প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার লম্বা একটি খাল দীর্ঘদিন ধরেই হাওড়ার শ্যামপুর ব্লকের দু’টি পঞ্চায়েতের দুশ্চিন্তার কারণ। কেননা, খালে কোনও স্লুইস গেট না থাকায় জোয়ারের সময়ে বা বর্ষায় জল ঢুকে পড়ে লোকালয়ে। প্লাবিত হয় কৃষিজমি। দুর্ভোগের শিকার হন গ্রামবাসীরা। প্রায় ১৫ বছর ধরে সেই খালে একটি স্লুইস গেট এবং পারাপারের জন্য ছোট সেতুর দাবি তুলছেন তাঁরা। দরবার করেছেন নানা মহলে। কিন্তু এখনও তা না হওয়ায় গ্রামবাসীরা হতাশ। প্রশাসনের বিরুদ্ধে উদাসীনতারই অভিযোগ তুলছেন তাঁরা।
আটেশ্বরী নামে ওই খালটির উৎপত্তি বাণেশ্বরপুর-১ পঞ্চায়েতের দক্ষিণ শিবপুর গ্রামের কাছে রূপনারায়ণ থেকে। মালঞ্চবেড়িয়া হয়ে শ্যামপুর ছুঁয়ে তা গুজারপুর পর্যন্ত গিয়েছে। প্রায় ১০০ ফুট চওড়া খালটির উৎসমুখেই ওই স্লুইস গেট এবং তার উপরে সেতুর দাবি গ্রামবাসীদের। সেচ দফতর অবশ্য ওই প্রকল্পের কাজ শীঘ্রই শুরু করার আশ্বাস দিয়েছে।
দক্ষিণ শিবপুর, গাদিয়াড়া, আমবেড়িয়া, চাউলখোলার মতো বাণেশ্বরপুর-১ পঞ্চায়েতের বেশ কিছু গ্রাম ছাড়াও বাণেশ্বপুর-২ পঞ্চায়েতেরও কিছু গ্রাম রয়েছে ওই খালের ধারে। ওই দুই পঞ্চায়েত এলাকায় ৫০০ একরেরও বেশি জমিতে চাষাবাদ হয়। বহু গ্রামবাসীরই অভিযোগ, গঙ্গা এবং রূপনারায়ণের সংযোগস্থল থেকে খালের উৎপত্তি হওয়ায় জোয়ারের সময়ে খালে প্রচুর জল ঢোকে। খালটি দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় সেই জল উপচে লোকালয় ও কৃষিজমি ভাসায়। নষ্ট হয় চাষ। এমনকী, জল ঢুকে ভেসে যায় পুকুরও। নষ্ট হয় মাছচাষ। তা ছাড়া, জলের ধাক্কায় খালের পাড়ের ভাঙনেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বাড়িঘর। খালের উপর দিয়ে অ্যাম্বুল্যান্স বা গাড়ি পারাপারের ব্যবস্থা না থাকায় কমলপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যেতে গেলে শ্যামপুর থেকে ঘুরে যেতে হয়। তাতে অন্তত এক ঘণ্টা সময় নষ্ট হয়। সমস্যার কথা সব রাজনৈতিক দলই জানে। ভোটের সময়ে সমস্যা মেটানোর ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলি আশ্বাসও দেয়। কিন্তু কাজের কাজ হয় না।
দক্ষিণ শিবপুরের চাষি বসন্ত মণ্ডল বলেন, “এ বারে বর্ষার মরসুমের গোড়ায় প্রচুর বৃষ্টি হওয়ায় খাল উপচে জমিতে এত জল ঢুকেছিল যে বোরো চাষের বীজতলাই নষ্ট হয়ে যায়। পরে অন্য জায়গা থেকে বীজ কিনে এনে ধান চাষ করতে হয়েছে। ভরা কোটালের সময়েও জমি ডুবে যায়।” ওই এলাকারই বাসিন্দা সুবর্ণ সামন্তের বাড়ি খালের পাশেই। তিনি বলেন, “খালে এত বেশি স্রোত যে তার ধাক্কায় বাড়িতে ফাটল ধরে গিয়েছে। সব সময়েই দুর্ঘটনার আশঙ্কায় থাকতে হয়। স্লুইস গেট হলে এবং খালটি সংস্কার করা হলে সমস্যা মিটবে বলে মনে হয়।”
কয়েক বছর আগে গ্রামবাসীদের মনে আশা জাগিয়ে সেচ দফতর খালটির উপরে সেতু ও স্লুইস গেট তৈরির জন্য মাটি পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহ করে। তার পর থেকে আর কিছুই হয়নি। হতাশ হয়ে পড়েন গ্রামবাসীরা। সকলেই চান, চাষ বাঁচাতে এবং গ্রামকে নিরাপদে রাখতে ব্যবস্থা গ্রহণ করুক প্রশাসন।
সেচ দফতরের নিম্ন দামোদর ডিভিশনের এক ইঞ্জিনিয়ার জানিয়েছেন, ওই প্রকল্পের কাজ চলছে। এ জন্য চার কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। গ্রামবাসীদের সমস্যার কথা মেনে নিয়েছেন শ্যামপুরের তৃণমূূল বিধায়ক কালীপদ মণ্ডল। তিনি বলেন, “ওই এলাকায় গ্রামবাসীদের দাবির কথা সেচ দফতরকে জানানো হয়েছিল। শীঘ্রই কাজ শুরু হবে।”
গ্রামবাসীরা বলছেন, না আঁচালে বিশ্বাস নেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy