Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

খদ্দের সেজে চুরি সোনার দোকানে

বাড়িতে সামনেই বিয়ে-থা লাগছে। সে জন্য নাকি তারা সোনার গয়না কিনতে এসেছে। সোমবার সকাল সকাল দোকানে আসা যুবকের এই কথায় বিন্দুমাত্র সন্দেহের কারণ ছিল না বসিরহাটের ৭২ নম্বর বাসস্ট্যান্ডের কাছে একটি সোনার দোকানের মালিকের। সোত্‌সাহে নানা জিনিসপত্র বের করে দেখাতে থাকেন তিনি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বসিরহাট শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০১৪ ০০:৫০
Share: Save:

বাড়িতে সামনেই বিয়ে-থা লাগছে। সে জন্য নাকি তারা সোনার গয়না কিনতে এসেছে।

সোমবার সকাল সকাল দোকানে আসা যুবকের এই কথায় বিন্দুমাত্র সন্দেহের কারণ ছিল না বসিরহাটের ৭২ নম্বর বাসস্ট্যান্ডের কাছে একটি সোনার দোকানের মালিকের। সোত্‌সাহে নানা জিনিসপত্র বের করে দেখাতে থাকেন তিনি।

দোকানের বাইরে ওই যুবকের এক সঙ্গী মোটর বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। সে আবার দোকানে ঢুকে তাড়া দেয়, “এত দেরি করলে কী করে হবে? চল চল, শাড়ি কিনতে যেতে হবে তো!” তাড়াহুড়োর মধ্যে দোকানের ভিতরের যুবক মালিকের সঙ্গে অনর্গল বকবক করে যাচ্ছিল। ও দিকে, আর এক যুবক তাড়া দিচ্ছে, শাড়ি কিনতে যেতে হবে বলে। দোকানির হাতে তিনশো টাকা দিয়ে এক জন বলে, দুলটা যেন পালিশ করে রাখা হয়। শাড়ি কিনে ফেরার পথে দুল নিয়ে যাবে তারা। পকেট থেকে এক তাড়া নোট বের করে সেখান থেকে তিনশো টাকা বের করে অগ্রিম দেয় খদ্দের।

এত দূর ঠিকঠাকই চলছিল। কিন্তু ঘণ্টা খানেক কেটে যাওয়ার পরেও দুই যুবক ফিরে না আসায় সন্দেহ হয় দোকানির। তিনি তত ক্ষণে দুলজোড়া পালিশ করিয়ে চকচকে করে বসে আছেন খদ্দেরের আশায়। কিন্তু কোথায় কী! উল্টে দেখা যায়, ৩টি সোনার আংটি আর ২টি হার উধাও। মাথায় হাত পড়ে ব্যবসায়ীর। পুলিশের দ্বারস্থ হন তিনি। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে, দুই যুবক এসেছিল একটি মোটর বাইকে। তাদের ধোপদূরস্ত পোশাক-আশাক, কথাবার্তায় সন্দেহের কোনও অবকাশই ছিল না। মঙ্গলবার পর্যন্ত এই ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। তবে খদ্দের সেজে বোকা বানিয়ে এমন চুরির ঘটনা বসিরহাটে নতুন নয়। বরং গত কয়েক মাসে বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে এমন ঘটনাই ঘটেছে।

কিছু দিন আগেই বাদুড়িয়ার একটি দোকানের এক ব্যবসায়ী সকালে দোকান খুলতেই এসে হাজির হয় এক যুবক। ৫০০ টাকা দিয়ে একটি জিনিস বায়না করে দোকানের উল্টো দিকে দাঁড়িয়েই চা খাচ্ছিল সে। অনেকগুলো খুচরো দিয়ে গিয়েছিল সে। গুণতে সময় লাগায় চা খাওয়ার কথা নিজেই বলে যায়। এ দিকে, এক গাদা খুচরো গুণতে ব্যতিব্যস্ত দোকানি দেখেন, কিছু টাকা কম পড়ছে। তিনি দোকানে একাই ছিলেন। দোকান থেকে বেরিয়ে ওই যুবককে বলেন, “কয়েকটা টাকা কম আছে দাদা।” হতেই পারে না পাল্টা জবাব আসে। এই নিয়ে শুরু হয় তর্কাতর্কি। মাঝপথে খদ্দের রেগেমেগে বলে, “এমন জিনিস আমার চাই না। চললাম।” পাল্টা রাগ দেখিয়ে দোকানমুখো হন ওই দোকানিও। কিন্তু ফিরে এসে তো চক্ষু চড়কগাছ। দেখা যায়, দোকানের ক্যাশবাক্স থেকে কয়েক হাজার টাকা হাপিস। খদ্দের সেজে সোনার দোকানে ঢুকে এমন আরও কিছু ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। কোনও ক্ষেত্রেই অবশ্য কিনারা হয়নি। যা নিয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ী মহলে ক্ষোভ আছে।

পুলিশের একাংশের বক্তব্য, ছোট সোনার দোকানগুলিতে কর্মচারী কম। এক জন, বড় জোর দু’জন থাকেন। সেটারই সুযোগ নিচ্ছে দুষ্কৃতীরা। এ কথা সে কথায় ভুলিয়ে জিনিসপত্র, টাকা হাতিয়ে পালাচ্ছে। সমস্ত সোনার দোকানে সিসিটিভি বসানো উচিত বলে মনে করেন পুলিশ কর্তাদের অনেকেই। কিন্তু বললেই তো হল না, ছোট ব্যবসায়ীরা অনেকে সিসিটিভি বাহুল্য মনে করেন। তাঁদের বক্তব্য, “আমাদের সতর্ক থাকতে হবে, সেটা যেমন ঠিক। তেমনই পুলিশও নিজেদের ভূমিকা ঠিকঠাক পালন করে খুঁজে বের করুক দুষ্কৃতীদের।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

basirhat theft jewelry shop southbengal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE