Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

লটারি খেলতে গিয়ে চোখের সংক্রমণে আক্রান্ত প্রায় ১৫০

চড়া হ্যালোজেন আলোরর সামনে মঞ্চ তৈরি করে রবিবার রাতে আমতার চাঁদনিতে বসেছিল লটারি খেলার আসর। হাজির ছিলেন কয়েকশো গ্রামবাসী। সেই লটারি খেলে ফেরার পথে চোখের সংক্রমণে আক্রান্ত হলেন অন্তত দেড়শো জন। সোমবার রীতিমতো শিবিরের আয়োজন করে তাঁদের চিকিৎসা করানো হয় আমতা গ্রামীণ হাসপাতালে। তদারকিতে আসেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ভবানী রায়।

আমতা গ্রামীণ হাসপাতালে আক্রান্তেরা। ছবি: সুব্রত জানা।

আমতা গ্রামীণ হাসপাতালে আক্রান্তেরা। ছবি: সুব্রত জানা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
আমতা শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০১৫ ০১:৩১
Share: Save:

চড়া হ্যালোজেন আলোরর সামনে মঞ্চ তৈরি করে রবিবার রাতে আমতার চাঁদনিতে বসেছিল লটারি খেলার আসর। হাজির ছিলেন কয়েকশো গ্রামবাসী। সেই লটারি খেলে ফেরার পথে চোখের সংক্রমণে আক্রান্ত হলেন অন্তত দেড়শো জন। সোমবার রীতিমতো শিবিরের আয়োজন করে তাঁদের চিকিৎসা করানো হয় আমতা গ্রামীণ হাসপাতালে। তদারকিতে আসেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ভবানী রায়। হ্যালোজেনের গ্যাসেই ওই সংক্রমণ বলে তাঁর অনুমান। তবে, কারও বড় কোনও বিপদ নেই বলে জানিয়েছেন তিনি। লটারির আয়োজন করার জন্য সাত জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, স্থানীয় একটি ক্লাবের ব্যবস্থাপনায় ওই আয়োজন করে ঘাটাল এবং আন্দুলের কিছু যুবক। নেতৃত্বে ছিল ঘাটালের বাসিন্দা সৌমেন অধিকারী। পুরস্কার হিসাবে ছিল বাস, ছোট গাড়ি, মোটরবাইক প্রভৃতি। নিয়ম করা হয়, একশো টাকার টিকিট কেটে খেলায় যোগ দেওয়া যাবে। সেইমতো গ্রামবাসীরা টিকিট কেটে খেলায় যোগ নেন।

গ্রামবাসীরা জানান, লটারির বোর্ডে চাকতি ঘুরিয়ে যে নম্বর উঠবে তারই ভিত্তিতে পুরস্কার দেওয়ানোর ব্যবস্থা ছিল। রাত ১২টা নাগাদ খেলা শেষের পরে বাড়ি ফিরে যাওয়ার পরে তাঁদের অনেকের চোখ জ্বালা শুরু হয়। সকালে ঘুম থেকে উঠে চোখ খুলতে পারেননি। ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পরে আক্রান্তরা থানায় লটারির উদ্যোক্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতে যান। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, তাঁদের কথায় পুলিশ কান দেয়নি। সকাল ৯টা নাগাদ তাঁরা আমতা থানার সামনে অবরোধ করেন। গ্রামবাসীদের অভিযোগ পুলিশ অবরোধ তুলতে লাঠি চালায়। পুলিশ অবশ্য লাঠি চালানোর কথা অস্বীকার করেছে। শেষ পর্যন্ত পুলিশের ব্যবস্থাপনাতেই আক্রান্তেরা হাসপাতালে আসেন।

হাসপাতাল সূত্রের খবর, আক্রান্তদের চোখে শুধু জ্বালা করাই নয়, অনেকের চোখ ফুলে গিয়েছিল। চোখ থেকে জল পড়ছিল। ক্রমে ঘটনাটির কথা জানাজানি হতে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের টনক নড়ে। গাববেড়িয়া স্টেট জেনারেল এবং উলুবেড়িয়া মহকুমা হাসপাতাল থেকে চক্ষু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের আনানো হয়।

জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক বলেন, ‘‘বাতি থেকে গ্যাস নির্গত হয়ে এই সংক্রমণ হয় বলে প্রাথমিক ভাবে আমাদের অনুমান।’’ ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ দেখেছে হ্যালোজেন বাতির কাচ ভাঙা। সেখান থেকে গ্যাস বেরিয়ে আসতে পারে বলে চিকিৎসকদের অনুমান।

রাহুল দলুই ও মলয় মালিক নামে দুই গ্রামবাসী বলেন, ‘‘লটারি খেলায় অংশ নিয়েছিলাম। হ্যালোজেনের তীব্র আলোর সামনে খেলা হচ্ছিল। সঙ্গে সঙ্গে কিছু বুঝতে পারিনি। তবে সকালে দেখলাম চোখ জ্বালা করছে। চোখ খুলতে পারছি না।’’

রণবীর রানা নামে এক গ্রামবাসীর থেকে অভিযোগ পেয়ে পুলিশ স্থানীয় একটি বাড়িতে হানা দিয়ে সাত জনকে ধরে। ধৃতদের মধ্যে সৌমেন অধিকারী ছাড়াও রয়েছে তরুণ মণ্ডল নামে এক স্থানীয় বাসিন্দা। তরুণই ক্লাবের সঙ্গে সৌমেনদের দলের যোগাযোগের ক্ষেত্রে মধ্যস্থতা করেছিল বলে পুলিশের দাবি।

থানায় বসে সৌমেন অবশ্য বলেন, ‘‘বাতিতে ত্রুটি থাকলে জেনারেটর-সহ বৈদ্যুতিন সামগ্রী যারা সরবরাহ করেছিল তারাই দায়ী। আমরা নই। আমরা শুধু লটারি খেলানোর আয়োজনে ছিলাম।’’ পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতেরা বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে স্থানীয় কোনও ক্লাবের সঙ্গে যৌথ ব্যবস্থাপনায় লটারি খেলানোর আয়োজন করত। এই ধরনের কাজের কোনও বৈধ অনুমতি তাদের আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ক্লাবের কর্মকর্তাদের খোঁজেও তল্লাশি চলছে। এ দিন হাসপাতালে আসেন উলুবেড়িয়া উত্তর কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক নির্মল মাজি। তিনি বলেন, ‘‘লটারি খেলার আয়োজকদের ধরার জন্য পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য সবরকমের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE