Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

পানশালায় মাদ্রাসার অডিট, গ্রেফতার প্রধান শিক্ষক-সহ ৩

বেশ কিছু দিন ধরেই ভদ্রেশ্বরের অ্যাঙ্গাসের দ্য আদমি সোসাইটি হাই-মাদ্রাসায় আর্থিক দুর্নীতি নিয়ে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলছিলেন অভিভাবকেরা। প্রধান শিক্ষকের উপস্থিতিতে সেই মাদ্রাসার অডিট বৈদ্যবাটির একটি পানশালায় চলছে শুনে সোমবার ক্ষোভে ফেটে পড়েন অভিভাবকেরা। থানার দ্বারস্থ হয়ে তাঁরা পুলিশকে নিয়েই সেই পানশালায় হাজির হন।

ধৃত তিনজন। মাঝে প্রধান শিক্ষক। ছবি: তাপস ঘোষ।

ধৃত তিনজন। মাঝে প্রধান শিক্ষক। ছবি: তাপস ঘোষ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ভদ্রেশ্বর শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০১৫ ০১:৩০
Share: Save:

বেশ কিছু দিন ধরেই ভদ্রেশ্বরের অ্যাঙ্গাসের দ্য আদমি সোসাইটি হাই-মাদ্রাসায় আর্থিক দুর্নীতি নিয়ে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলছিলেন অভিভাবকেরা। প্রধান শিক্ষকের উপস্থিতিতে সেই মাদ্রাসার অডিট বৈদ্যবাটির একটি পানশালায় চলছে শুনে সোমবার ক্ষোভে ফেটে পড়েন অভিভাবকেরা। থানার দ্বারস্থ হয়ে তাঁরা পুলিশকে নিয়েই সেই পানশালায় হাজির হন। অভিভাবকদের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ ওই পানশালা থেকে মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক মহম্মদ মুসলিম এবং দুই অডিটর নীলাদ্রি বিশ্বাস এবং নির্মল ঘোষকে গ্রেফতার করে। বাজেয়াপ্ত করা হয় ল্যাপটপ, প্রিন্টার, মাদ্রাসার সমস্ত নথিপত্র এবং কিছু নগদ টাকা।

জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, অভিভাবকদের দায়ের করা দুর্নীতির অভিযোগের ভিত্তিতেই ওই তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কাগজপত্র খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অসত্য বলে উড়িয়ে দিয়েছেন মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক মহম্মদ মুসলিম। তাঁর দাবি, ‘‘অভিভাবকদের অভিযোগ সত্য নয়। মাদ্রাসা সংক্রান্ত সমস্ত আয়-ব্যয়ের তথ্য আমার কাছে রয়েছে। আমি তা হিসাব পরীক্ষকদের কাছে জমাও দিয়েছি। তাঁরা খতিয়ে দেখে হিসেবে কোনও গরমিল বা দুর্নীতি দেখলে নিশ্চয়ই ব্যবস্থা নেবেন।’’ তবে, কী কারণে মাদ্রাসা ছেড়ে পানশালায় গিয়ে অডিট করাতে হচ্ছিল, সে প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে গিয়েছেন ধৃত প্রধান শিক্ষক। ধৃত অডিটরদের মধ্যে নিলাদ্রিবাবুর দাবি, ‘‘মাদ্রাসার ঘরে কাজ করতে অসুবিধা হচ্ছিল। সে জন্য প্রধান শিক্ষককে বলা হয়েছিল কাছাকাছি অন্য কোনও জায়গার ব্যবস্থা করতে। তাই উনি ওই পানশালায় ব্যবস্থা করে দেন। সেখানেই হিসাব পরীক্ষা চলছিল।’’

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মাদ্রাসাটিতে প্রায় ২৫০০ ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা করে। সেখানকার পরিচালন সমিতির মেয়াদ আগেই উত্তীর্ণ হয়ে গেলেও এখনও নির্বাচন হয়নি। অভিভাবকদের অনেকেরই অভিযোগ, মাদ্রাসার বার্ষিক হিসাব-নিকেশের কোনও খসড়া তাঁদের জানানো হচ্ছে না। ছাত্রছাত্রীদের সরকার নির্ধারিত বই দেওয়া হয় না। প্রায়ই মিড ডে মিল বন্ধ থাকে। ছাত্রছাত্রীদের ইউনিফর্মের জন্য বরাদ্দ টাকা গত তিন বছর ধরে দেওয়া হচ্ছে না। নবম ও দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রীদের বছরের বৃত্তির ১২০০ টাকাও ঠিকমতো দেওয়া হচ্ছিল না। অনুষ্ঠানের জন্য মাদ্রাসার ঘর ভাড়া দেওয়া হলেও সেই টাকা মাদ্রাসার উন্নয়ন খাতে জমা হতো না। আর এ সবের জন্য প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধেই অভিযোগ তুলে অভিভাবকেরা চন্দননগরের মহকুমাশাসকেরও দ্বারস্থ হন বলে জানান।

গত ১ মে থেকে মাদ্রাসার অডিট শুরু হয়। কলকাতার অডিটর নীলাদ্রিবাবু এবং নির্মলবাবু সেই কাজ করছিলেন। প্রথম দিন তাঁরা মাদ্রাসাতেই কাজ করেন। কিন্তু তার পরেই সরে যান ওই পানশালায়। সে কথা অবশ্য তাঁরা জানতেন না বলে দাবি অভিভাবকদের। সোমবার মাদ্রাসায় ওই অডিটরদের কাছেই তাঁরা দুর্নীতির অভিযোগ জানাবেন বলে আসেন। কিন্তু সেখানে এসে জানতে পারেন পানশালার কথা। এর পরেই ক্ষোভে ফেটে পড়ে তাঁরা থানায় যান।

অভিভাবকদের মধ্যে মহম্মদ কালাম বলেন, ‘‘দীর্ঘদিন ধরে মাদ্রাসায় অনিয়ম চলছিল। দুর্নীতি ঢাকা দিতেই মাদ্রাসা ছেড়ে পানশালায় গিয়ে হিসাব পরীক্ষার কাজ করাচ্ছিলেন প্রধান শিক্ষক। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হিসাব পানশালায় হচ্ছে, ভাবা যায়!’’ মহম্মদ মুসলিম নামে আর এক অভিভাবকের ক্ষোভ, ‘‘প্রধান শিক্ষক দীর্ঘদিন ধরে দুর্নীতি করছেন। দুই হিসাব পরীক্ষককে সব কিছু জানানোর জন্য আমরা একত্রিত হয়েছিলাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত যে পানশালায়া গিয়ে ওঁদের ধরতে হবে ভাবিনি।’’

মাদ্রাসার বিদায়ী পরিচালন সমিতির সম্পাদক মহম্মদ মুস্তাক মেনে নিয়েছেন পানশালায় হিসাব পরীক্ষা অন্যায় কাজ হয়েছে। তাঁর দাবি, ‘‘অভিভাবকেরা আগে কোনও দিন দুর্নীতির অভিযোগ জানাননি। তা হলে ব্যবস্থা নেওয়া যেত। তবে মাদ্রাসার ঘরে হিসাব পরীক্ষকদের কাজ করতে অসুবিধা হচ্ছিল শুনেছিলাম। কিন্তু তার জন্য যে জায়গা হিসেবে পানশালাকে বাছা হবে জানতাম না।’’ চন্দননগরের মহকুমাশাসক পীযূষ গোস্বামী অবশ্য জানিয়েছেন, ওই মাদ্রাসার অভিভাবকদের কাছ থেকে তিনি কোনও অভিযোগ পাননি। তবে, আগের কোনও মহকুমাশাসকের কাছে অভিযোগ দিয়ে থাকলে তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE