতে অধিকাংশ স্টল ছিল বন্ধ।
এদিন সকালে ডোমজুড় থেকে গ্রেফতার করা হয় সিপিএম নেতা তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী মোহন্ত চট্টোপাধ্যায়-সহ ১৪ জন সিপিএম নেতা-কর্মীকে। পুলিশের অভিযোগ, মোহন্তবাবু পিকেটিং করে জোর করে গাড়ি বন্ধ করছিলেন ও দোকান বন্ধ করানোর চেষ্টা করছিলেন। হাওড়া জেলা সিপিএমের পাল্টা দাবি, কোনও পিকেটিং হয়নি বা জোর করে দোকান এবং গাড়ি চলাচল বন্ধও করা হয়নি। পুলিশ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবেই মোহন্তবাবুকে গ্রেফতার করে। ধৃতদের হাওড়া আদালতে তোলা হলে তাঁরা জামিনে ছাড়া পান। অন্যদিকে শ্যামপুরের গাড়ির কাচ ভাঙার অভিযোগে দেওড়া থেকে আট সিপিএম সমর্থককে পুলিশ গ্রেফতার করে। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ধৃতেরা।
ছবি: সুব্রত জানা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy