ফাইল চিত্র।
কোন কোন দফতর গত চার বছর ধরে ঠিক কাজ করেনি তা খতিয়ে দেখতে এ বার কাজের পুনর্মূল্যায়ন করবে হাওড়া পুরসভা। পুজোর ছুটির পরেই বিভিন্ন দফতরে নোটিস পাঠিয়ে গত চার বছর ধরে দেওয়া টাকা ও কাজের হিসাব চাওয়া হবে বলে জানিয়েছেন মেয়র রথীন চক্রবর্তী। মেয়র বলেন, ‘‘যে দফতরের হিসেব ও কাজে গাফিলতি দেখা যাবে, সেই সব দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র পারিষদ ও আধিকারিকদের কারণ দর্শাতে বলা হবে। এই রিপোর্ট মুখ্যমন্ত্রী ও পুরমন্ত্রীর কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। তাঁরা যে ব্যবস্থা নিতে বলবেন তাই হবে।’’
দীর্ঘ তিন দশক পরে ২০১৩ সালে বামফ্রন্টের হাত থেকে হাওড়া পুরসভা ছিনিয়ে নেয় তৃণমূল। নতুন বোর্ড গঠিত হওয়ার পরে হাওড়ার উন্নয়নের ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধায়ের নির্দেশে পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম উদ্যোগী হন। রাস্তাঘাট, নিকাশি, জঞ্জাল অপসারণ, পানীয় জল-সহ এলাকা আলোকিত করার উপরে বিশেষ জোর দেওয়া হয়। প্রতিটি দফতরের জন্যই পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ করা হয়। কিন্তু এর পরেও বেশ কিছু দফতরের কাজ নিয়ে নানা দুর্নীতি ও গাফিলতির অভিযোগ ওঠে। ওই সব দফতরের আধিকারিক, এমনকী মেয়র পারিষদকেও অলিখিত ভাবে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে মেয়র নিজেই দায়িত্ব নেন। যেমন, পদ্মপুকুর জল প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা মেয়র পারিষদ অরুণ রায়চৌধুরীকে লাইসেন্স দফতরে পাঠানো হয়। মুখ্যমন্ত্রী হাওড়ার নিকাশি দফতরের ব্যর্থতা নিয়ে বারবার প্রশ্ন তোলায় দফতরের মেয়র পারিষদ শ্যামল মিত্রের থেকেও দায়িত্ব নিয়ে নেওয়া হয়।
এমনকী, দু’টি ক্ষেত্রে দুই মেয়র পারিষদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় তা প্রমাণ হওয়ার আগেই তাঁদের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। বছর দুই আগে এক প্রেমোটার অভিযোগ তোলেন, বিল্ডিং দফতরের দায়িত্বে থাকা মেয়র পারিষদ বাণী সিংহরায় ও রাস্তার দায়িত্বে থাকা বিভাস হাজরা তাঁর কাছ থেকে মোটা টাকা ঘুষ চেয়েছেন। অভিযোগ ওঠার পরেই তাঁদের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। পরে এই অভিযোগ অসত্য প্রমাণিত হলেও তাঁদের দফতর ফিরিয়ে দেওয়া হয়নি।
হাওড়ার পুরকর্তাদের দাবি, পুরসভা দখলের প্রথম দু’বছরের মধ্যেই সিদ্ধান্ত নিয়ে বার্তা দেওয়া হয়, উন্নয়নের ক্ষেত্রে
গাফিলতি বা দুর্নীতি বরদাস্ত করা হবে না। তেমনই কোনও আধিকারিক বা মেয়র পারিষদ যদি কাজে ব্যর্থ হন, তাঁদের সরিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু প্রশ্ন হল, এত কড়া সিদ্ধান্তের পরেও কেন কাজের পুনর্মূল্যায়নের প্রয়োজন হল?
মেয়র বলেন, ‘‘পরের বছর শেষ দিকে পুরসভার নির্বাচন। ভোটের আগে কাজের পুনর্মূল্যায়ন জরুরি। তাহলে বোঝা যাবে কোন দফতরে কত ফাইল পড়ে রয়েছে। কত টাকার কাজ হয়েছে, কে কেমন কাজ করেছেন। মুখ্যমন্ত্রী মনে করেন পুনর্মূল্যায়ণ হওয়া প্রয়োজন।’’
মেয়র জানান, আগামী দু’মাসের মধ্যে প্রতিটি দফতরের অভ্যন্তরীণ হিসেব পরীক্ষা করা হবে। কাজ খতিয়ে দেখা হবে। সব রিপোর্ট রাজ্য নগরোন্নয়ন দফতরকে দেওয়া হবে। পরে মুখ্যমন্ত্রী যা নির্দেশ দেবেন,
সেই মতো ২০১৮-র ভোটের দিকে তাকিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পুরকর্তাদের একাংশের ধারণা, মুখ্যমন্ত্রী সব সময়ে কর্মসংস্কৃতির উপরে জোর দিয়ে থাকেন, তাই কাজের এই পুনর্মূল্যায়ণ থেকেই আগামী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার যোগ্যতা বিচার করবেন শীর্ষ নেতৃত্ব।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy