Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

হেডফোনে গান, ট্রেনের ধাক্কায় মৃত্যু তরুণের

শত প্রচারেও লাভ হচ্ছে না কিছুতেই।স্থান-কাল বিবেচনা না করে নিজস্বী তোলার বিপজ্জনক প্রবণতা তো রয়েছেই, কানে মোবাইল নিয়ে রাস্তা পেরনো বা রেললাইন পারাপারের সময়ে দুর্ঘটনায় মৃত্যুর তালিকা ক্রমেই বাড়ছে।

ঝুঁকি: রেললাইনে এভাবে বসে থাকা আরামবাগের চেনা ছবি। নিজস্ব চিত্র

ঝুঁকি: রেললাইনে এভাবে বসে থাকা আরামবাগের চেনা ছবি। নিজস্ব চিত্র

মোহন দাস
আরামবাগ শেষ আপডেট: ২২ মে ২০১৭ ০৪:৪০
Share: Save:

শত প্রচারেও লাভ হচ্ছে না কিছুতেই।

স্থান-কাল বিবেচনা না করে নিজস্বী তোলার বিপজ্জনক প্রবণতা তো রয়েছেই, কানে মোবাইল নিয়ে রাস্তা পেরনো বা রেললাইন পারাপারের সময়ে দুর্ঘটনায় মৃত্যুর তালিকা ক্রমেই বাড়ছে। সেই তালিকায় এ বার যুক্ত হল আরামবাগের এক তরুণের নামও।

শনিবার সন্ধ্যায় আরামবাগ স্টেশন থেকে ৫০০ মিটার দূরে বসন্তপুর আমতলা মোড়ের কাছে রেললাইনে বসেছিলেন তিন তরুণ। তাঁদের মধ্যে শেখ সাকিরুল হোসেন (১৮) কানে হেডফোন লাগিয়ে মাথা নিচু করে গান শুনছিলেন। ৭.২৫-এর হাওড়াগামী ট্রেন আসতে দেখে দুই বন্ধু সরে যেতে পারলেও সাকিরুল খেয়াল করেননি। ট্রেনের ধাক্কায় ঘটনাস্থলেই আরামবাগের ঘিয়া এলাকার ওই তরুণ মারা যান বলে আরপিএফ জানিয়েছে।

সাধারণ মানুষকে সচেতন করার কাজ তারা ইতিমধ্যেই শুরু করেছেন বলে রেলকর্তারা আগেই দাবি করেছিলেন। একই সঙ্গে তাঁরা এ-ও দাবি করেন, মানুষ সচেতন না-হলে এই প্রবণতা ঠেকানো মুশকিল। এ দিনের দুর্ঘটনার পরে মৃতের পরিবারের লোকজন আরপিএফের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ তুলেছেন।

মৃতের মামাতো ভাই তহিদ আলির ক্ষোভ, ‘‘স্টেশনের এত কাছে দুর্ঘটনা ঘটল। আরপিএফ কী করছিল? ওরা সব সময় স্টেশনেই বসে থাকে। লাইনে কে বসে আছে বা ঘোরাঘুরি করছে তা দেখার ওদের সময় নেই।’’ একই রকম অভিযোগ শোনা গিয়েছে ওই এলাকার কিছু ব্যবসায়ীর মুখেও। অভিযোগ মানেনি আরপিএফ। তাদের দাবি, সব সময়েই লাইনে নজরদারি চলে। লোকজন দেখলে সরে যেতে বলা হয়। একই সঙ্গে আরপিএফ মানছে, সরিয়ে দেওয়ার পরেও লোকজন রেললাইনে চলে আসেন।

বস্তুত, আরামবাগে ট্রেন চলাচল শুরু হওয়ার পর থেকে অনেক দুর্ঘটনা ঘটলেও স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় রেললাইনের উপরে লোকজনের বসে আড্ডা দেওয়া, লাইন ধরে হাঁটা বা কানে ফোন নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা গল্প করা— প্রায় প্রতিদিনের দৃশ্য। এমনকী, রেলগেট বন্ধ হলেও অনেকে তা এড়িয়ে চলাচল করেন। এ নিয়ে আরামবাগের স্টেশন মাস্টার প্রদীপকুমার ঠাকুরের আক্ষেপ, ‘‘ট্রেন ঢোকা-বেরোনোর সময়ে মাইকে প্রচার করা হয় কেউ লাইন পারাপার করবেন না। কে কার কথা শোনে! মানুষ সচেতন না হলে আমরা কী করব?’’

সাকিরুল পেশায় ছিলেন কাঠের মিস্ত্রি। বাবা নেই। ছেলেবেলা থেকেই মায়ের সঙ্গে তিনি মামাবাড়িতে থাকতেন। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে বৃদ্ধা কথা বলার অবস্থায় ছিলেন না। সাকিরুলের মামাতো ভাই বলেন, ‘‘সাকিরুলই ছিল ওঁর মায়ের একমাত্র ভরসা। ওংর সঙ্গে শনিবার রেললাইনে বন্ধু সাহেব আলি এবং বাপি আলিও ছিলেন। ওঁরা জানিয়েছেন, ট্রেন আসতে দেখে ওঁরা চিৎকার করে সাকিরুলকেও সরে যেতে বলেছিলেন। কিন্তু কানে হেডফোন থাকায় সাকিরুল শুনতে পায়নি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Train Accident
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE