Advertisement
১১ মে ২০২৪
হাওড়া

‘ধর্ষক’কে ছিনিয়ে গণপিটুনি

ধর্ষণের নির্যাতন তো ছিলই। তার পরে প্রশাসনের গাফিলতিতে কার্যত আরও ৬ ঘণ্টা চরম শারীরিক যন্ত্রণা সহ্য করতে হল তাকে!

আদালতের পথে অভিযুক্ত কালাচাঁদ। — নিজস্ব চিত্র

আদালতের পথে অভিযুক্ত কালাচাঁদ। — নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০১ জুন ২০১৬ ০৪:২২
Share: Save:

ধর্ষণের নির্যাতন তো ছিলই। তার পরে প্রশাসনের গাফিলতিতে কার্যত আরও ৬ ঘণ্টা চরম শারীরিক যন্ত্রণা সহ্য করতে হল তাকে!
সোমবার ১১ বছরের এক বালিকার প্রতি এমনই অমানবিক ঘটনার সাক্ষী থাকল হাওড়া। আর এর প্রতিবাদে মঙ্গলবার দুপুরে উত্তাল হয়ে উঠল হাওড়া হাসপাতাল ও আদালত চত্বর। প্রায় শ’তিনেক বিক্ষুব্ধ মানুষ পুলিশের হাত থেকে অভিযুক্ত ধর্ষণকারীকে ছিনিয়ে নিয়ে রাস্তায় ফেলে বেধড়ক মারধর করেন। তার পরে মোমবাতি মিছিল করে প্রতিবাদ জানালেন পুলিশ প্রশাসন ও হাওড়া হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, সোমবার গোলাবাড়ি থানার মাদারতলা লেনে এক নাবালিকাকে ফ্ল্যাটে ডেকে নিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে শেখ কালাচাঁদ নামে বছর চল্লিশের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। এলাকাবাসীদের অভিযোগ, কালাচাঁদ দাগি দুষ্কৃতী। মাদক ব্যবসার অভিযোগে আগে বহু বার গ্রেফতার হয়েছে সে। ওই দিন দুপুরে ঘটনাটি জানাজানি হলে বাসিন্দারাই কালাচাঁদকে পাকড়াও করে গোলাবাড়ি থানায় নিয়ে যান। নিয়ে যাওয়া হয় ওই নাবালিকাকেও। কিন্তু অভিযোগ, মেয়েটির পরিজনেরা ধর্ষণের অভিযোগ জানাতে গেলে তা নিতে অস্বীকার করে পুলিশ। জানিয়ে দেয়, ‘বড়বাবু’ না এলে এফআইআর করা যাবে না। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রায় চার ঘণ্টা অপেক্ষার পরে দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার এলে পুলিশ অভিযোগ নেয়। ততক্ষণে রক্তক্ষরণের জেরে অসুস্থ হয়ে পড়ে মেয়েটি।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এর পরে থানা থেকে ডাক্তারি পরীক্ষা করতে হাওড়া জেলা হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক না থাকার অজুহাতে মেয়েটিকে প্রায় দু’ঘণ্টা বসিয়ে রাখা হয়। আরও অসুস্থ হয়ে পড়ে সে। আহমেদ তনবীর আখতার নামে এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘ধর্ষণের ঘটনা ঘটে বিকেল সাড়ে তিনটেয়। বিকেল সাড়ে চারটেয় কালাচাঁদকে থানায় নিয়ে যাই। তখন এফআইআর নেওয়া হয়নি। প্রায় ৪ ঘণ্টা পরে রাত সাড়ে ৮টায় বড়বাবু থানায় ঢুকলে অভিযোগ নেওয়া হয়।’’
অভিযোগ অস্বীকার করে হাওড়ার ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (উত্তর) দেবব্রত দাস বলেন, ‘‘সন্ধ্যা ৭টায় থানায় যাই। তখনও ওঁরা অভিযোগ জানাননি। জানানোর সঙ্গে সঙ্গেই অভিযোগ নিয়ে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়।’’
আর এক বাসিন্দা সামসের আলমের অভিযোগ, ‘‘রাত ৯টায় হাসপাতালে যাওয়ার পরে চিকিৎসকেরা দু’ঘণ্টা জরুরি বিভাগে বসিয়ে রাখার পরে ডাক্তারি পরীক্ষা করান এবং ভর্তি নেন।’’ প্রায় ৬ ঘণ্টা বিনা চিকিৎসায় মেয়েটি আরও অসুস্থ হয়ে পড়ে বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের।
অভিযোগ মানতে চাননি হাওড়া হাসপাতালের সুপার নারায়ণ চট্টোপাধ্যায়ও। তিনি বলেন, ‘‘মেয়েটি যখন হাসপাতালে পৌঁছয়, তখন একজনই স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ছিলেন। তিনি প্রসূতি বিভাগে ব্যস্ত থাকায় কিছুটা দেরি হয়, তবে দু’ঘণ্টা নয়।’’
ধর্ষণ ও পরে প্রশাসনের গাফিলতি— এ নিয়ে রাগ জমেই ছিল। মঙ্গলবার ধৃতকে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে নিয়ে এলে সে পাড়ার লোকজনকে গালিগালাজ করে। তখনই ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা পুলিশের থেকে তাকে ছিনিয়ে মারধর শুরু করেন। বিশাল পুলিশবাহিনী এসে পরিস্থিতি সামালায়। পরে আদালতে ঢোকার সময়েও বিক্ষোভ দেখায় জনতা। দুপুরেই মোমবাতি মিছিল করে প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE