Advertisement
০২ মে ২০২৪
চন্দননগর কলেজ

ইতিহাস ছুঁতে সংগ্রহশালা, দেওয়া হবে পর্যটনের পাঠ

ফরাসি, পর্তুগিজ থেকে দিনেমার। হুগলির ২৫ কিলোমিটার বৃত্তের আর্বতে কোনও না কোনও সময় রাজ করেছে বিদেশিরা। তার উপর মুসলমান রাজাদের আক্রমণ তো ছিলই। সব মিলিয়ে ইতিহাস পদে পদে জড়িয়ে রয়েছে গঙ্গাপাড়ের শহর চন্দননগরে।

ভূষণ: নতুন করে সাজার প্রস্তুতি। ছবি: তাপস ঘোষ

ভূষণ: নতুন করে সাজার প্রস্তুতি। ছবি: তাপস ঘোষ

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়
চন্দননগর শেষ আপডেট: ৩০ মার্চ ২০১৭ ০১:৩৬
Share: Save:

ফরাসি, পর্তুগিজ থেকে দিনেমার।

হুগলির ২৫ কিলোমিটার বৃত্তের আর্বতে কোনও না কোনও সময় রাজ করেছে বিদেশিরা। তার উপর মুসলমান রাজাদের আক্রমণ তো ছিলই। সব মিলিয়ে ইতিহাস পদে পদে জড়িয়ে রয়েছে গঙ্গাপাড়ের শহর চন্দননগরে। কলকাতার পরে এই শহরই প্রথম দেখেছে গ্যাসের পথবাতি। ফুটপাতের ধারণাটাই এই শহর দেখেছিল ফরাসি আমলে।

গত বছরের শেষদিকে ফরাসি রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার জিগল্যার এসেছিলেন চন্দননগর সরকারি কলেজে। বস্তুত তখন থেকেই বিষয়টি নিয়ে নাড়াচাড়া শুরু হয়েছিল। তারপর দফায় দফায় আলোচনা চলেছে। চন্দননগর কলেজে যে অংশটি ‘হেরিটেজ’ সেই অংশেই এবার একটি সংগ্রহশালা গড়ে তোলার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। কলেজের অধ্যক্ষ দেবাশিস সরকার ইতিমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন রাজ্যের উচ্চশিক্ষা দফতরে। সেই আলোচনার সূত্রেই একটি প্রকল্প পাঠানো হয়েছে সংশ্লিষ্ট দফতরে অনুমোদনের জন্য। এর মধ্যে বিভিন্ন সময়ে ফরাসি সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরের সঙ্গেও চন্দননগর সরকারি কলেজ কর্তৃপক্ষের চিঠি আদানপ্রদান হয়েছে।

কেমন হতে চলেছে সংগ্রহশালা?

চন্দননগর কলেজ স্থাপিত হয় ১৯৩১ সালে। যদিও ইতিহাস বলছে এর বহু আগেই এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্ম। পুরো শহরটাই ছিল কার্যত বিপ্লবীদের আঁতুড় ঘর। সে জন্য ইংরেজরা মাঝে ২৩ বছর বন্ধ করে দিয়েছিল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি। রাজ্য হেরিটেজ কমিশন কলেজের সেই অংশটিকে ‘হেরিটেজ’ ঘোষণা করে। ওই অংশেই গড়ে উঠতে চলেছে সংগ্রহশালা। সেখানে এই শহরে অতীতে যে সব প্রত্নতাত্ত্বিক নির্দশন পাওয়া গিয়েছে, স্থান পাবে সে সব। এর সঙ্গে পর্যটনকে সামনে রেখে ইতিহাস চর্চা ও গবেষণার বিষয়টি গুরুত্ব পাবে। সেই লক্ষ্যে কলেজে পর্যটনের উপর একটি পাঠক্রম চালু হবে।

চন্দননগর কলেজে এখন ফরাসি ভাষা পড়ানো হয়। এ বার সেখানে ছাত্রেরা পর্যটনের পাঠও নিতে পারবে। এর জন্য একটি কমিটি তৈরি করা হয়েছে। চন্দননগরে পুরসভার একটি হেরিটেজ কমিটি আছে। ১২টি সংস্থার যৌথ একটি কমিটি রয়েছে। যাঁরা চন্দননগরে হেরিটেজ ও পরিবেশ নিয়ে কাজ করে। কলেজের এই কাজে তাঁরা থাকছেন। অধ্যক্ষ দেবাশিস সরকার বলেন, ‘‘আমরা সরকারি স্তরে প্রকল্প অনুমোদনের জন্য কথা বলেছি। কলেজের যে অংশ হেরিটেজের আওতায় সেখানে পূর্ত দফতর হাত দিতে পারবে না। সেখানে কাজ করবেন রাজ্য সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্মীরা।’’ তিনি জানান, ফরাসি সরকারও এই কাজে আগ্রহী। সে দেশ থেকে গবেষণার কাজে ছেলেমেয়েরা আসেন। আমরা চাইছি পুরোদস্তুর গবেষণার কাজ আমাদের কলেজেই হোক। ঠিক অনেকটা প্রেসিডেন্সিতে যেমন হয়।

দেবাশিসবাবুর কথায়, ‘‘প্রেসিডেন্সির মতো আমাদের কলেজের ইতিহাসও খুব সমৃদ্ধ।’’ পরিবেশবিদ বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এটা খুব জরুরি কাজ। চন্দননগর তথা হুগলির ইতিহাসকে এক ছাদের তলায় আনার এই উদ্যোগ অনেক আগেই শুরু হওয়া উচিত ছিল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Tourism Education
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE