জেলা পরিষদের সামনে বিক্ষোভ। সোমবার তোলা নিজস্ব চিত্র।
টোটোর যাত্রী পরিবহণ নিয়ে নানা অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরেই তুলছিলেন বাস-মালিক ও কর্মীরা। একই রকম অভিযোগ রয়েছে অটো-চালকদেরও। সোমবার এ নিয়ে জেলাশাসকের সঙ্গে আলোচনা করতে চেয়েছিল দু’পক্ষই। কিন্তু জেলাশাসক সম্মত হননি। তার জেরে সোমবার হুগলি জেলা পরিষদের গেটের সামনে বিক্ষোভ তো হলই, আজ মঙ্গলবার থেকে জেলায় অনির্দিষ্টকাল বাস ধর্মঘটেরও ডাক দিল বাস-মালিকদের সংগঠন।
এ ভাবে বাস-মালিকেরা বাস চালানো বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় সাধারণ মানুষ দুর্ভোগে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন জেলা পরিবহণ দফতরের কর্তারা। এ জন্য কড়া পদক্ষেপ করা হবে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। জেলাশাসক সঞ্জয় বনশল বলেন, ‘‘বাস চালানো বন্ধ রাখা হলে চালকদের লাইসেন্স বাতিল করা হবে। গাড়ির বৈধ কাগজপত্র বাজেয়াপ্ত করা হবে।’’
বাস বন্ধের জেরে মানুষের অসুবিধা হওয়ার কথা মেনে নিয়েও জেলা বাস-মালিক সংগঠনের কার্যকরী সভাপতি দেবব্রত ভৌমিক বলেন, ‘‘বাসের রুটে টোটো দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। বাসের যাত্রী কমছে। এ ভাবে চলতে পারে? প্রশাসনের কাছে আমাদের দাবি, বাস রুটে টোটো চালানো, যেখানে সেখানে টোটো-স্ট্যান্ড করা এবং রাস্তার মাঝখানে যাত্রী তোলা যাতে বন্ধ হয়, সেই ব্যবস্থা করা হোক।’’
এ দিন টোটোর বৈধতা নিয়ে প্রশাসনিক বৈঠক হয় জেলা পরিষদ ভবনে। উপস্থিত ছিলেন জেলাশাসক সঞ্জয় বনশল, আঞ্চলিক পরিবহণ অধিকর্তা সৈকত দাস, জেলা পরিষদের সভাধিপতি মেহবুব রহমান, বিভিন্ন পুরসভা ও পঞ্চায়েতের প্রধান ও সদস্যরা। উপস্থিত ছিলেন অটো ও বাসের মালিক এবং কর্মীরাও। বৈঠকে প্রশাসনিক কর্তারা জানিয়ে দেন, টোটো চালানোর ক্ষেত্রে নতুন কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করা হচ্ছে। চার জনের বেশি যাত্রী তারা পরিবহণ করতে পারবে না। এখন থেকে টোটোকে রেজিস্ট্রেশন করাতে হবে। টোটো-চালকদের লাইসেন্স দেওয়া হবে বলে প্রশাসনের তরফে জানানো হয়।
টোটো পরিবেশ-বান্ধব। কিন্তু যাত্রী পরিবহণের ক্ষেত্রে তাদের কোনও বিধিনিষেধ ছিল না। ফলে, দীর্ঘদিন ধরে টোটোর সঙ্গে অটো এবং বাস-চালকদের সংঘাত লেগেই রয়েছে। এ দিন ওই আলোচনার পরে অটো এবং বাস মালিকেরা টোটোর গতিবিধি নিয়ে আলোচনা করতে চান। কিন্তু জেলাশাসক তাতে সম্মতি দেননি বলে অভিযোগ। তাতেই তাঁরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। তাঁদের বক্তব্য, বাস এবং অটোর রুটে যাত্রী পরিবহণ করে টোটো-চালকরা বেআইনি কাজ করছেন। বৈঠক থেকে বেরিয়ে এসে জেলা পরিষদ ভবনের সামনে বাসের শ্রমিক এবং অটোচালকরা পোস্টার হাতে বিক্ষোভ দেখান। বন্ধ করে দেওয়া হয় অটো এবং বাস চলাচল। টোটো-চালকদের যাত্রী তুলতে বাধা দেওয়া হল।
বাস মালিক পাপ্পু সিংহ বলেন, ‘‘বিভিন্ন শহরের নানা প্রান্তে টোটো অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছে কোনও নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে। যেখানে সেখানে স্ট্যান্ড করে যাত্রী তুলছে। তার ধাক্কায় আমাদের লোকসান হচ্ছে। যে টুকু আয় হচ্ছে তা দিয়ে শ্রমিকদের বেতন দেওয়াও অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এই রকম চলতে থাকলে বেশি দিন বাস চালানো অসম্ভব হয়ে পড়বে। বাসের মাধ্যমে পরিবহণ শিল্পটা ধ্বংস হয়ে যাবে।’’
জেলার সুব্রত দাস নামে এক অটোচালক বলেন, ‘‘বাস রুট, অটো রুট এবং জাতীয় ও রাজ্য সড়কে চলাচলের নিষেধ থাকা সত্ত্বেও টোটো সর্বত্রই চলছে। তা ছাড়া এই ব্যাটারি চালিত গাড়ির ব্যাটারি চার্জ করতে বেআইনি ভাবে বিদ্যুতের অপচয় করা হচ্ছে। সে দিকে প্রশাসন কোনও নজর দিচ্ছে না। আর আইনি বেড়াজালে আটকে পড়ে আমাদের রুজিরুটিতে টান পড়ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy